Advertisement
E-Paper

লকভির মুক্তি নিয়ে হইচইয়ে রুষ্ট পাকিস্তান

পাক জঙ্গি জাকিউর রহমান লকভির মুক্তি নিয়ে ভারতে হইচই হওয়ায় পাকিস্তান ক্ষুব্ধ। পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত বুধবার কলকাতায় বলেন, মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত লকভি আদৌ মুক্তি পায়নি। সে এখনও জেলেই রয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। বাসিত বলেন, “ভারতের মতো পাকিস্তানেও একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই বিচার প্রক্রিয়ায় লকভি যদি জামিন পেয়ে যায়, তা হলে প্রশাসনের কী করার আছে? কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা তো চলছে। সে এখনও মুক্তিও পায়নি। প্রশ্ন হল, বিষয়টা নিয়ে কেন ভারতে এত হইচই করা হবে?” পাক দূত দাবি করেন, “লকভির বিরুদ্ধে পাক সরকার গুরুত্ব দিয়েই মামলা চালাচ্ছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৬
কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে  পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

পাক জঙ্গি জাকিউর রহমান লকভির মুক্তি নিয়ে ভারতে হইচই হওয়ায় পাকিস্তান ক্ষুব্ধ। পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত বুধবার কলকাতায় বলেন, মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত লকভি আদৌ মুক্তি পায়নি। সে এখনও জেলেই রয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। বাসিত বলেন, “ভারতের মতো পাকিস্তানেও একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই বিচার প্রক্রিয়ায় লকভি যদি জামিন পেয়ে যায়, তা হলে প্রশাসনের কী করার আছে? কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা তো চলছে। সে এখনও মুক্তিও পায়নি। প্রশ্ন হল, বিষয়টা নিয়ে কেন ভারতে এত হইচই করা হবে?” পাক দূত দাবি করেন, “লকভির বিরুদ্ধে পাক সরকার গুরুত্ব দিয়েই মামলা চালাচ্ছে।”

তবে নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বাসিতের এই দাবিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, লকভির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার গুচ্ছ গুচ্ছ তথ্যপ্রমাণ পাকিস্তান সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মুম্বই হামলায় তার হাত থাকার বিষয়েও ইসলামাবাদকে আদালতগ্রাহ্য তথ্য দেওয়া হয়েছে। দিল্লির অভিযোগ, আন্তর্জাতিক চাপে মামলা শুরু করলেও ভারতের দেওয়া তথ্যপ্রমাণকে গুরুত্ব দিচ্ছে না পাক প্রশাসন। এমনকী পাকিস্তানের অনেক মানুষই অভিযোগ করছেন মামলা দুর্বল করে জামিন পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে লকভিকে। বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার যুক্তি যেমন রয়েছে, প্রশাসনেরও তেমন দায়িত্ব রয়েছে কোনও জঙ্গি যাতে মুক্তি পেয়ে ফের নাশকতার চক্রান্তে লিপ্ত না-হয় তা নিশ্চিত করা। কারণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই ওবং সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদত না-দেওয়ার বিষয়ে ইসলামাবাদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদেশ মন্ত্রকের কথায় লকভির জামিনের অর্থ, সে প্রতিশ্রুতি রাখার বিষয়ে তারা যত্নশীল নয়। সে জন্যই হইচই হচ্ছে ভারতে। পাকিস্তানকে খুশি করার থেকেও বড় প্রশ্ন দেশের নিরাপত্তা।

পাক হাইকমিশনার অবশ্য মামলা দুর্বল করার যুক্তি মানছেন না। তাঁর দাবি নয়াদিল্লির দেওয়া তথ্যপ্রমাণ দিয়েই লকভির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “সব দেশেই বিচার ব্যবস্থা নিজের নিয়মে চলে। তার জন্য সময়ও লাগে।” বাসিতের বক্তব্য, ভারতেও বহু মামলা বছরের পর বছর চলছে। যে হেতু ভারতে ঘটে যাওয়া হামলার বিচার হচ্ছে পাকিস্তানে, কিছুটা বাড়তি সময় লাগতেই পারে।

বাসিত বলেন, গত ৬৮ বছর ধরে দুই দেশ এক জটিল সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে চলেছে। চার-চারটি যুদ্ধ হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখার ‘সামান্য ঘটনার’ জেরে অতীতে বার বার দু’দেশ মুখ দেখাদেখি বন্ধ করেছে। আবার তা শুরুও হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই অতীতে সিন্ধু নদের জল বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে তীর্থস্থান দর্শনের ব্যবস্থা হয়েছে। এ বার নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে দু’দেশকেই এগোতে হবে। মার্চেন্ট চেম্বার্স অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত আলোচনা সভায় পাক হাই

কমিশনার বলেন, “ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষবৈঠকে মোদীর উপস্থিতি সম্মেলনের গুরুত্বকেও ছাপিয়ে যাবে। এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।” সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সরকারি স্তরে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন পাক দূত। গত সপ্তাহে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানে গিয়ে এক দফা বৈঠক করে এসেছেন। সে প্রসঙ্গে বাসিত বলেন, “খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, এ বার বলার মতো কিছু একটা ঘটবে।”

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের কথায়, পাক রেঞ্জাররা এক দিকে সীমান্তে গোলাবর্ষণ করবে, জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দেবে, আবার তাদের মন্ত্রী-সচিবরা ঠান্ডা ঘরে বসে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলবে এটা হতে পারে না। অথচ এই দু’মুখো নীতিই তারা বরাবর নিয়ে চলেছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, দিল্লি মনে করে সম্পর্ক শোধরানোর জন্য মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোটা বেশি জরুরি। পাকিস্তানের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আগাম ভিসার বদলে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’-এর ঘোষণা আজই হয়েছে। এ সবই সম্পর্ক শোধরানোর আসল প্রক্রিয়া, যা ভারতের পক্ষে করা হচ্ছে। কলকাতায় বাসিতের মন্তব্যকে তারা ‘নিছক কথার কথা’-র বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ।

গত অগস্টে পাক হাইকমিশনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে হুরিয়ত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর পরই ভারত বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত করে দিয়েছিল। নতুন করে কথা বলার পরিবেশ যখন তৈরি হচ্ছে, তখন আগামী ২৩ মার্চ তাদের জাতীয় দিবসে ফের কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে পাক দূতাবাস। এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে এ দিন। পাক দূতের যুক্তি, বরাবর পাক দূতাবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাশ্মীরি নেতাদের ডাকা হয়। দিল্লি আগে কখনও এ নিয়ে আপত্তি করেনি। বাসিতের কথায়, এ সব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভাবতে গেলে বড় কাজ করা যাবে না।

এ দিন বিকেলে সস্ত্রীক নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সৌজন্য বিনিময় করেন পাক দূত। মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ডেকে নেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সে দেশে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানানো হয়। গত বছর পাকিস্তানের তৎকালীন হাইকমিশনার সলমন বসির কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এ বার এলেন তাঁর উত্তরসূরি বাসিত।

zaki-ur rehman lakhvi pakistan abdul basit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy