Advertisement
E-Paper

ভোট শেষ, কাঠুয়ার রায় নিয়ে নেই শোরগোলও

২০১৮ সালে ওই গণধর্ষণের ঘটনার পরে এবং তার পরের বছরে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই গ্রামে এসে একইরকম মেরুকরণের উত্তাপ টের পেয়েছিলাম।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০২:২৪
আদালত থেকে বেরোচ্ছে কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অপরাধী সাঞ্জী রাম। সোমবার। ছবি: এএফপি।

আদালত থেকে বেরোচ্ছে কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অপরাধী সাঞ্জী রাম। সোমবার। ছবি: এএফপি।

অনেক খোঁজার পরে কাঠুয়ার রসানা গ্রামের রাস্তায় দেখা পেয়েছিলাম নির্যাতিত ও নিহত মেষপালিকার পালক পিতার। অস্থিসার ওই ব্যক্তি বিড়বিড় শুধু এটুকু বলতে পেরেছিলেন “মেয়েটার জিন আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘোরে। বকরিরা মাঝেমাঝেই অস্থির হয়ে ওঠে রাতবিরেতে। ঘরের পাশে ছায়া সরে যায়।” তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলাম নিরালা এবং নিস্তব্ধ জঙ্গলের নির্জনতম কোণে তাঁদের বাড়িতে। পুলিশের পাহারায় থাকা বাড়িতেও বিশেষ কথা গড়ায়নি।

আজ পঠানকোটের আদালত ওই গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় ছ’জনকে শাস্তি দেওয়ার পরেও ওই তল্লাট কিন্তু একইরকম শুনশান। কাঠুয়া, বানিহাল, ডোডা মারুয়া হয়ে কার্গিলের পথে রওনা হয়ে গিয়েছে যাযাবর বকরওয়াল সম্প্রদায়। ভোটের আগে যখন এই ঘটনাটিকে নিয়ে মেরুকরণের তীব্র লড়াই চলছে, তখনও দেখেছি যাযাবরদের তা নিয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা নেই।

তবে সরব ছিল সাঞ্জী রামের হয়ে রাস্তায় নামা রাজনৈতিক এবং ‘অরাজনৈতিক’ শক্তি। তারাও এ দিনের রায়ের পরে সে ভাবে রাস্তায় নামেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, তার কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত, এই মেষপালিকার মৃত্যু তথা সাঞ্জী রাম এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতারিকে সে সময়ে ভোটের জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল। সেই কাজ মিটে গিয়েছে। উধমপুর থেকে (জম্মুর যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে কাঠুয়া) বিপুলভাবে জিতে এসেছেন বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র সিংহ। এখন কে শাস্তি পেল না পেল, তা নিয়ে বড় রকমের উত্তেজনা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, দায়রা আদালতের রায় এসেছে। এরপর দীর্ঘ আইনি রাস্তা বাকি। ধীরে সুস্থেই মেরুকরণের মশলা তৈরি করা যাবে তত দিন।

আরও পড়ুন: রেকর্ড গরম দিল্লিতে, তাপপ্রবাহের সতর্কতা এ রাজ্যেও, কলকাতায় বাড়বে ২-৩ ডিগ্রি

২০১৮ সালে ওই গণধর্ষণের ঘটনার পরে এবং তার পরের বছরে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই গ্রামে এসে একইরকম মেরুকরণের উত্তাপ টের পেয়েছিলাম। যে স্থানীয় মন্দিরে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে পৌঁছে পাক খেতে দেখেছিলাম বছর পঁচিশের এক যুবককে। হাতে লম্বা বাঁশের লাঠির আগায় বাঁকানো ইস্পাতের ফলা! অপরিচিত ব্যক্তিকে ঢুকতে দেখেই সেই ফলা চলে এসেছিল তাঁর নিজের গলার কাছে! সঙ্গে স্থানীয় ডোগরি ভাষায় হুঙ্কার। সে ছিল সাঞ্জী রামের নিকটাত্মীয়। দিল্লি থেকে এসেছি শুনে হুঙ্কার বদলে গিয়েছিল হিন্দিতে। বক্তব্য, মেহবুবা মুফতি হিন্দুদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

বারবার হুমকির সামনে পড়তে হয়েছে ওই গ্রামে।

জম্মু-পঠানকোট সড়কের পাশে একটি বটগাছের নীচে বাঁধানো বেদীতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে ধর্নায় বসেছিলেন সাঞ্জী রামদের আত্মীয়স্বজন। বেশিরভাগই মহিলা। নিচে শতরঞ্চি বিছিয়ে বসেছিলেন স্থানীয় সরপঞ্চ এবং গ্রামের বিজেপি নেতারা। ‘‘আপনি তো কলকাতার, তার মানে বামপন্থী। আমাদের বিরুদ্ধে লিখবেন!’’ ঝাঁঝিয়ে উঠেছিলেন সরপঞ্চ কান্ত কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘জম্মুর হিন্দুরা মেহবুবা মুফতির দু’চোখের বিষ। মুসলিম যাযাবরেরা কাশ্মীর থেকে এসে যে কোনও জমি জবরদখল করতে পারে‌। আমরা রা কাড়তে পারি না। কারণ জনজাতি কল্যাণ দফতরের নির্দেশ এমনই।’’

শেষ রুদ্রমূর্তি দেখেছি সাঞ্জী রামের স্ত্রীয়ের। মাস তিনেক আগের কথা। জঙ্গলঘেরা ভুতুড়ে মহল্লা থেকে কাঁটাবন পেরিয়ে গ্রামের লোকালয়। যেখানে একটি পাকা বাড়ি সাঞ্জী রামের পরিবারের। সাঞ্জীর স্ত্রী প্রথমে মুখ খুলে বলেছিলেন, “রাজপুত.... বসিয়ে দিয়েছে মুসলমানদের এখানে। নিজেদের বাচ্চাদের নিজেরা সামলে রাখতে পারে না। আমার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে।” সাংবাদিক বোঝার পরে অবশ্য ঝাঁটাপেটা করতে বাকি রেখেছিলেন শুধু। “এই মিডিয়াই তো সর্বনাশের মূল। শুধু নোংরা ছড়াচ্ছে।”

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

Kathua Rape Kathua verdict কাঠুয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy