Advertisement
E-Paper

Afghanistan Crisis: অচিন এক শহরে মুক্তি, পিছনে পড়ে ধ্বস্ত নগরী

কাজের সূত্রে দেশ-বিদেশে বেশ কিছুটা ঘুরতে হয়েছে আমার এই ৩২ বছরের জীবনে। কখনও ভাবিনি, কলকাতা ছাড়া অন্য কোনও শহরকে এতটা ভালবেসে ফেলব।

আজহারুল হক

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩০
কাবুল ছাড়ার হিড়িক

কাবুল ছাড়ার হিড়িক ছবি: রয়টার্স।

২৫ মাস! আফগানিস্তানে আমার থাকার সময়টা খুব কম নয়। কাজের সূত্রে দেশ-বিদেশে বেশ কিছুটা ঘুরতে হয়েছে আমার এই ৩২ বছরের জীবনে। কখনও ভাবিনি, কলকাতা ছাড়া অন্য কোনও শহরকে এতটা ভালবেসে ফেলব।

কাবুল ছাড়ার জন্য চেনা-অচেনা মানুষের আকুতির খবর যখন সারা দুনিয়ার সংবাদের শিরোনাম হয়ে উঠছে, তখন এই কথাগুলোই বহু বার ভেবেছি। সেই আমাকেই কাবুল ছেড়ে বেরোনোর জন্য এতটা মরিয়া হতে হল! রবিবার সন্ধ্যার মুখে রাষ্ট্রপুঞ্জের চার্টার্ড বিমানে বসে টেক অফের মুহূর্তটা নিজেরই ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। রাতে পৌঁছলাম নতুন দেশ, কাজাখস্তানে। নামলাম আলমাটির বিমানবন্দরে। এর পরে অবস্থা বুঝে যত তাড়াতাড়ি পারি, এখান থেকে দিল্লির উড়ান ধরা!

আজ সাতসকালে কাবুল বিমানবন্দরে ঢুকে বসে ছিলাম। চার্টার্ড বিমানের সময় দফায় দফায় পিছিয়েছে। কখনও শুনি বেলা দেড়টা, তার পর বিকেল ৪টে। শেষমেশ স্থানীয় সময় প্রায় সন্ধ্যা ৬টায় বিমান ছাড়ল। তার আগে সকালেই

রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভয়ে বসে কাবুল বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রার অভিজ্ঞতাও রোমাঞ্চকর। মনে হচ্ছিল, ঠিক এক দিন আগে বিমানবন্দরের পথে বেরিয়ে অন্য ভারতীয় নাগরিকদের উৎকণ্ঠার কথা।

ছ’দিন আগে, গত সোমবারই, আমার কাবুল থেকে দিল্লির উড়ানের টিকিট কাটা ছিল। সে দিনই রানওয়ের সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য জীবনে ভুলব না! আমেরিকাগামী বিমানের ডানা বা চাকা ধরেও পালাতে মরিয়া কত জন মারা গেলেন। চরম বিশৃঙ্খলা সামলাতে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে তখন গুলি চালানো হচ্ছিল। ঠেলাঠেলিতে প্রাণসংশয়। তার এক দিন পর থেকেই আমি রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরের চত্বরে মাথা গুঁজে পড়ে থেকেছি। ওই তল্লাটে আস্ত একটা শহরের মতোই পরিবেশ এই দফতরের। এই ক’টা দিন তাই বাইরের ঝড়ঝাপটা অতটা টের পাইনি। কিন্তু এ ভাবে তো অনন্ত কাল চলতে পারে না। মনে হচ্ছিল, সোনার খাঁচায় রয়েছি। দেশে ফেরার চিন্তায় অস্থির লাগছিল। ভারতীয় দূতাবাসের তরফে দেশে ফেরানোর বার্তা পেয়ে আমিও ভেবেছিলাম, এক বার চেষ্টা করব! কিন্তু বিমানবন্দরে কার ভরসায়, কী করে যাব? এই ভেবেই পিছিয়ে আসি! তার পরে তো শুনেইছি, মাঝপথে অন্য ভারতীয়দের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তালিবানের হয়রানির কথা।

আমাদের সৌভাগ্য, এ যাত্রা রাষ্ট্রপুঞ্জের ব্যবস্থাপনায় কোনও ঝক্কি পোহাতে হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় তালিবান বন্দুকধারীরাই সামনে, পিছনে কনভয়কে সুরক্ষা দিচ্ছিল। মাঝে চলেছি, আমরা ১০৫ জন। প্রতিটি গাড়ি বুলেটপ্রুফ। এক-একটিতে চার জন। আমার সঙ্গে এক জন সুইস নাগরিক, এক জন ইথিয়োপিয়ান আর এক জন আলবেনিয়ার বাসিন্দা। গাড়িতে সওয়ার যেন একটা আস্ত পৃথিবী! কোথাও ঠোক্কর না খেয়ে আমরা সটান সুরক্ষা ব্যূহ পেরিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকে গেলাম। থিকথিক করছে আমেরিকান সেনা। নেটো বাহিনী কি না জানি না, তবে কয়েক জন তুরস্কের সেনাও দেখলাম মনে হল। বিমানবন্দরে জলের অভাব ছিল না! খাবার বলতে অবশ্য আমার সঙ্গে রাখা কয়েকটা আপেল। তবে বাড়ি ফেরার চিন্তায় কোনও অস্বাচ্ছন্দ্য মনেই ছিল না। বিমানবন্দরে যে ঢুকতে পেরেছি, এটাই স্বস্তির লাগছিল।

সেই সঙ্গে একটা মন খারাপও এড়াতে পারছি না! আমার কাছে একটা দেশ বা শহর মানে তো তার মানুষজন! আফগানিস্তানকেও তার মানুষদের জন্যই মনে থাকবে। নিজেকে বাঁচার জন্য এই দেশ ছাড়তে হলেও গ্লানি হচ্ছে, আমার সহকর্মীদের কথা ভেবে। আমরা সবাই নারীশিক্ষা, শিশুশিক্ষার কাজ করতাম। জানি না, তালিবান আবার ওদের খুঁজবে কি না!

(লেখক কাবুলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী)

Afghanistan Crisis Kabul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy