Advertisement
E-Paper

বসুন্ধরা প্রশ্নে সঙ্ঘকে বোঝাচ্ছেন জেটলিরা, স্বস্তি ললিতের টুইটে

বসুন্ধরা-প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। ললিত মোদী বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজেকে সরানোর ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, অরুণ জেটলিদের আপত্তি থাকলেও একেবারে উল্টো মেরুতে মোহন ভাগবত-সহ সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০৩:৫০

বসুন্ধরা-প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

ললিত মোদী বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজেকে সরানোর ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, অরুণ জেটলিদের আপত্তি থাকলেও একেবারে উল্টো মেরুতে মোহন ভাগবত-সহ সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশেষ করে বসুন্ধরার ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবার মোটেই খুশি নয়। জেটলিরা অবশ্য সঙ্ঘ নেতৃত্বকে বোঝাচ্ছেন, বিরোধীদের দাবি মেনে এই মুহূর্তে বসুন্ধরাদের সরালে তার কী পরিণতি হবে। বাস্তবতার অঙ্কে সঙ্ঘ সেই যুক্তি আপাতত মেনে নিয়েছে।

এরই মধ্যে প্রিয়ঙ্কা ও রবার্ট বঢরার সঙ্গে লন্ডনে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে টুইটারে দাবি করে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেন ললিত মোদী। তার পরেও অবশ্য প্রাক্তন এই ক্রিকেট কর্তাকে ছাড় দিতে নারাজ নরেন্দ্র মোদী সরকার। উল্টে দলের নেত্রীদের বাঁচাতে ললিতকেই এ বারে কাঠগড়ায় তুলতে তৎপর হচ্ছে তারা।

কিন্তু সে সব তো পরের কথা! বসুন্ধরা-প্রশ্নে বিজেপি এখন নিজের ঘর সামাল দিতেই ব্যস্ত। আজ সকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন সরকার পক্ষের শীর্ষ নেতারা। এ দিন প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন অরুণ জেটলি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। রাতে প্রধানমন্ত্রী ফের অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। আগামিকাল দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক। সেখানে আসবেন বলে লন্ডন সফর বাতিল করেছেন— এত দিন বসুন্ধরার তরফে এ কথাই জানানো হচ্ছিল। শুক্রবার হঠাৎই শোনা যায়, বিতর্ক এড়াতে তাঁকে দিল্লিতে না-আসার পরামর্শ দিয়েছে দলের একটি অংশ। তারা মনে করছে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি এলে তাঁকে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়াতেই হবে। আর তখন নতুন বিতর্কের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

কিন্তু রাতে বসুন্ধরার ঘনিষ্ঠ শিবির থেকে জানানো হয়েছে, তিনি কাল দিল্লি আসছেন। কারণ, বিজেপি শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি বুঝিয়েছেন, এই বিতর্কের মাঝে বসুন্ধরা যদি দিল্লি এড়িয়ে যান, সেটা আরও খারাপ হবে। একই সঙ্গে বিজেপি সূত্রের খবর, আপাতত বসুন্ধরার ইস্তফার সম্ভাবনা নেই। এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠকের পরে এমন জল্পনা শুরু হয়। কিন্তু পরে তা-ও খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি সূত্র। তবে কাল বসুন্ধরার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এখনই কেন বসুন্ধরাকে সরাতে চাইছেন না মোদী-অমিত শাহেরা? গত কয়েক দিন ধরে এই প্রশ্নের জবাবে বিজেপি একটাই যুক্তি দিচ্ছে: এখন বসুন্ধরাকে সরালে বিরোধীরা আরও রক্তের স্বাদ পাবে। তখন তারা চাপ বাড়াবে সুষমা, স্মৃতি ইরানিদের সরানোর জন্য। কিন্তু ললিত মোদী-বিতর্কের সুযোগে সঙ্ঘের একটি অংশ চেয়েছিল, বসুন্ধরাকে সরানো হোক। সঙ্ঘের মনোভাব বুঝে বিজেপি নেতৃত্ব এখন মোহন ভাগবতদের বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাচ্ছেন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মোদী সরকারের এক বছরের মাথায় হস্তক্ষেপ করে নতুন সঙ্কট তৈরি করা সঙ্ঘের লক্ষ্য নয়। তাই আপাতত তারা এ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। সঙ্ঘের মুখপাত্র মনমোহন বৈদ্য আজ যা বলেছেন, তা সেই দূরত্ব বজায় রাখারই প্রতিফলন। মনমোহন বলেন, ‘‘বসুন্ধরা সম্পর্কে বিজেপি ও সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, সে ব্যাপারে তাদেরই প্রশ্ন করুন। সঙ্ঘকে এর মধ্যে জড়াবেন না।’’ অথচ সুষমা-বিতর্ক সামনে আসার পরে সঙ্ঘের নেতা ইন্দ্রেশ কুমার কিন্তু বিজেপি নেত্রীর সমর্থনে সওয়াল করেছিলেন। বৈদ্য এ দিন বলেন, ‘‘ইন্দ্রেশ সঙ্ঘের মুখপাত্র নন!’’

অস্বস্তির এই কাঁটার মধ্যেই আজ বিজেপিকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ললিত মোদীর একটি টুইট। লন্ডন থেকে গত কাল রাতে টুইটারে মোদী লেখেন, গত বছর বা তার আগের বছর বিলেতে এক রেস্তোরাঁয় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল প্রিয়ঙ্কা গাঁধী ও রবার্ট বঢড়ার। ললিতের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছে আমার নম্বর রয়েছে। আমাকে ফোন করতে পারতেন। কোনও ডিল আমি করতাম না। শুধু বলতাম, কোনও অপরাধ না করা সত্ত্বেও আমাকে কেমন হেনস্থা করা হচ্ছে!’’ সন্ধ্যায় প্রিয়ঙ্কার দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়, ললিত মোদীর সঙ্গে তাঁর বা রবার্টের কোনও বৈঠকই হয়নি। যদিও এই বিবৃতি আসার আগেই বিষয়টিকে লুফে নিয়ে আসরে নেমে পড়েন রাজস্থানের বিজেপি নেতারা। বিজেপির ছোট ও মাঝারি নেতারা বলতে শুরু করেন, ‘‘গাঁধী পরিবারের সঙ্গে ললিত মোদীর এত গভীর সম্পর্ক! যাঁকে অপরাধী বলা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে কেন এত ঘনিষ্ঠতা?’’ যদিও দলের শীর্ষ নেতারা কিন্তু শুধুমাত্র ললিত মোদীর টুইটের উপর ভরসা করে প্রিয়ঙ্কা ও রবার্টের সঙ্গে বৈঠকটি নিয়ে বেশি হইচই করতে চাইছেন না। কারণ দলেরই একটা অংশের বক্তব্য, নৈতিকতার দিক থেকে সনিয়াদের থেকে বেশি ‘অপরাধ’ করে বসে রয়েছেন বসুন্ধরা!

সম্ভবত এই কারণেই বিজেপির প্রথম সারির নেতারা সাংবাদিক বৈঠক করে বসুন্ধরাকে খুব বেশি আড়াল করতে সক্রিয় হচ্ছেন না। রাজস্থান বিজেপির রাজ্য নেতাদের দিয়েই বসুন্ধরাকে আড়াল করানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে। জয়পুর থেকে বসুন্ধরার ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, বসুন্ধরার সই সম্বলিত খসড়ার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। কোনও আদলাতে গ্রাহ্যও হয়নি সেটি। বসুন্ধরাও আদালতে কোনও সাক্ষ্য দেননি। ব্রিটিশ-আইনে গোপন রাখার কথা বলা ছিল বলেই ‘বন্ধু’ হিসেবে তা লিখেছিলেন বসুন্ধরা। এখন কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা-রবার্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ললিত মোদী।

বিজেপি সূত্রের দাবি, সংসদের বাদল অধিবেশনের আগেই ললিত মোদীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ললিত মোদীর বিরুদ্ধে এখন ‘ব্লু-কর্নার’ নোটিস রয়েছে। সেটি ‘রেড-কর্নার’ নোটিস করা হলে তবেই তাঁকে গ্রেফতার করে এ দেশে আনা যেতে পারে। বসুন্ধরার ছেলে দুষ্মন্তের সঙ্গে ললিতের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে বিজেপি নেতৃত্ব আগেই ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছেন। কিন্তু দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, দুষ্মন্তের ব্যবসায় ঢালা ওই টাকা ললিত কোথা থেকে পেলেন, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আর্থিক নয়ছয়ের মামলা করলেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘রেড-কর্নার’ নোটিস আনা যেতে পারে। সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই এই পর্বটি চুকিয়ে ফেলতে চাইছে বিজেপি সরকার। তাঁদের বক্তব্য, আজ প্রিয়ঙ্কা ইস্যুতে কংগ্রেসকে যেমন একটু হলেও ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়া গিয়েছে, তেমনই সংসদের অধিবেশনের আগে কংগ্রেসের মুখ বন্ধ করার জন্যও ললিত মোদীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

কংগ্রেস অবশ্য এত সহজে বিষয়টিকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ললিতের ট্যুইটারের প্রথম ধাক্কায় তারা অস্বস্তিতে পড়লেও দ্রুত তা সামাল দিয়ে বিজেপিকে নতুন করে বিঁধতে শুরু করেন। সকালেই প্রিয়ঙ্কা-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁয় দেখা হয়ে যাওয়ার মানে কী? রেস্তোরাঁয় যে কোনও লোকের সঙ্গে যে কারও দেখা হয়ে যেতে পারে! সেটাকে মিটিং বলা যায় নাকি! আসল কথা হল ললিত মোদীকে সামনে রেখে এখন নোংরা খেলায় নেমেছে বিজেপি! কখনও বড় মোদী ছোট মোদীর খেয়াল রাখছেন, তো কখনও ছোট মোদী বড় মোদীর!’’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, হলফনামায় ললিত মোদী নিজেই বলছেন, গাঁধী পরিবার তাঁর ও বসুন্ধরার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তিনি টুইটে লিখেছেন, সুযোগ পেলে তিনি বোঝাবেন যে তিনি অপরাধ করেননি। তা হলে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নটা ওঠে কী করে? কংগ্রেসের আর এক প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আবার বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা ও রবার্ট বঢরা সরকারে ছিলেন না। তাঁদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় দেখা হয়ে গেলে কী বড় ব্যাপার হল! ধন্য বিজেপি!’’ পাশাপাশি আজ ফের ললিত-বসুন্ধরার ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস।

দিল্লির পাশাপাশি রাজস্থানেও বসুন্ধরা প্রশ্নে চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস। রাজস্থান কংগ্রেসের নেতা সি পি জোশী শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘ললিত মোদীর স্ত্রী যে হাসপাতালে ছিলেন, সেই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিল রাজস্থান সরকার। তাতে জয়পুরে নামমাত্র মূল্যে ওই সংস্থাকে জমি দেওয়ার কথাই শুধু বলা হয়নি, তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এমন একতরফা চুক্তি নজিরবিহীন!’’ শুধু তাই নয়, ললিত মোদীর সঙ্গে বসুন্ধরার আর্থিক স্বার্থও যে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, খাতায়-কলমে তার দৃষ্টান্তও রয়েছে বলে দাবি জোশীর। গত বিধানসভা ভোটে বসুন্ধরা নির্বাচন কমিশনারের কাছে যে হলফনামা পেশ করেছিলেন, তাতেই লেখা রয়েছে, নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেলে তাঁর ৩২৮০টি

শেয়ার রয়েছে। জোশীর দাবি, এই হোটেলটি বসুন্ধরার ছেলের। বসুন্ধরার ছেলে তথা বিজেপি সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহ এবং তাঁর স্ত্রীর ওই সংস্থায় যথাক্রমে ৫ হাজার ও ৪৮৫০টি শেয়ার রয়েছে। ললিত ওই হোটেলে মোট ১১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এটাই উভয় পক্ষের লেনাদেনের অকাট্য প্রমাণ বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জোশীর কথায়, ‘‘এর পরেও বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী যখন বসুন্ধরাকে ইস্তফা দিতে বলছেন না, তখন বুঝতে হবে ছোট মোদীর সঙ্গে স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে তাঁরও! কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে যাঁরা ভাষণ দিতেন, আদতে তাঁদের সঙ্গেই যোগ রয়েছে কালো টাকার কারবারিদের!’’

Lalit Modi Priyanka Gandhi Robert Vadra London BJP NDA abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy