—ফাইল চিত্র।
বসুন্ধরা-সুষমা মায় সুষমার স্বামীকেও আড়াল করে এসেছে বিজেপি। কিন্তু হাত তুলে নিল বরুণ গাঁধীর বেলায়।
রোজই এখন ললিত-বাণ আছড়ে পড়ছে কোনও না কোনও রাজ নেতার উপরে। প্রথমে যেটি ছিল শুধু বিজেপি শিবিরেই আবদ্ধ, সে গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে আগেই। নতুন টুইটে ললিত মোদী যে অভিযোগটি করলেন, তাতে কংগ্রেস-বিজেপি মিলেমিশে একাকার। ললিতের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে বরুণ গাঁধী লন্ডনে তাঁর বাড়িতে যান। তখন তিনি সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে রফা করার প্রস্তাব দেন। তার জন্য ইতালিতে সনিয়ার বোনের সঙ্গে সমঝোতা করতেও বলেছিলেন। তবে তার জন্য ষাট মিলিয়ন ডলার বা টাকার অঙ্কে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি চেয়েছিলেন।
এ যাবৎ সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরার বিরুদ্ধে যত বার অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। এমনকী আজও যখন সুষমা স্বরাজের স্বামী স্বরাজ কৌশলকে ললিত মোদীর সংস্থায় নির্দেশক হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ঝড় ওঠে, বিজেপি দিনভর সেটিও আড়াল করেছে। বলেছে, প্রস্তাব এলেও তা স্বীকার তো করেননি সুষমার স্বামী! কিন্তু বরুণ গাঁধীর বিরুদ্ধে অভিযোগকে খণ্ডন করেনি। এই ঘটনায় সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ করে কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছে। এমনকী, ‘টু-জি, থ্রিজি, সিডব্লিউজি, জিজাজি’র পর এ বারে ‘মওসিজি’ (মাসী) যোগ হল বলেও কটাক্ষ করেছে। কিন্তু আক্রমণের তালিকায় এ ভাবে ‘মওসিজি’ যোগ করলে তো বরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগই মেনে নেওয়া হল! বিজেপির বক্তব্য, বরুণ নিজেই এর সাফাই দেবেন।
বরুণ অবশ্য সাফাই দিয়েওছেন। ললিত মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করছেন না। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর বোনের মাধ্যমে কংগ্রেসের সঙ্গে রফা করার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন। বরুণ ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহের ছেলে জগৎ সিংহের সঙ্গে তিনি এক বার ‘ঘটনাচক্রে’ ললিত মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে রফা করা, তা-ও আবার বিরোধী শিবিরের নেত্রীর সঙ্গে! এই বিষয়টি রীতিমতো হাস্যকর। ক’দিন আগে ললিত মোদী এ ভাবে প্রিয়ঙ্কা ও রবার্ট বঢরার সঙ্গেও বৈঠকের কথা জানিয়েছিলেন। তাতে কী এল গেল?
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য বলছেন, বরুণ গাঁধী এক জন অভিযুক্তের কাছে গিয়ে সনিয়া গাঁধী বা তাঁর পরিবারের নামে যা নয় তা বলে যাবেন, তাতে কী করে কংগ্রেস সভানেত্রী দোষী হয়ে গেলেন? যে কেউ তো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দিয়েও কোনও কাজ করিয়ে নেওয়ার দাবি করতে পারেন! প্রমাণ কোথায়? কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এখন এই সুযোগে ললিত-কাণ্ডে সরাসরি সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে সেটিকে কোনও ভাবে হাতছাড়া করতে চাইছেন না। যাতে এত দিন ধরে নিজেদের দিকে ধেয়ে আসা আক্রমণের অভিমুখ কিছুটা হলেও ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেটি তাঁরা নিজের দলের নেতা বরুণ গাঁধীর পক্ষ না নিয়ে কেন করতে গেলেন?
বিজেপি সূত্রের মতে, কংগ্রেসের গাঁধী পরিবারের সঙ্গে বরুণের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। একসময় বিজেপি-র প্রয়াত নেতা প্রমোদ মহাজন বরুণকে দলে নিয়ে এসেছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কাদের টক্কর নেওয়ার জন্য। কিন্তু বরুণ তাতে রাজি হননি। বিজেপি-র অনেক নেতা মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে দুই গাঁধী পরিবারকে এক করে কংগ্রেসের হাত শক্ত করার ভাবনাও রয়েছে গাঁধী পরিবারের মধ্যে। দুই গাঁধী পরিবার এক হলে একযোগে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে পারবে কংগ্রেস। বরুণও সেই সম্পর্কটি জিইয়ে রেখেছেন। রাহুলের বিরুদ্ধেও যতটা আক্রমণাত্মক হওয়া প্রয়োজন, বিজেপি-তে থেকেও সেটি করেন না বরুণ। ফলে সনিয়া গাঁধীর বোনকে দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে রফা করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া বরুণের পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই বিজেপি নেতৃত্ব আজ বরুণকে সাফাই দিতে বলে এই সুযোগে কংগ্রেসকেই পুরোদস্তুর আক্রমণ করা শ্রেয় মনে করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy