Advertisement
০২ মে ২০২৪
Narendra Modi

মাথাব্যথা জোট, মোদী বোঝালেন বাম-নামেই

ফের ‘কেরলে কুস্তি, ত্রিপুরায় দোস্তি’র প্রসঙ্গ তুলে  কংগ্রেসকেও ছাড়েননি মোদী। তাঁর বক্তব্য, এই রাজ্যে সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন।

A Photograph of Indian Prime Minister Narendra Modi in a vote campaign at Agartala

শেষ লগ্নের প্রচারে আগরতলায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

সন্দীপন চক্রবর্তী
আগরতলা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৬
Share: Save:

শহরে রোড-শো করতে আসছেন অমিত শাহ। তাঁর পরিক্রমার পথ ধরে রাস্তার ধারের বাড়ি, আবাসনে হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হল থার্মোকলের থালায় গাঁদা ফুলের পাপড়ি। যাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথায় পুষ্পবৃষ্টিতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে!

প্রচারের শেষ লগ্নে সমাবেশ করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মহিলাদের উপস্থিতিতে কোনও ফাঁক যাতে না থাকে, পদ্মফুল আঁকা শাড়িতে তাঁদের হাজির করার বন্দোবস্তে সেই আয়োজনও তৈরি!

একে তো দিল্লি থেকে মোদী-শাহেরা ঘন ঘন ছুটে আসছেন। তার পরেও সাংগঠনিক ভাবে বন্দোবস্তে কোনও ত্রুটি না রাখার চেষ্টা করছে ত্রিপুরার বিজেপি। শাসক হওয়ার কিছু সুবিধা তো আছেই। তবু বাইরের আয়োজনে কি ভিতরের উদ্বেগ ঢাকে? আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে সোমবার সেই উদ্বেগই স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন স্বয়ং মোদী!

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে বার বার এল বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতার প্রসঙ্গ। মোদীর কথায়, ‘‘নিজেদের স্বার্থে বাম ও কংগ্রেস যা খুশি করতে পারে। এদের সমর্থন করলে আপনাদের জীবন দুঃসহ হবে, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বরবাদ হবে। এদের থেকে দূরে থাকুন!’’ প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বাম আমলে দিল্লি থেকে সরকারি প্রকল্পের জন্য ১ টাকা দিলে ৮৫ পয়সাই নেতাদের পকেটে যেত। মানুষের উপরে জুলুম করা হত চাঁদা আদায়ের জন্য। গণতন্ত্র ছিল না। অন্য দলের ঝান্ডা লাগাতে গেলে ডান্ডা জুটত! পাঁচ বছর আগে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে মহিলা ও তরুণ প্রজন্ম ‘চাঁদাবাজি ও ঝান্ডাবাজি’র সরকারকে ‘লাল কার্ড’ দেখানোর পরে বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার উন্নয়ন ও সুশাসন এনেছে বলে দাবি করেছেন মোদী। কিন্তু একই সঙ্গে বামেরা সরকারে থাকার সময়ে কী করতে পারেনি, তার বিশদ অভিযোগ শুনে মনে হতে পারে মোদী যেন বিরোধী দলের বক্তা!

ফের ‘কেরলে কুস্তি, ত্রিপুরায় দোস্তি’র প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকেও ছাড়েননি মোদী। তাঁর বক্তব্য, এই রাজ্যে সিপিএমের হাতে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। তবু ‘ক্ষমতালোভী’ কংগ্রেস নেতারা দলের কর্মীদের কথা না ভেবে সিপিএমের সঙ্গে জোট করেছেন!

একই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মুখেও জোটকে ঠেকানোর কথা! মঞ্চেই বিপ্লব, জিষ্ণু, রাজীবদের ডেকে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন মোদী।

এই ছবি বলে দিচ্ছে, ত্রিপুরায় এ বারের বাম-কংগ্রেস সমঝোতাকে ‘অশুভ আঁতাঁত’ বলে কটাক্ষ করলেও এই জোটই গেরুয়া শিবিরকে উদ্বেগে রেখেছে। ভোটমুখী রাজ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে লোকসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা ও মুখ্যমন্ত্রী মানিকের বিধানসভা উপনির্বাচনে ভোট দিতে বাধা, লুটপাটের অভিযোগে ক্ষোভ আছে জনমনে। বিরোধী দলের উপরে আক্রমণের অভিযোগও ভূরি ভূরি। পাঁচ বছর আগে দেদার বিলি করা প্রতিশ্রুতির খতিয়ান নিতে বসলে হিসেব মেলাতে পারছেন না অনেকেই। এই অসন্তোষকে শাসকের বিরুদ্ধে সংহত করার লক্ষ্যেই অতীতের তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে আসন সমঝোতা করেছে বাম ও কংগ্রেস। আর সেখানেই মোদী-মানিকদের মাথাব্যথা।

নিজের কেন্দ্র টাউন বড়দোয়ালিতে বাড়ি বাড়ি ঘোরার ফাঁকে দন্ত চিকিৎসার অধ্যাপক, মুখ্যমন্ত্রী মানিক দাবি করছেন, ‘‘নাড়ি টিপলে যেমন মানুষের শরীর কেমন বোঝা যায়, তেমনই জনতার নাড়ি বলছে বিজেপিরই বিপুল প্রত্যাবর্তন হবে!’’

মুখে বলছেন, চিন্তা নেই। কিন্তু উপনির্বাচনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে মুখ্যমন্ত্রীর ফি-রোজ দুয়ারে দুয়ারে ঘোরাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাঁদের নাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ত্রিপুরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Tripura Bypoll vote campaign BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE