Advertisement
E-Paper

১৪ জনের নলি কেটে নিজের গলায় ফাঁস

ঠাণে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আশুতোষ দুম্বরে জানিয়েছেন, পারিবারিক অনুষ্ঠানের নাম করে আগেই তিন বোন ও তাঁদের সন্তানদের নিজের বাড়িতে ডেকে এনেছিলেন নবি মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ওয়ারেকর।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৩
ঠাণেতে হাসনেন আনোয়ার ওয়াড়েকরের (ইনসেটে) সেই বাড়ির বাইরে পুলিশ।ছবি: পিটিআই

ঠাণেতে হাসনেন আনোয়ার ওয়াড়েকরের (ইনসেটে) সেই বাড়ির বাইরে পুলিশ।ছবি: পিটিআই

জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে প্রাণপণে চিৎকার করছিলেন বছর বাইশের তরুণী। গলা থেকে রক্ত ঝরছে। মুখে-চোখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। চিৎকারে ছুটে আসেন পড়শিরা। জানলার গ্রিল

ভেঙে উদ্ধার করেন তরুণীকে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে দেখতে পায়, চাপ চাপ রক্তের মধ্যে পড়ে রয়েছে একই পরিবারের ১৪ জনের গলাকাটা দেহ। আর গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন বছর পঁয়ত্রিশের এক তরুণ। ডান হাতে তখনও ধরা রক্তমাখা ছুরি!

রবিবার ঠাণের কাসারওয়াদাবলি এলাকার এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে চমকে উঠেছে পুলিশও। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হাসনেন আনোয়ার ওয়ারেকর নামে ওই আত্মঘাতী তরুণই একে একে সাতটি শিশু ও ছ’জন মহিলা-সহ পরিবারের ১৪ জনকে খুন করেছেন। তার পর নিজে গলায় দড়ি দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ারের বাবা, মা, স্ত্রী, ছ’বছর এবং তিন মাস বয়সি আনোয়ারের দুই মেয়ে, তিন বোন এবং বোনেদের ছ’টি সন্তান। জামিল পাঠান নামের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘জানলার বাইরে থেকেই দেখি ঘরে চারিদিকে রক্ত। তার মধ্যেই পড়ে রয়েছে দেহগুলি। দুর্গন্ধে কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। আমার আর কাছে যাওয়ার সাহসও হয়নি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, নিজের শিশুকন্যার মতো পাঁচ মাস বয়সের এক ভাগ্নিকেও ঠান্ডা মাথায় খুন করেন আনোয়ার। গলার নলি কেটে খুনের আগে ছোট-বড় সকলকেই মাদক খাওয়ানো হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ঠাণে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আশুতোষ দুম্বরে জানিয়েছেন, পারিবারিক অনুষ্ঠানের নাম করে আগেই তিন বোন ও তাঁদের সন্তানদের নিজের বাড়িতে ডেকে এনেছিলেন নবি মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ওয়ারেকর। আজ ভোর তিনটে নাগাদ বাড়ির সামনে একটি মসজিদ থেকে প্রার্থনা সেরে ফিরে আসেন তিনি। সম্ভবত তার পরেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান। বাড়ির একতলা ও দোতলায় পড়ে ছিল ১৪টি রক্তাক্ত দেহ। তদন্তে উঠে এসেছে, খুনের আগে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দোতলার ঘরে ছিলেন আনোয়ার। বাবা-মা এবং বোনেরা ছিলেন একতলায়। ২২ বছরের বোন সুবিয়া সোজেফ বারমালের উপরেও ছুরি নিয়ে চড়াও হয়েছিলেন তিনি। কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান সুবিয়া। ভোর পাঁচটা নাগাদ তাঁর আর্তনাদেই ঘটনাটি নজরে আসে প্রতিবেশীদের। গলায় গভীর ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুবিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, অবস্থার উন্নতি হলে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হবে।

আনোয়ারই যে খুনি, দিনের শেষে তা নিয়ে পুলিশ এক রকম নিশ্চিত হলেও খুনের কারণ নিয়ে ধন্দ থেকেই যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের দিকেই আঙুল তুলছে পুলিশ। তবে অন্য এক তত্ত্বও খাড়া করছেন প্রতিবেশীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, পরিবারের সদস্যদের ‘কুরবানি’ (ঈশ্বরের কাছে বলি) দিয়েছেন আনোয়ার। যে কারণে, সতর্ক ভাবে প্রত্যেকেরই নলি কেটেছেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর আগেও ওই যুবক বিষ খাইয়ে পরিবারের লোকদের
মারার চেষ্টা করেছিলেন বলে কারও কারও দাবি।

পুলিশ আনোয়ারকে সন্দেহ করলেও তা মানতে পারছেন না তাঁর বন্ধু জামির পটেল। তাঁর কথায়, ‘‘এই রকম নৃশংস কাজ আনোয়ার করতে পারে না। কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো।’’ এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও জানিয়েছেন, পাড়ায় সুনাম ছিল পরিবারটির। আনোয়ারের বাবা স্থানীয় একটি দরগার ট্রাস্টি ছিলেন। গত দশ বছর ধরে ওই বাড়িতেই থাকতেন তাঁরা। আত্মীয়টি জানিয়েছেন, এক সময় আনোয়ারদের প্রচুর জমিজমা-সম্পত্তি ছিল। পরে যদিও অনেক কিছুই বিক্রি হয়ে যায়।

কলকাতার এক আইনজীবীর মতে, দেশজুড়ে সাড়া জাগানো বহু হত্যাকাণ্ডেই সন্তান কিংবা বাবা-মায়ের নাম প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসতে দেখা গিয়েছে। আরুষি তলোয়ার হত্যাকাণ্ডে যেমন তার বাবা-মায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। শিনা বরাকে খুনের দায়ে তাঁর মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এখন জেলে। কিন্তু একসঙ্গে পরিবারের ১৪ জনকে খুনের ঘটনা ভারতের অপরাধ-ইতিহাসে কার্যত বিরল।

national news thane 14 murdered family members
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy