বিধানসভা ভোটের ঘোষণা হতে বেশি দেরি নেই। এ বার আগে থেকে শুরু করেও বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধনে’ আসন-রফার গেরো কাটছে না বিহারে! মহাজোটের বড় দুই শরিক আরজেডি এবং কংগ্রেসের টানাপড়েনে ক্ষোভ বাড়ছে বাম শিবিরে। সূত্রের খবর, বড় দুই দল নমনীয়তা না-দেখালে কিছু আসনে আগের মতো ফের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের কথা ভাবতে শুরু করেছেন বাম নেতৃত্ব।
এরই মধ্যে বিহারের বর্তমান বিরোধী দলনেতা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব চলেছেন তাঁর নিজের ‘আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠা করার পথেই! লোকসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করার পরে তেজস্বী বেরিয়েছিলেন ‘বিহার অধিকার যাত্রা’য়। রাহুলের যাত্রার মূল কথাই যেমন ছিল ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ, তেজস্বী বিহারে কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলার মতো জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে তাঁর ওই যাত্রায় প্রচার চালিয়েছেন। ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ যায়নি, এমন ১১টি জেলায় ঘুরেছেন তিনি। জেহনাবাদ থেকে শুরু করে বৈশালী জেলায় শেষ হয়েছে তাঁর যাত্রা। এবং সেই কর্মসূচির শেষে তেজস্বী আবার বলেছেন, ‘‘বিজেপির কাছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নেই। তারা জেডি (ইউ)-এর নেতাকেই (নীতীশ কুমার) সামনে রাখতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের অবস্থা তো সে রকম নয়। আমরা কেন মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মুখ সামনে রাখব না?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পদ-প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে তবেই বিরোধী জোট নির্বাচনের ময়দানে নামবে।’’
রাহুলের যাত্রা চলাকালীনই নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন তেজস্বী। কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও তাঁর ওই দাবিতে সিলমোহর দেননি। মহাজোটের শরিক বামপন্থী দলগুলিও মুখ্যমন্ত্রী-মুখ নিয়ে টানাপড়েন চালিয়ে ভোটের আগে এনডিএ-কে সুবিধা করে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এমতাবস্থায় ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ-প্রার্থীর প্রসঙ্গ এনে তেজস্বী এক দিকে নিজের দাবি জোরালো করছেন, পাশাপাশি জোট-শরিকদের উপরেও চাপ তৈরি করছেন।
তেজস্বীর দলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন-রফার সূত্র এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পাঁচ বছর আগে আরজেডি ১৪৪ এবং কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়েছিল। সূত্রের খবর, কংগ্রেস এ বার প্রথমে ৫৫টি আসনের কথা বললেও রাহুলের যাত্রার ‘সাফল্যে’র পরে অন্তত ৭৬টি আসন দাবি করছে। তার মধ্যে আরজেডি-র জেতা কিছু আসনও আছে। আরজেডি-ও তাদের দাবি ছাড়তে নারাজ। এই টানাটানির মীমাংসা না-হওয়ায় জোটে অন্যান্য দলের ভাগে কী জুটবে, এখনও পরিষ্কার হচ্ছে না।
বিহারে ভোটের অনেক আগে থেকেই সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এ বার ৪০টি, সিপিআই ২৪ এবং সিপিএম ১১টি আসন চেয়েছে। গত বার তিন বাম দলকে মোট ২৯টি আসন ছাড়া হয়েছিল, তার মধ্যে লিবারশেন লড়েছিল ১৯টিতে। বাম সূত্রের খবর, এ বার লিবারেশনের তরফে সূত্র দেওয়া হয়েছে, কংগ্রেস তাদের দাবি থেকে ২০% এবং আরজেডি ১৫% আসন ছাড়ুক। তা হলে বাম দলগুলির পাশাপাশি বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি) এবং পশুপতি কুমার পারসদের রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টির (আরএলজেপি) মতো দলের জন্যও জোটে সংস্থান করা যাবে।
সিপিএমের লালন চৌধরি, সিপিআইয়ের রামনরেশ পাণ্ডেদের বক্তব্য, ‘‘এনডিএ-কে হারানো জরুরি। এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে হয়। কিন্তু জোটের প্রধান দুই দল বাকিদের জায়গা দেওয়ার কথা না-ভাবলে বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তা ভাবতে হবে!’’ তাঁদের ইঙ্গিত কিছু আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের দিকে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়ে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও দাবি করেছেন, পরিস্থিতির বিচারে আগের বারের ১৯-এর চেয়ে বেশি আসনে তাঁদের লড়তে দেওয়া উচিত। তাঁর আশা, বড় দলগুলো যুক্তিপূর্ণ ভাবে নিজেদের দাবি কিছুটা কমালে সুষ্ঠু মীমাংসা সম্ভব।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)