কাশ্মীর উপত্যকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সীমান্ত ঘেঁষে চলছে সংঘর্ষ। ও পার থেকে ধেয়ে আসছে একের পর এক গোলাগুলি। পাল্টা জবাব যাচ্ছে এ পার থেকেও। হাতে বন্দুক নিয়ে যে জওয়ান নিরন্তর শত্রু দেশের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন, নিজের বাড়ি বা নিজের পরিবারের কথা ভাবার সময় তাঁর কোথায়! দেশের অন্য প্রান্তে হয়তো সেই সময়ে আদালতে তাঁর পরিবারের কোনও মামলা চলছে। গৃহকর্তার অনুপস্থিতিতে হয়তো মামলা চলে যাচ্ছে পরিবারের হাতের বাইরে! অথবা অকারণে হয়তো মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই ধরনের অনিশ্চয়তা দূর করতে সেনা জওয়ানের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এল আদালত। চালু হল নতুন প্রকল্প।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত শনিবার জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে একটি কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি ‘নালসা বীর পরিবার সহায়তা যোজনা ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং জম্মু ও কাশ্মীরের লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ। নালসার পুরো কথা ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি। তার এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান বিচারপতি কান্ত। নতুন এই প্রকল্পের সার কথা— ‘‘তোমরা সীমান্তে দেশের সেবা করো, আমরা তোমাদের পরিবারের খেয়াল রাখব।’’
আরও পড়ুন:
সেনা জওয়ানদের এই প্রকল্পের মূলে কিন্তু রয়েছে অপারেশন সিঁদুর। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের অভিযান চালিয়েছিল ভারত। ২৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। তার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের টানা চার দিন সংঘর্ষ চলেছে। সূত্রের খবর, ওই সময়ে সেনা জওয়ানদের আত্মত্যাগ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিচারপতি কান্ত। প্রাণ বাজি রেখে যাঁরা সীমান্তে লড়ছেন, কী ভাবে এই বিচারব্যবস্থা তাঁদের সাহায্য করতে পারে, সেই উপায় ভাবছিলেন তিনি। সেখান থেকেই নতুন প্রকল্পের জন্ম। ব্যক্তিগত আইনি সঙ্কটে যাতে এই সমস্ত জওয়ান পিছিয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করবে আদালত।
যে জওয়ানেরা দুর্গম এলাকায় কর্মরত, অনেক সময়েই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন তাঁরা যোগাযোগ রাখতে পারেন না। তাঁদের পরিবার কোনও আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়লে গৃহকর্তা হিসাবে তাঁরা পাশে থাকতে পারেন না। ঘরোয়া কোনও সমস্যা হোক কিংবা পারিবারিক সম্পত্তি বা জমি সংক্রান্ত মামলা— সব ক্ষেত্রে এ বার থেকে জওয়ানদের সাহায্য করবে নালসা। আদালতে উপস্থিত হতে না পারলেও যাতে তাঁদের বক্তব্য সঠিক ভাবে উপস্থাপিত হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।
বিচারব্যবস্থার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), সেন্ট্রাল রিজ়ার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)-এর সদস্যেরাও।