তরুণ হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে উত্তাল কাশ্মীর। আগুন আরও উস্কে দিতে আসরে নেমে পড়ল পাকিস্তান। বুরহান ও অন্য ‘নির্দোষ’ কাশ্মীরিদের ‘হত্যা’র কড়া সমালোচনা করে আজ বিবৃতি দিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। ফের খুঁচিয়ে তুলেছে গণভোটের প্রসঙ্গও। পাকিস্তান এ ভাবে নাক গলানোয় নতুন মাত্রা পেল কাশ্মীর পরিস্থিতি। যা মাথাব্যথা বাড়াল নরেন্দ্র মোদী সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ক’দিন আগেই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ফোন করে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন। জানিয়েছেন ইদের শুভেচ্ছা। কিন্তু এর পর পরই ভারত-পাক সম্পর্কে বরাবরের কাঁটা যে কাশ্মীর প্রসঙ্গ, সেটিকেই ফের খুঁচিয়ে তুলল ইসলামাবাদ। মোদী সরকার সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান প্রত্যাশিত পথেই হাঁটছে। তবে ইসলামাবাদের এই অবস্থান দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছে দিল্লি।
ইসলামাবাদে আগামী ৪ অগস্ট সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে চেপে ধরতে চাইছে ভারত, বাংলাদেশের মতো দেশগুলি। মোদী সরকারের কর্তাদের আশঙ্কা, কাশ্মীরের পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে সেই চাপের মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে পাকিস্তান। এবং সে জন্যই কাশ্মীরে যত দিন সম্ভব আগুন জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করবে তারা। হিজবুল জঙ্গি নেতার মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলে যে চেষ্টা আজ প্রকাশ্যেই চালাল পাকিস্তান।
পাক বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে অভিযোগ এনেছে, বুরহান ওয়ানি ও অন্য নির্দোষ কাশ্মীরিদের ‘বেআইনি ভাবে’ হত্যা করছে দিল্লি। এ ভাবে কাশ্মীরিদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু ভূস্বর্গের মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই স্থির করবেন। সেই অধিকার তাঁদের কাছ থেকে ভারত ছিনিয়ে নিতে পারবে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে কাশ্মীরে গণভোট নেওয়ার দাবিও ফের উস্কে দিয়েছে ইসলামাবাদ।
কাশ্মীরে অশান্তি ও পাকিস্তানের তাতে নাক গলানো নিয়ে আজ দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পরে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে ফোন করে সব ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। গত কালই বাড়তি ১২০০ আধাসেনা পাঠানো হয়েছে কাশ্মীরে।
তবে বুরহানের মৃত্যুতে শুক্রবার থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, তা থামানো যায়নি আজও। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। আহত ১২৪ জন জওয়ান-সহ ১৫০ জন। আজও কাশ্মীরের নানা প্রান্তে থানা, সেনা শিবির ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে জনতা। পুলিশের দাবি, জওয়ানদের উপরে হামলার পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র লুঠেরও চেষ্টা হয়। অনন্তনাগে পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি ঝিলমের জলে ফেলে দিলে তার চালক ফিরোজ আহমেদের মৃত্যু হয়।
নেওয়া পুলওয়ামা, শোপিয়ান, লাসিপোরা, রাজপোরা, হাল পুলওয়ামা, লিটার, তাহাব পুলওয়ামা, তাঞ্চিবাগ পাম্পোর, দামহাল-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাহিনীকে লক্ষ করে পাথর ছুড়েছে জনতা। লাসিপোরায় পুলিশ পোস্টে হামলা করে কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজবেহরা স্টেশনে পোড়ানো হয়েছে জিআরপি ও আরপিএফের ব্যারাক।
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির ডাকা হরতাল ও কার্ফুর জেরে উপত্যকার জনজীবন কার্যত স্তব্ধ ছিল এ দিন। সব দল ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। কিন্তু উল্টে রাজ্য সরকারের উপরেই দোষ চাপিয়েছেন হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। তাঁর দাবি, কাশ্মীরের মানুষ এই সময়ে আশ্চর্য সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বাহিনীকে গুলি ছুড়তে বাধ্য করছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু মোদী সরকারকে ভাবাচ্ছে অন্য একটি প্রসঙ্গও। কাশ্মীরের এই পরিস্থিতির কারণে মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা সরকারের একাংশের। মোদীর পাকিস্তান নীতিও এতে ফের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা সাউথ ব্লকের। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা এমনও বলেন, ‘‘পাকিস্তানের এ দিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সার্ক গোষ্ঠীর বৈঠকে রাজনাথের যাওয়া নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে বিজেপি এবং আরএসএসের একাংশ।’’ প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকা সফর সেরে দেশে ফেরার পরে এ নিয়ে ফের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে আলোচনা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy