Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Suicide

আত্মহত্যার চেষ্টা গুয়াহাটিতে, ঝুলে পড়া মহিলাকে বাঁচাল কলকাতা পুলিশ

রুদ্ধশ্বাস অপারেশন চালিয়ে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটিতে এক মহিলার প্রাণ রক্ষা করল কলকাতা পুলিশ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:৪২
Share: Save:

মহিলা শাড়ির ফাঁস দিচ্ছেন গলায়। এর পর ধীরে ধীরে একটা টুলের উপরে উঠে শাড়ির অন্য প্রান্ত ঝুলিয়ে দিচ্ছেন মাথার উপরের সিলিং ফ্যানে। এর পর টেনে পরখ করছেন মজবুত হয়েছে কি না, ফাঁস। আর গোটাটাই ফেসবুকে লাইভে। লাইভ দেখছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারাও। তাঁরা জানেন মহিলা কোথায়। একের পর এক ফোন করে যাচ্ছেন। কিন্তু, ফোন ধরছেন না কেউ। হাত কামড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত ফোনে সাড়া মিলল।

ততক্ষণে গলায় ফাঁস দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ পর্বে। অধৈর্য কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা ফোন করছেন অন্য প্রান্তে। মিনিটে মিনিটে জানাচ্ছেন ‘আপডেট’। তার মধ্যেই হঠাৎ গোয়েন্দারা দেখলেন, মহিলা ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েছেন! পায়ের তলা থেকে সরে গিয়েছেটুলটা। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক চোখ বন্ধ করে ফেললেন এই ভেবে যে, সমস্ত চেষ্টা বৃথাই হল! নাটকীয় ভাবে সেই মূহূর্তেই দরজা ভেঙে মহিলার ঘরে ঢোকে পুলিশ। ফাঁস মুক্ত করে নামানো হয় তাঁকে। পরে ওই আধিকারিক জানতে পারেন, মহিলা বেঁচে গিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত এ রকমই রুদ্ধশ্বাস অপারেশন চালিয়ে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটিতে এক মহিলার প্রাণ রক্ষা করল কলকাতা পুলিশ। প্রায় অবিশ্বাস্য হলেও, কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখার আধিকারিকদের তৎপরতায় কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে মহিলাকে।

আরও পড়ুন: ছ’মাস পর্যন্ত গর্ভপাত করা যাবে, সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা​

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে তরফে একটি ই-মেল পান কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। সেই মেলে জানানো হয়, কয়েক মিনিট আগে এক মহিলা তাঁর প্রোফাইল থেকে লাইভ করছেন এবং সেখানে তিনি বলছেন যে, তিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বিষয়টি এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাঁরা পূর্ব ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসাবে কলকাতা পুলিশকে যোগাযোগ করে।

কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বুধবার বলেন,‘‘আমরা ফেসবুকের দেওয়া তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখি ওই প্রোফাইলটি এ রাজ্যের কারও নয়। প্রোফাইলের মালিক গুয়াহাটির এক বাসিন্দা এবং ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস (আইপি)-এর সূত্র ধরে জানা যায়, মহিলা ওই সময় গুয়াহাটিতেই রয়েছেন।”

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলার ‘লোকেশন’ নির্দিষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশের তরফে মহিলার খুঁটিনাটি তথ্য জানিয়ে যোগাযোগ করা হয় অসম পুলিশের সঙ্গে। কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, ওই মহিলা গুয়াহাটির ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স নামে একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা। জায়গাটি কামরূপ জেলা পুলিশের চ্যাঙসারি থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যসূত্র ধরে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই মহিলার ফ্ল্যাটে হাজির হয় চ্যাঙসারি থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই সময় মহিলা একাই ছিলেন বাড়িতে। তাঁকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরকে দল থেকে বহিষ্কার করল জেডিইউ​

কলকাতা পুলিশের যদিও অভিযোগ, অনেক দেরিতে সক্রিয় হয়েছিল অসম পুলিশ। তা না হলে অনেক আগেই বাঁচানো যেত ওই মহিলাকে।পুলিশ সূত্রের খবর, আর কয়েক মিনিট দেরি হলেই মহিলাকে বাঁচানো যেত না। হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর স্বামীকে খবর দেয়পুলিশ। জানা গিয়েছে মহিলা বেশ কয়েক মাস ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।

এর আগেও ঠিক একই ভাবে কলকাতার পিকনিক গার্ডেনে এক যুবককে আত্মহত্যার মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল কলকাতা পুলিশ। তবে ভিন্‌ রাজ্যে এ রকম সফল অপারেশন এই প্রথম বলেই জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Police Kolkata Police Guwahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE