মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ মাস আগেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের। —ফাইল চিত্র।
অকাল নির্বাচন নিশ্চিত হয়ে গেল তেলঙ্গানায়। কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ মাস আগেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদের প্রগতি ভবনে ক্যাবিনেট বৈঠক করলেন কেসিআর। সেই বৈঠকেই সিলমোহর পড়ল বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশে। তার পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী।
তেলঙ্গানা যে অকাল নির্বাচনে যেতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। তেলঙ্গানার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গত চার বছরে যে কাজ তিনি করেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশের অঙ্গ হিসেবে থাকাকালীন ৫৮ বছরেও সে কাজ হয়নি বলে কেসিআর-এর দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) দাবি। সেই কাজ রাজ্যবাসীর সামনে তুলে ধরেই নির্বাচনে যাওয়া উচিত এবং আরও একটা জয় সুনিশ্চিত করার জন্য এখনই নির্বাচনে যাওয়ার সঠিক সময় বলে টিআরএস নেতৃত্ব মনে করছেন।
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ২ সেপ্টেম্বর বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কেসিআর। তেলঙ্গানার রঙ্গারেড্ডি জেলায় ওই দিন বিরাট জনসভার ডাক দিয়েছিল টিআরএস। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসভা হতে চলেছে সেটি— জানানো হয়েছিল তেলঙ্গানার শাসক দলের তরফ থেকে। তবে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে জমায়েত কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাতেও অবশ্য জনসভার আকার খুব কম দাঁড়ায়নি।
আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষ দলের নামে অপপ্রচার! বন্ধ করতে মনিটর করবে ফেসবুক, গুগলরা
রঙ্গারেড্ডিতে ওই জনসভায় যাওয়ার আগেই সে দিন ক্যাবিনেট বৈঠকও নির্ধারিত ছিল। তেলঙ্গানার রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা ছিল যে, ওই ক্যাবিনেট বৈঠকেই বিধানসভা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পরে বিপুল জনসভায় দাঁড়িয়ে অকাল নির্বাচনের কথা ঘোষণা করবেন কেসিআর। কিন্তু তা হয়নি। সে দিন বিধানসভা ভঙ্গের সিদ্ধান্তও হয়নি। কেসিআর অকাল নির্বাচন ঘোষণাও করেননি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফের ক্যাবিনেট বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই বিধানসভা ভাঙার সুপারিশে সিলমোহর পড়ল। বৈঠক থেকে বেরিয়েই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি রাজভবনে গেলেন এবং রাজ্যপাল ই এস এল নরসিম্হনের হাতে মন্ত্রিসভার সুপারিশ তুলে দিলেন। কোনও কোনও মহলের ধারণা, কেসিআর মনে করেন তাঁর পয়মন্ত সংখ্যা ৬। সেই ছ’তারিখেই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
এ দিন সকালে ক্যাবিনেট বৈঠকের আগে কেসিআর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছন। তেলঙ্গানার স্বার্থে যা সবচেয়ে ভাল, তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছে দল ও সরকার— জানান কেসিআর। ক্যাবিনেট বৈঠক শেষ হতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত কী।
রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দিলেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে দক্ষিণী রাজ্যটিতে। কংগ্রেস এবং তেলুগু দেশম পার্টি হাত মিলিয়ে ভোটে যেতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে কেসিআরের দল একাই লড়বে। তেলঙ্গানার বাসিন্দাদের প্রতি টিআরএস সুপ্রিমোর আহ্বান— দিল্লির দলগুলির দাসত্ব করার প্রয়োজন নেই, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচুন। ‘আত্মমর্যাদা’র ফর্মুলাও বাতলে দিয়েছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসীকে তামিলনাড়ু মডেল অনুসরণ করতে বলেছেন তিনি। তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে যেমন দুই রাজ্য দল এডিএমকে এবং ডিএমকে-ই ক্ষমতার দুই প্রধান কেন্দ্র, তেলঙ্গানাতেও তেমনটাই হওয়া উচিত বলে কেসিআরের মত। রাজ্যবাসী যদি কেসিআরের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুধু তেলঙ্গানার দলকেই বেছে নেওয়ার নীতি নেন, তা হলে টিআরএস-এর বিপুল জয় সুনিশ্চিত। কারণ সে রাজ্যে প্রভাবশালী অন্য দলগুলির মধ্যে বিজেপি ও কংগ্রেস জাতীয় দল। আর তেলুগু দেশম এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস মূলত অন্ধ্রপ্রদেশের দল হিসেবে পরিচিত। তেলঙ্গানার দল হিসেবে পরিচিতি রয়েছে একমাত্র টিআরএস-এরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy