Advertisement
০১ মে ২০২৪
CPM

শান্তি ভঙ্গ, ভাম বনাম বাম লড়াইয়ে আসরে পূর্ত দফতর

বিধাননগরের ইন্দিরা ভবনের আশেপাশে শেয়ালের আনাগোনা রুখতে এ রাজ্যে বাম জমানায় এক বার উঠে-পড়ে লাগতে হয়েছিল পুলিশকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু।

cpm

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

এমনিতে নিরিবিলি এলাকা। মান্যগণ্যদের বাস। শান্তশিষ্ট মহল্লায় এমন উপদ্রব গজিয়ে উঠবে, কে জানতো! মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিরোধী দলনেতা সকলে তটস্থ। রাজ্যপাল ঘন ঘন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। নিরাপত্তা বলয়েও কোনও সুরাহা মিলছে না!

উপদ্রবেরা মূলত চার পেয়ে! কয়েক খানা সরীসৃপেরও দেখা মিলেছে মাঝে সাঝে। ভাম, গন্ধগোকুল এবং বেজিরা ঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছে ভিআইপি-দের। বেজি যখন আছে, কিছু সাপের আনাগোনাও আছে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে শাসক ও বিরোধী পক্ষ যখন একেবারে সম্মুখ সমরে, সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার অভিন্ন বিপদে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। মন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা-সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাসস্থানে সংস্কারের কাজের জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করেছে তারা। যদি ফাঁক-ফোকর বুজিয়ে ভাম ঠেকানো যায়!

ঘটনা তিরুঅনন্তপুরমের। কেরলের রাজধানী শহরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মূলত মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, অন্য মন্ত্রীদের সরকারি বাসস্থান। মূল সড়ক ছেড়ে খাড়াই রাস্তা ধরে গাছ-পালা ঘেরা ওই মহল্লায় ঢুকতে হয়। সেখানেই বেশ কিছু দিন যাবৎ চলছে ভামের তাণ্ডব! মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তাদের ঠেলায় জেরবার। তিনি বলেছেন, ‘‘ইস্ত্রি করা জামাকাপড় নষ্ট করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। পাত্রের ঢাকা ফেলে দিয়ে জল ছড়াচ্ছে। কলা খেয়ে খোসা সাজিয়ে রেখে যাচ্ছে! এই এলাকায় সকলেরই স্বাভাবিক জীবন-যাপনে প্রভাব পড়ছে ভাম, বিশেষত গন্ধগোকুলদের জন্য।’’

বিধাননগরের ইন্দিরা ভবনের আশেপাশে শেয়ালের আনাগোনা রুখতে এ রাজ্যে বাম জমানায় এক বার উঠে-পড়ে লাগতে হয়েছিল পুলিশকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু। রাত-বিরেতে শেয়ালের ডাকে নাকি মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছিল। কেরলের ঘটনা শুনে অনেকের সেই শেয়াল-কাহিনী মনে পড়তে পারে। তবে বিজয়নের সিপিএম সরকারের আমলে ভাম পরিবারের মোকাবিলায় এখনও পুলিশ নামেনি। পুরোদস্তুর বে-পুলিশ, সাধারণ প্রশাসনিক বন্দোবস্ত।

পৃথিবীর আর সব বিষয়ে বিজয়নদের দলের সঙ্গে ভিন্নমত হলেও এই উপদ্রবের সামনে বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন মুখ্যমন্ত্রীরও পাশে! তাঁর কথায়, ‘‘মাঝ রাতে, ভোর রাতে যখন তখন ঘুম ভেঙে যাচ্ছে ভামের আওয়াজে। একটা তো নয়, ও রকম অনেকগুলো আছে। তারা যা করে বেড়াচ্ছে, তাতে এই সব আবাসনের বাসিন্দারা সত্যিই সমস্যায় পড়ছেন।’’ রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান গত বছরেই কয়েক দিন তিরুঅনন্তপুরমে হোটেলে গিয়ে উঠেছিলেন। কারণ, রাজভবনে তখন ভামেরা অনুপ্রবেশ করেছিল! তিনিও চান, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ভামের দাপট নিয়ন্ত্রণে আসুক।

সমস্যার সমাধান খুঁজতে আপাতত ৪৮ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার বিশেষ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতরের তরফে। মন্ত্রীদের বাসস্থান রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার জন্য। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পি এ মহম্মদ রিয়াজ় পারিবারিক সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের জামাই। পূর্ত দফতর সূত্রের বক্তব্য, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পুরনো বাংলো বা বাড়িগুলোর বেশির ভাগেই ‘ফল্‌স সিলিং’ আছে। সেই ফাঁকে ভামেরা আস্তানা গাড়ছে। আশেপাশের গাছপালার সুবিধাও আছে। রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়ায় আপাতত মূল নজর থাকবে ভামেদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণেই।

রসিকতা করে কেউ কেউ বলছেন, কেরলে রাজনীতির বাইরে আর একটা লড়াই লেগেছে ভাম বনাম বামের! সঙ্গে আছে কংগ্রেস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Kerala Pinarayi Vijayan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE