Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

‘বিপদে পড়েছি, বাইরে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে সুড়ঙ্গে জলের পাইপ চেপে ধরি’, বলছেন ওড়িশার ‘নায়ক’

আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে মোবাইল থাকলেও সুড়ঙ্গের ভিতরে নেটওয়ার্ক না থাকায় সেগুলি কাজ করছিল না। অগত্যা বিপদে পড়ার বার্তা দিতে অভিনব উপায় বার করেন শ্রমিকেরা।

Life in Uttarkashi tunnel, how 41 men tried to convey their message from tunnel to outside

সুড়ঙ্গ-মুক্ত হওয়ার পর শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
দেহরাদূন শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০৩
Share: Save:

উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গ থেকে ৪১ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা গিয়েছে। এ বার কী কারণে এই বিপর্যয় ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে প্রশাসন। ধীরে ধীরে নিজেদের বন্দিদশার নানা অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে আনছেন ওই ৪১ জনও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সুড়ঙ্গের ভিতর ১৬ দিনের জীবনযুদ্ধে ৪১ জনের প্রত্যেকের কোনও না কোনও ভূমিকা ছিল। যেমন ওড়িশার বিশ্বেশ্বর নায়ক। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই সুড়ঙ্গের ভিতরে যে ৪১ জন বিপদে পড়েছেন, সেই বার্তা বাইরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

প্রত্যেকের কাছে মোবাইল থাকলেও নেটওয়ার্ক না থাকায় সেগুলি কার্যত কাঠের পুতুল হয়ে গিয়েছিল। কাজ করেনি সঙ্গে থাকা ওয়াকিটকিও। অগত্যা সুড়ঙ্গের বাইরে থাকা ইঞ্জিনিয়ারদের বার্তা পাঠাতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জলের পাইপ চেপে ধরেন বিশ্বেশ্বর। সুড়ঙ্গের ভিতরে শ্রমিকেরা যে বিপদে পড়েছেন, সেই বার্তা পৌঁছে যায় বাইরে। আগেই নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গটির ভিতর ৩ এবং ৪ ইঞ্চি ব্যাসের দু’টি পাইপ ঢোকানো ছিল। ভিতরে থাকা মেশিনগুলিকে ঠান্ডা করতে বাইরে থেকে জলের জোগান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন ছিল। পাইপগুলির মাধ্যমে সেই কাজই করা হত। বিপদে পড়েছেন বুঝেই বিশ্বেশ্বর দু’টি পাইপ ৫ মিনিট অন্তর চেপে ধরতে থাকেন। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জলের জোগান কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই বাইরে থাকা ইঞ্জিনিয়ারের বুঝতে পারেন, সুড়ঙ্গের ভিতরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।

ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বিশ্বেশ্বর বলেন, “১২ নভেম্বর সুড়ঙ্গের ভিতর কাজ করছিলাম। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ হঠাৎ কিছু ধসে পড়ার আওয়াজ পাই। প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। সকাল ৮টায় আবার আওয়াজ এবং ভূমিধস। হঠাৎ দেখলাম সামনে ৭০ মিটারের ধ্বংসস্তূপ। আর পিছনে আমরা ৪১ জন।” বাইরে সঙ্কেত পাঠানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন বুঝলাম যে, প্রচলিত কোনও উপায়ে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে না, তখন বুদ্ধি করে জলের পাইপগুলিকে ৫ মিনিট অন্তর চেপে ধরতে থাকলাম।” পরে অক্সিজেন, খাবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভিতরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। সকলেই সুস্থ রয়েছেন। তবে দীর্ঘ দিন সুড়ঙ্গে বন্দি থাকার কারণে তাঁদের মনের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী শ্রমিকদের জন্য বেশ কিছু ঘোষণা করেছেন। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা প্রত্যেক শ্রমিককে এক লক্ষ টাকা দেবে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। পাশাপাশি তাঁরা ১৫ থেকে ২০ দিন ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন।

সুড়ঙ্গে যত দিন আটকে ছিলেন শ্রমিকেরা, রোজ তাঁদের পাঁচ ঘণ্টা করে কাউন্সেলিং করা হত। সুড়ঙ্গের বাইরে থেকে চলত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার পরেও তাঁদের মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে কিছু দিন সময় কাটানো প্রয়োজন। আগামী কিছু দিন সব সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের থাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarkashi Tunnel Collapse Uttarakhand tunnel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE