Advertisement
E-Paper

মনে ক্ষোভ পুষেই কৌপিন-মিছিল নাগা সন্ন্যাসীদের

আগামী কাল থেকে নীলাচল পাহাড়ের শক্তিপীঠ কামাখ্যায় শুরু হচ্ছে অম্বুবাচী মেলা। বন্ধ হবে মায়ের মন্দির ও গর্ভগৃহের প্রবেশপথ। নিবৃত্তি অর্থাৎ দরজা ফের খুলবে ২৬ জুন।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ২১:৪৮
মেলা উপলক্ষে ভক্তর ঢল গুয়াহাটির রাস্তায়।

মেলা উপলক্ষে ভক্তর ঢল গুয়াহাটির রাস্তায়।

শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে পরাস্ত হল প্রথা। শালীনতার সঙ্গে লড়াইয়ে পিছু হঠল ঐতিহ্য। এত বছরের চেনা ছবিটা বদলে গেল দলৈ সমাজের অনড় মনোভাবে। কামাখ্যা চত্বরে থাকা তো বটেই, এমনকী মিছিলও করার অনুমতি দেওয়া হল না নগ্ন সন্ন্যাসীদের। তাই মন্দির বন্ধ হওয়ার আগের দিন বাধ্য হয়ে যৌনাঙ্গ ঢেকেই মিছিল বের করলেন নাগা সন্ন্যাসীরা।

আগামী কাল থেকে নীলাচল পাহাড়ের শক্তিপীঠ কামাখ্যায় শুরু হচ্ছে অম্বুবাচী মেলা। বন্ধ হবে মায়ের মন্দির ও গর্ভগৃহের প্রবেশপথ। নিবৃত্তি অর্থাৎ দরজা ফের খুলবে ২৬ জুন। কথিত আছে ওই সময় দেবী রজঃস্বলা হন। পুরাণমতো সতীর যোনি পড়েছিল কামাখ্যায়। তাই কামাখ্যার রজঃস্বলা হওয়ার সঙ্গে বিশ্বমাতৃর প্রজননের যোগ রয়েছে। আবার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যানুযায়ী, আষাড়ের বর্ষা ও বন্যায় ব্রহ্মপুত্রের জলতল বাড়ে ও রাঙা হয়ে ওঠে। জমে পলি। জল সরলে হয় ফলন। তার সঙ্গেই অম্বুবাচীর যোগ। মন্দির খুললে ভক্তদের হুড়োহুড়ি পড়ে এ'কদিন মায়ের গায়ে চড়ানো রক্তবস্ত্র সংগ্রহের জন্য। ষোড়শ শতকে কামাখ্যার আগের মন্দির ভেঙে গেলে কোচ রাজা নরনারায়ণ নতুন মন্দির গড়ে দেন। মন্দিরের চারটি অংশ গর্ভগৃহ, কালান্ত, পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির। কিন্তু জনশ্রুতি, মন্দিরের মুখ্য পুজারি কেন্দুকলা মন্দিরে ছিদ্র রেখে অম্বুবাচীর সময় মায়ের নৃত্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন নরনারায়ণ ও তাঁর ভাই চিলারায়কে। সেই অপরাধে দেবী তাঁদের পাথর করে দেন। কেন্দুকলার মাথা ছিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলেন ওদালগুড়িতে। সেই থেকে মন্দির নির্মাণ করলেও কোচ রাজবংশের কেউই কামাখ্যা দর্শন করতে পারেন না।

আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রবীণতম এই যোগগুরুকে চেনেন!

আজ বিকেলে সোনারাম মাঠে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও পর্যটনমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরেই ভক্তর ঢল গুয়াহাটির রাস্তায়। গেরুয়া, লাল, হলুদ, খয়েরি বিভিন্ন রঙের পোশাকে যোগী, বাবা, ভক্তর দল নীলাচল পাহাড়ের উপরে চলেছেন। সরকারি কড়াকড়িতে এ বার যত্রযত্র শিবির টাঙানো, মলমুত্রত্যাগ, রান্নাবান্না নিষেধ। নির্ধারিত শিবিরগুলিতেই থাকতে পারবেন ভক্তরা। সরকারি হিসেবে এ বার লাখ ছয়েকের পা পড়বে পাহাড়ে। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাস চলবে রাস্তা থেকে মন্দির পর্যন্ত। মন্দিরে হেঁটে ওঠার আরও দু'টি পুরোনো রাস্তাও মেরামত করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

মন্দির চত্বরে সাধুদের ভিড়

অম্বুবাচী বলতেই যে ছবিটা মনে ভাসে- তা হল মন্দির চত্বরে নাগা বাবাদের হুঙ্কার। গাঁজার ধোঁয়ায় ঢাকা চাতালে কোথাও মন্ত্রপাঠ, কোথাও বাউল গান। কিন্তু এ বারের অম্বুবাচী মেলায় দলৈ সমাজ ও কামরূপ মহানগর প্রশাসনের নির্দেশে কামাখ্যা চত্বর তামাক বর্জিত। চলবে না মাদক সেবনও। তার উপরে দলৈ সমাজ ফতোয়া জারি করেছে, মন্দির চত্বরে সাধুদের নগ্ন হয়ে ঘোরা চলবে না। অনেকেই সপরিবারে আসেন। তাঁদের কাছে এমন দৃশ্য মোটেই নয়নসুখকর হয় না।

কিন্তু গোবিন্দ গিরি, মহেন্দ্র গিরিরা মন্দিরে পৌঁছেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, যুগের পর যুগ ধরে যা চলে আসছে- তা ঠেকানো যাবে না। আগের মতোই পার্থিব লোকলজ্জার ঊর্দ্ধে উঠে যোগসাধনা ও শোভাযাত্রা করবেন তাঁরা। কিন্তু দলই সমাজ, অম্বুবাচী মেলা কমিটি এবং জেলা প্রশাসন প্রথমেই মূল মন্দির থেকে সরিয়ে পশ্চিমে অভয়ানন্দ আশ্রমে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করেন। সেই সঙ্গে কখনও অনুরোধ, কখনও নির্দেশের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সাধনার নামে কোনও অভব্যতা চলবে না।

আজ অম্বুবাচীর প্রবৃত্তির আগের দিন সকাল থেকে চাপা টেনশন ছিল সাধুদের মতিগতি নিয়ে। গায়ে ছাই মেখে তৈরি হচ্ছিলেন তাঁরা। নগ্নতা ঠেকাতে তৈরি ছিল প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা ওড়ানোর 'বিপ্লবী নগ্নতা' ক্যামেরাবন্দী করতে তৈরি ছিল সংবাদমাধ্যমও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাগা সন্ন্যাসীর দল আসরে নামলেন কৌপিন পরেই। যাঁরা সঙ্গে অতিরিক্ত বস্ত্রখণ্ডের বাহুল্য রাখেননি, তাঁরাও অন্যের গামছা ধার করে গোপনাঙ্গ জড়িয়ে নেন। প্রথমে চলে যোগসাধনা। তার পর ত্রিশূল, তরবারি হাতে মন্দির প্রদক্ষিণে বেরোন তাঁরা। হুঙ্কার, মন্ত্রোচ্চারণ, অট্টহাসি সবই ছিল, তবে কী না, তুচ্ছ বস্ত্রখণ্ডের আবডালটুকু কোথায় যেন তাঁদের আগের মতো প্রাণোচ্ছল হতে দিল না।

অবশ্য বহুরূপীদের রঙ্গ, তান্ত্রিকদের শিঙাধ্বনি, জটাধারী বাবা-মা'দের কেশচর্চা, বর্ধমানের বাউল গান, দেশি-বিদেশি সাধুদের গেট-টুগেদার, কাশ্মীর-টু-কন্যাকুমারী ভক্তদের জয়ধ্বনিতে মেলা যত মত্ত হবে, মেজাজি সন্ন্যাসীদের উপরে নিয়ন্ত্রণ তখনও ধরে রাখা যায় কী না- সেটাই দেখার।

—নিজস্ব চিত্র।

Festival Assam Kamakhya Temple Ambubachi Mela Guwahati অসম গুয়াহাটি অম্বুবাচী নাগা সন্ন্যাসী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy