বিরোধীদের এই সব অভিযোগ সামাল দিতে আজ প্রথম বার মুখ খোলেন সুষমার স্বামী স্বরাজ কৌশল স্বয়ং। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত বিশ বছর ধরে আমি ললিত মোদীর আইনজীবী। তবে ইন্দোফিলের ডিরেক্টর পদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এতে বিতর্কের কী আছে!’’ অন্য দিকে কে কে মোদী বলেন, ‘‘যে হেতু প্রস্তাবটি পরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাই কোম্পানির বোর্ডে এ ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি।’’ বিজেপিরও বক্তব্য, কেউ রাজনীতিতে রয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁদের পেশা ছেড়ে দেবেন!
জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী কী ভাবছেন? মানুষ ঘাস খায়, কিছুই বোঝে না! এক জন ফেরার অভিযুক্তকে সরকার যখন খুঁজছে, তখন তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে সাহায্য করছেন খোদ বিদেশমন্ত্রী। আর বিনিময়ে সুবিধা নিচ্ছে তাঁর গোটা পরিবার।’’ বস্তুত সুষমা-বসুন্ধরার কেলেঙ্কারিকে সামনে রেখে কংগ্রেসের মুখ্য নিশানা এখন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাই মোদীর মৌন থাকা নিয়ে ফের কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, ‘‘সুষমা-বসুন্ধরা-পঙ্কজাকে অমিত শাহ কী সার্টিফিকেট দিচ্ছেন— আমরা কেন দেখতে যাব? প্রধানমন্ত্রী শুধু বিজেপির নন, দেশের সকলের। তিনি সাংবিধানিক পদে বসে রয়েছেন। তাঁকেই জবাব দিতে হবে!’’
এ প্রসঙ্গে আজ দু’টি অতীত দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরেছে কংগ্রেস। এক ইউপিএ জমানার বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহ। এবং দুই দিল্লিতে বর্তমান আপ সরকারের সদ্য প্রাক্তন আইনমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ তোমর। কংগ্রেসের যুক্তি— ভোলকার কাণ্ডে নটবর সিংহের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। আদালতে সাজা না-হলেও নৈতিক কারণে তাঁকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। আবার হালফিলে ভুয়ো ডিগ্রি কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন আপ সরকারের আইনমন্ত্রী। তা হলে মোদীর মন্ত্রীরা কি মহামানব? তাঁদের জন্য দেশে পৃথক আইন চলবে! রাজনীতিতে মোদী কি তা হলে নৈতিকতার নতুন মানদণ্ড তৈরি করছেন? অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এটা কী ? মোদী মরালিটি বা নরেন্দ্র নৈতিকতা!’’ সুষমা স্বরাজ কী ভাবে ললিত মোদীকে ব্রিটিশ ভিসা পেতে সাহায্য করেছেন, কংগ্রেসের সুরে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়াচুরিও।
ঘটনা হল, এক দিকে যেমন ললিত-কাণ্ডে নতুন তথ্য ফাঁসে সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে। তেমনই ললিত মোদীও বিলেতে বসে ধারাবাহিক ট্যুইটের মাধ্যমে জলঘোলা করে চলেছেন। তাতে রাজনীতি, ক্রিকেট, বাণিজ্যিক স্বার্থ নিয়ে নানা কেচ্ছার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকী এ প্রশ্নও তুলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত হলে অরুণ জেটলি বা রাজীব শুক্লর বিরুদ্ধে কেন হবে না। এরই পাশাপাশি আজ বরুণ গাঁধী ও সনিয়া গাঁধী প্রসঙ্গেও টুইট করেছেন ললিত মোদী। তাঁর দাবি, কয়েক বছর আগে লন্ডনে এক বার তাঁর সঙ্গে বরুণের দেখা হয়েছিল। বরুণ তাঁকে বলেছিলেন, ইতালিতে সনিয়ার এক বোনের সঙ্গে দেখা করতে। এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘মওসিজি’কে ৬ কোটি ডলার দিলে সব মামলা মিটে যাবে।
এই ঘটনায় সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ করে কংগ্রেসকে এক হাত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকী ‘টু-জি, থ্রিজি, সিডব্লিউজি, জিজাজি’র পর এ বারে ‘মওসিজি’ (মাসী) যোগ হল বলেও কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু আক্রমণের তালিকায় এ ভাবে ‘মওসিজি’ যোগ করলে তো বরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগই মেনে নেওয়া হল! বিজেপির বক্তব্য, বরুণ নিজেই এর সাফাই দেবেন, দল তাঁর হয়ে সাফাই দেবে না। বরুণ অবশ্য জানিয়েছেন, ললিতের দাবি অসত্য। লন্ডনে দেখা হলেও এমন কোনও কথা তিনি ললিতকে বলেননি।
মোদীর এই ট্যুইট নিয়ে আজ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কংগ্রেসকেও। প্রশ্ন উঠেছে, ললিত মোদী সুষমা বা বসুন্ধরাকে নিয়ে কোনও ট্যুইট করলে সেটা ধ্রুব সত্য বলে মানছে কংগ্রেস, তা হলে বরুণের ব্যাপারটি তারা কেন গুরুত্ব দেবে না? জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এ সব বলে আসলে বড় মোদীর থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন ছোট মোদী। কিন্তু সুষমা-বসুন্ধরার ক্ষেত্রে ফারাক রয়েছে। ওঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নথি রয়েছে। ওঁরা সেগুলির সত্যতাও স্বীকার করছেন। কংগ্রেসের কারও বিরুদ্ধে এমন তথ্য বা নথি আছে কি? থাকলে ললিত মোদী সেটা দেখাক।’’
মজার ব্যাপার সুষমা-ললিত যোগের ব্যাপারটা সামনে আসায় আজ ঢোলপুরের প্রাসাদ থেকে কিছুটা দৃষ্টি সরেছে। তা ছাড়া, ঢোলপুর প্রাসাদের মালিকানা নিয়ে হইচই য়ে করায় কংগ্রেসের একাংশও ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, কংগ্রেসেও অনেক রাজা-মহারাজা রয়েছেন। দু’দিন বাদে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে কেঁচো খোঁড়া শুরু হলে কোন কেউটে বার হয় কে জানে? এই অবস্থায় আজ কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ঢোলপুরের প্রাসাদের মালিকানা কার, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আসল বিষয় হল ওই হোটেল সংস্থায় ললিত মোদীর বিনিয়োগ। তাতেই বসুন্ধরা-ললিত মোদী অশুভ আর্থিক আঁতাঁতটাই প্রমাণিত হয়।