E-Paper

‘৪০ শতাংশ’ কাঁটায় ‘ঈশ্বর’ আজ নিঃসঙ্গ

বিজেপির ঘরোয়া রাজনীতিতে ঈশ্বরাপ্পার ভবিতব্য যদিও স্পষ্ট। শিমোগার দেওয়াল লিখন বলছে, শুধু নিজের নয়, পুত্রেরও রাজনৈতিক জীবন কার্যত শেষ করে দিয়েছেন ঈশ্বরাপ্পা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৭:৫৭
Picture of PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

‘ঈশ্বরে’ আস্থা হারিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী!

শিমোগার ‘ঈশ্বর’, কে এস ঈশ্বরাপ্পা তাই নিঃসঙ্গ। তাঁর দরবার আজ ফাঁকা। রিক্ত। কর্নাটকের সরকারি কাজে ৪০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগে শুরু হওয়া তোলপাড়ের জেরে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ঈশ্বরাপ্পা। তাঁকে এ বার টিকিট দিতেই সাহস পায়নি মোদী-বাহিনী! যদিও তার পরেও ভয়, ঈশ্বরাপ্পার হাতের ৫০-৬০ হাজার ভোটের কী হবে? বিজেপির নতুন প্রার্থী এ বার জিতবেন তো শিমোগায়? বিজেপি সূত্র বলছে, সেই চিন্তাতেই ঈশ্বরাপ্পাকে ফোন করে তাঁর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন মোদী। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তাতেও। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে এই মোদীই তো বলেছিলেন, ‘নিজে খাব না, কাউকে খেতেও দেব না’!

বিজেপির ঘরোয়া রাজনীতিতে ঈশ্বরাপ্পার ভবিতব্য যদিও স্পষ্ট। শিমোগার দেওয়াল লিখন বলছে, শুধু নিজের নয়, পুত্রেরও রাজনৈতিক জীবন কার্যত শেষ করে দিয়েছেন ঈশ্বরাপ্পা। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কমিশন নেওয়ার অভিযোগই এ বারের ভোটে কংগ্রেসের মূল অস্ত্র। সেই প্রচার সাড়াও ফেলেছে জনমানসে। হোটেলমালিক থেকে কলেজপড়ুয়া, গৃহবধূ থেকে ফলের দোকানি, সকলেই মেনে নিচ্ছেন ওই ‘পুকুর চুরি’-র কথা। সঙ্গে জুড়েছে চাপে পড়ে এক ঠিকাদারের আত্মহত্যার অভিযোগ। কর্নাটকের ঠিকাদার সংগঠনের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারটুকুও প্রধানমন্ত্রী করেননি বলে কংগ্রেস প্রচার শুরু করেছে। এই বাস্তবের মোকাবিলায় কোনও টোটকা পাচ্ছেন না মোদী-অমিত শাহেরা।

অথচ, বিজেপির টিকিটে পাঁচ বারের বিধায়ক ঈশ্বরাপ্পা আক্ষরিক অর্থেই যেন এলাকার ‘ঈশ্বর’ হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের হাত থেকে শিমোগা ছিনিয়ে নিতে পেরেছিলেন তরুণ ঈশ্বরাপ্পা। সেই থেকে জিতছেন। ২০১৩ সালে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু এখন শিমোগায় তাঁর প্রাসাদে ঘোড়াশালে ঘোড়া, গোশালায় গরু, গাড়িশালে বিদেশি গাড়ি— সবই দাঁড়িয়ে আছে অস্বস্তিকর নিঃস্তব্ধতায়। যে বাড়ি দু’সপ্তাহ আগেও গমগম করত কর্মী-সমর্থক আর উমেদারদের ভিড়ে, ভোটের ঠিক আগে সেখানে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বিকেলে বাড়িতে পৌঁছে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে দেখা মিলল সদ্য ঘুমভাঙা নেতার। কট্টর হিন্দুত্ববাদী ঈশ্বরাপ্পা বললেন, ‘‘শিমোগাতে আমি থাকি বা না থাকি, বিজেপিই জিতবে। কারণ, এখানকার মানুষ হিন্দুত্বে বিশ্বাস করে।’’ যদিও ঘটনা হল, ভোটের আগে বিজেপিকে বিপদে ফেলার তাঁর দিকেই আঙুল তুলছেন রাজ্য নেতারা। অন্য রাজ্যে বিজেপিই বিরোধীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রচারে নামে। কর্নাটক ঘটেছে উল্টো।

আর তাই ঈশ্বরাপ্পা নিজে যতই ষষ্ঠ বার জিতে এসে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানানোর পরিকল্পনা করুন না কেন, দলীয় সমীক্ষায় প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার আঁচ পেয়ে প্রথমেই তাঁর টিকিট কেটে দেয় বিজেপি। ঈশ্বরাপ্পা চেয়েছিলেন অন্তত ছেলেকে শিমোগার টিকিট পাইয়ে দিতে। পাশের কেন্দ্র শিকারপুরাতে নিজে বসে গিয়ে বি এস ইয়েদুরাপ্পা ছেলেকে টিকিট পাইয়ে দিতে পেরেছেন। কিন্তু পরিবারবাদের যুক্তিতে বাতিল হয়ে গেল ঈশ্বরাপ্পার আবেদন! বিজেপির এখন লক্ষ্য শিমোগার নতুন প্রার্থী তথা বর্তমান কাউন্সিলর এস এন চান্নাবাসাপ্পার জয় নিশ্চিত করা। ঈশ্বরাপ্পা নিজে কুরুবা সম্প্রদায়ের। মোদীর ফোন পেয়ে তিনি বলছেন, ‘‘এলাকার বিশ হাজার কুরুবা ভোট প্রতি বারের মতোই বিজেপি পাবে।’’ যদিও বুঝে গিয়েছেন, নিজের রাজনৈতিক জীবন কার্যত শেষ।

এই কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট না পেয়ে জেডিএসের প্রার্থী হয়েছেন আয়ানুর মঞ্জুনাথ। কংগ্রেসের প্রার্থী এইচ সি যোগেশ। তিন প্রার্থীই লিঙ্গায়েত। সে ভাবে দেখলে এলাকার ৪০ হাজার লিঙ্গায়েত ভোট তিন ভাগ হতে চলেছে। আবার মোট ভোটারের প্রায় সিকি ভাগ (৫৫-৬০ হাজার) সংখ্যালঘু। সঙ্ঘ পরিবার এখানে সক্রিয় দীর্ঘদিন ধরে। মূলত সুপুরির ব্যবসা করা শিমোগায় গত গণেশ চতুর্থীর অশান্তির পরে কার্ফু জারি হয়েছিল। ধর্মীয় বিভাজনের হাওয়া সেই ইস্তক আরও তীব্র। আর দুর্নীতির অভিযোগের মোকাবিলায় মেরুকরণই এখন বিজেপির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এই আবহে ভোক্কালিগাদের কুড়ি হাজার ভোটের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ভোট টানতে মরিয়া জেডিএস ও কংগ্রেস। প্রাক্তন বিজেপি নেতা জেডিএস প্রার্থী হওয়ায় মুসলিমদের প্রথম পছন্দ ছিলেন কংগ্রেসের যোগেশ। কিন্তু যোগেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেওয়ার দিনে উৎসব করেছিলেন তিনি। সেই ভিডিয়ো মুসলিম মহল্লায় ছড়িয়ে মঞ্জুনাথ নীরবে প্রচার চালাচ্ছেন বলে খবর। কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, ভোট ভাগ করতে মঞ্জুনাথকে গোঁজ প্রার্থী করেছে বিজেপিই।

ঘোলা জলে নিজেদের মতো করেই শেষ বেলায় ঘুঁটি সাজাচ্ছেন শিমোগার তিন প্রার্থী। আর ফাঁকা দরবারে বসে সময় গুনছেন কে এস ঈশ্বরাপ্পা। সিংহানচ্যুত ঈশ্বর!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Karnataka Assembly Election 2023 BJP Karnataka

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy