Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেহব্যবসার আখড়া জেএনইউ, দাবি রিপোর্টে

এক দিকে অনশন, অন্য দিকে রিপোর্ট ফাঁস। এক প্রান্তে পড়ুয়ারা তো অন্য প্রান্তে শিক্ষকদের একাংশ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের তরজা আজ এক নতুন মাত্রা নিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

এক দিকে অনশন, অন্য দিকে রিপোর্ট ফাঁস। এক প্রান্তে পড়ুয়ারা তো অন্য প্রান্তে শিক্ষকদের একাংশ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের তরজা আজ এক নতুন মাত্রা নিল।

কালই কানহাইয়ারা বলেছিলেন, শাস্তি প্রত্যাহার না করা হলে আজ থেকে অনশনে বসবেন তাঁরা। আজ সকালে গঙ্গা ধাবা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মিছিল করে এসে শাস্তি সংক্রান্ত নির্দেশ পোড়ান কানহাইয়া ও তাঁর সঙ্গীরা। তারপর অনশনে বসেন চার ছাত্র। কেরলে নির্বাচনী প্রচারে যেতে হবে বলে আজ না বসলেও, আগামী দিনে তিনি নিজেও রিলে অনশনে বসবেন বলে জানিয়েছেন কানহাইয়া।

সকাল থেকেই পড়ুয়াদের প্রতিবাদে সরব ছিল ক্যাম্পাস। কিন্তু ছন্দপতন ঘটে দুপুরে। হঠাৎই জেএনইউ ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা গত বছরের একট রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে।

ছাত্রদের অভিযোগ, তাদের মনোবল ভাঙতে পরিকল্পিত ভাবে ওই রিপোর্টটি ফাঁস করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেএনইউ ক্যাম্পাস এখন সংগঠিত দেহ ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যাতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিচ্ছেন কলেজের ছাত্রীরাও। আরও অভিযোগ, কিছু শিক্ষকের মদতে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ রমরমিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ওই রিপোর্টের প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল করে প্রতিবাদ জানান পড়ুয়ারা।

এই সব অভিযোগ নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেএনইউ কাণ্ড শুরু হওয়ার পর থেকেই ছাত্র সংগঠন ও বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতাদের। কিন্তু তখনও ওই রিপোর্টটি সামনে আসেনি। এখন এল কেন?

পরশু কানহাইয়াদের শাস্তি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, অনশন শুরু হতেই পড়ুয়াদের মনোবল ভাঙতেই আজ ওই রিপোর্টটি ফাঁস করা হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, শাসক দলের মদতেই এই কাজ হচ্ছে। যাতে আগামী দিনে সঙ্ঘ পরিবার ক্যাম্পাসে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। জেএনইউ ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘যে ১১ জন শিক্ষক ওই রিপোর্ট তৈরি করেছেন, সকলেই তাঁদের সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বলে চেনেন। সুতরাং কী উদ্দেশ্য নিয়ে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে, তা স্পষ্ট।’’

কী রয়েছে ওই রিপোর্টে?

১১ সদস্যের ওই কমিটির প্রধান ছিলেন সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড গভর্নেন্সের শিক্ষক অমৃতা সিংহ। রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, জেএনইউ হস্টেলে যৌনকর্মীদের উপস্থিতি অতি সাধারণ ঘটনা। এরা হামেশাই ছেলেদের হস্টেলে ঢুকে পড়ে। ছাত্রীদেরও ফুঁসলিয়ে সংগঠিত যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছে যৌনকর্মীরা। মদ খাওয়া-সহ নানা ‘অনৈতিক’ কাজ করার অপরাধে শয়ে শয়ে
পড়ুয়াকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে এই রিপোর্টে। অমৃতাদের অভিযোগ, এই কাজে বেশ কিছু নিরাপত্তা রক্ষীও জড়িত। অর্থ, যৌনতা, ড্রাগ ও মদের লোভ দেখিয়ে সদ্য পড়তে আসা পড়ুয়াদের এই চক্রে সামিল করা হয়।

রিপোর্টে অভিযোগ উঠেছে দেশবিরোধী কার্যকলাপেরও। বলা হয়েছে, নিজেদের মুক্তমনা ও নারীবাদী হিসেবে জাহির করা বেশ কিছু শিক্ষক নিজেদের বক্তব্য ও লেখার মাধ্যমে ভারত-বিরোধী কাজে সক্রিয় রয়েছেন। এমনকী, একাধিক ভারত বিরোধী শক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে অর্থ সাহায্যও পেয়ে থাকেন তাঁরা। কমিটির সদস্য, সংস্কৃতি ভাষার শিক্ষক হরিরাম মিশ্র সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রুখতে প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, কমিটির উদ্দেশ্য জেএনইউকে বাঁচানো, পড়ুয়াদের স্বার্থ রক্ষা করা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU report
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE