E-Paper

‘অভিভাবকের মতো পাশে ছিলেন ওঁরা’

সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও অয়ন ছাড়া আর কেউ কথা বলতে চাইছিলেন না।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫০
ডাল হৃদে প্রমোদ ফেরি পর্যটকদের।

ডাল হৃদে প্রমোদ ফেরি পর্যটকদের। —ফাইল চিত্র।

২৪ এপ্রিল: ঝিলম নদীর পাড়ের কাছে বসেছিলেন একদল বাঙালি পর্যটক। চুপচাপ। কোনও উচ্ছ্বাস নেই। থমথমে মুখ। কলকাতা থেকে ভূস্বর্গে বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু কাশ্মীর এখন ‘মৃত্যু-উপত্যকা’। ভয়ে ভয়ে কয়েকটা দিন বাস। জানালেন, শনিবারের টিকিট পেয়েছেন। ওই দিন ফিরে যাবেন, নির্ধারিত সময়ের পাঁচ দিন আগেই।

পরিকল্পনা ছিল ১০ দিন কাশ্মীর ঘুরবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা বা সাহস, কোনওটাই আর নেই। বছর তিরিশের অয়ন শীল জানালেন, পরিবারের সাত জন মিলে শ্রীনগর, গুলমার্গ, পহেলগাম ঘুরতে এসেছিলেন। কিন্তু ২২ তারিখের ঘটনার পরে আর কিছু ভাবতে পারছেন না তাঁরা। বরফে ঢাকা পাহাড় চুড়োর দিকে তাকিয়ে কিছুটা এলোমেলো ভাবে অয়ন বললেন, ‘‘আমরা ২২ তারিখেই পৌঁছেছি। টিউলিপ দেখব, ট্রাউট মাছ খাব... কত কী ভেবেছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু বদলে গিয়েছে। এখন বারবার ফোনে খবর দেখছি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়িতে ফোন করে জানাচ্ছি, সব ঠিক আছে। আমরা ঠিক আছি।’’

সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও অয়ন ছাড়া আর কেউ কথা বলতে চাইছিলেন না। পরে দলের এক জন বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা সাহায্য করছেন। ভরসা দিচ্ছেন। আমরা চাইছিলাম, শিকারা ভ্রমণটা করে যেতে। কিন্তু কলকাতায় সকলে আতঙ্কে রয়েছেন। ফিরে যেতে বলছেন। সকলকে দুশ্চিন্তায় রেখে এ ভাবে কী করে ছুটি কাটাই!’’

শুধু অয়নরাই নন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাশ্মীর ছেড়ে বেরনোর চেষ্টা করছেন পর্যটকদের প্রায় সকলেই। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, রবিবার পর্যন্ত কাশ্মীর থেকে ফিরে যাওয়ার কোনও টিকিট নেই। বরং অতিরিক্ত মাত্রায় বুকিংয়ের চাপে বিপর্যস্ত উড়ান সংস্থাগুলো। এ দিকে কাশ্মীর আসার টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। বরং বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

ডাল লেকের ধারগুলো দু’দিন আগেও পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা ছিল। এখন দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন কোনও বেড়ানোর মরসুম নয়। চারদিক ফাঁকা ফাঁকা। শিকারা-চালকেরা চুপচাপ বসে। দুপুরে নিজের দোকানে চোখ বুজে শুয়ে এক পোস্ট কার্ড বিক্রেতা। অয়ন বলেন, ‘‘কাশ্মীরিরা অভয় দিচ্ছেন। বারবার বলছেন, কতগুলো বন্দুকবাজকে দেখে গোটা উপত্যকার বিচার কোরো না। বিপদের সময়ে ওঁরাই অভিভাবকের মতো পাশে থেকেছে। সেই বন্ধুত্বের বার্তা নিয়েই কলকাতা ফিরব। কিন্তু ফিরতে হবেই... সবাই চিন্তায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dal lake

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy