মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
বিহার ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘিরে বিতর্কের মাঝে রবিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। সেখানে বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও উঠে আসে। পশ্চিমবঙ্গে কবে থেকে এসআইআর শুরু হবে, তা জানতে চাওয়া হয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে। ওই সময় সাংবাদিক বৈঠকে অপর দুই নির্বাচন কমিশনার সুখবির সিংহ সাঁধু এবং বিবেক জোশীও উপস্থিত ছিলেন। জ্ঞানেশ জানান, তাঁরা তিন জনে মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। পশ্চিমবঙ্গে বা অন্য রাজ্যে কবে থেকে এসআইআর শুরু হবে, তা পরবর্তী কালে সঠিক সময়ে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রমাণ ছাড়া কোনও ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তিনি আশ্বস্ত করেন, প্রত্যেক ভোটারের পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কমিশন।
বিহারের খসড়া তালিকায় প্রায় ৮০ হাজার ভোটারের বাড়ির ঠিকানা ‘শূন্য’ রয়েছে বলে অভিযোগ। তবে কমিশনের ব্যাখ্যা, বাড়ির ঠিকানা ‘শূন্য’ থাকা মানে তিনি ভুয়ো ভোটার নন। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির নম্বর থাকে না। সেগুলিই ‘শূন্য’ হিসাবে রয়েছে।
৬ মাসের মধ্যে এত সংখ্যক মৃত ভোটার কোথা থেকে এল? তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় সাংবাদিক বৈঠকে। জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, গত ২০ বছর ধরে যখন ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে, তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘এমুনারেশন ফর্ম’ দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে কারও মৃত্যুর তথ্য পরিবারের সদস্যেরা না-জানালে বিএলওদের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। এই মৃত ভোটারের তালিকা শুধু গত ৬ মাসের নয়। গত ২০ বছরে যে মৃত ভোটারদের তথ্য কমিশনের নথিতে ছিল না, তা-ও রয়েছে। ‘এমুনারেশন ফর্ম’-এর মাধ্যমে তা পাওয়া যাচ্ছে।
কমিশনের বক্তব্য, এর আগে অভিযোগ উঠেছিল একই এপিক নম্বরে একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ডুপ্লিকেট এপিক দুই ভাবে হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের এক বাসিন্দা এবং হরিয়ানার এক বাসিন্দার একই এপিক নম্বর ছিল। গত মার্চে এই বিষয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে কমিশন সেই সমস্যা দেশব্যাপী সমাধান করেছে। প্রায় তিন লক্ষ লোকের এপিক নম্বর একই ছিল। সেটি বদলে দেওয়া হয়েছে, যাতে একই এপিক নম্বরে একাধিক জন না থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও ঘটনা ঘটে, যখন একই ব্যক্তির একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম থাকছে। তাঁদের এপিক নম্বরও আলাদা। কারণ, অনেকে অন্যত্র স্থায়ী ভাবে বাস করছেন। কিন্তু আগের ঠিকানার নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করছেন না।”
মুখ্য নির্বাচন কমিশমনার বলেন, “বিহারের ভোটার তালিকায় কত জন নেপালি কত জন বাংলাদেশি রয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, সংবিধান অনুসারে শুধুমাত্র ভারতের নাগরিকেরাই বিধায়ক এবং সাংসদ বাছতে পারেন। অন্যদের সেই অধিকার নেই। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যযাচাই করা হবে। যাঁরা আমাদের দেশের নাগরিক নন, তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না।”
পশ্চিমবঙ্গে কবে এসআইআর শুরু হচ্ছে? তা নিয়েও রবিবার প্রশ্ন করা হয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে বা অন্য রাজ্যে কবে এসআইআর হবে, তা পরবর্তী কালে সঠিক সময়ে ঘোষণা করা হবে।
কেন এসআইআর-এর প্রয়োজন হল? এসআইআর এবং অন্য ভোটার তালিকা সংশোধনীর ফারাক কী? মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিজের এই ব্যাখ্যা দেন। তাঁর কথায়, “প্রতি বছর যে সংশোধন হয়, তা অনেকটা ‘র্যান্ডম’ উপায়ে করা হয়। এখনও পর্যন্ত দেশে ১০ বারেরও বেশি এসআইআর হয়েছে। ভোটার তালিকার সবচেয়ে ব্যাপক শুদ্ধিকরণের জন্য এই এসআইআর প্রয়োজন।”
ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়াও ব্যাখ্যা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ। তাঁর ব্যাখ্যায়, প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলির বিএলএ-রা মিলে একটি খসড়া তৈরি করেন। তার পরে সেটির ত্রুটি সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়। এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য ভোটার এবং রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই আবেদনগুলি এসে গেলে, সংশ্লিষ্ট এলাকার এসডিএম তা যাচাই করে দেখেন। খসড়া তালিকা এবং চূড়ান্ত তালিকা— উভয়ই রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়। এর পরেও যদি কোনও ত্রুটি থেকে যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলাশাসকের কাছে আবেদন করা যায়। সেখানেও কিছু না-হলে ওই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে আবেদন জানানো যেতে পারে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে ভারতের ভোটারদের নিশানা করা হচ্ছে। রাজনীতি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিতে চায়, কমিশন কোনও ভেদাভেদ না করে নির্ভয় হয়ে ধনী-দরিদ্র, প্রবীণ, মহিলা, যুবা, প্রত্যেক শ্রেণি, প্রত্যেক ধর্মের ভোটারদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।”
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “খসড়া তালিকায় ত্রুটি সংশোধনের জন্য এখনও ১৫ দিন সময় আছে। প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবেদন জানান। নির্বাচন কমিশনের দরজা প্রত্যেকের জন্য সমান ভাবে খোলা।”
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, নিজের সাংবিধানিক কর্তব্য থেকে পিছু হটবে না নির্বাচন কমিশন। গত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলি ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি তুলে আসছিল। কমিশন বিহার থেকে তার-ই শুরু করেছে। যখন খসড়া তালিকা করা হচ্ছিল, তখন প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও (বিএলএ) যুক্ত ছিলেন।
এই বিতর্কের আবহে রবিবার দুপুর ৩টের সময় দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বসলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। এ ছাড়া দুই নির্বাচন কমিশনার সুখবির সিংহ সাঁধু এবং বিবেক জোশীও রয়েছেন সাংবাদিক বৈঠকে।
ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কের আবহে শনিবারই রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের দাবি, সঠিক সময়ে ভোটার তালিকা ভাল করে খতিয়ে দেখত না বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বুথ পর্যায়ের আধিকারিকেরা। সঠিক সময়ে কোনও রাজনৈতিক দলই ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি তুলত না।
এসআইআর নিয়ে এই বিতর্কের আবহে রবিবার থেকে বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। ১৬ দিন, ২০টির বেশি জেলা ঘুরে ১৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ১ সেপ্টেম্বর পটনা ময়দানে এই যাত্রা শেষ হবে। ঘটনাচক্রে, রাহুলের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরুর দিনই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠেক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন।
সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে জানিয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাঁদের দাবি আধার কার্ডের কপি-সহ জমা দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন সব বুথ লেভেল অফিসার ও জেলা নির্বাচন আধিকারিকের কাছ থেকে কার্যকর রিপোর্ট সংগ্রহ করে আদালতে জমা দিতে হবে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, খসড়া তালিকা থেকে যে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের নাম জেলা অনুযায়ী জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। তথ্য যেন বুথ-ভিত্তিক হয়, যাতে ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্রের (এপিক) নম্বর দিয়ে খোঁজা যায়। তালিকায় নাম বাদ পড়ার কারণও উল্লেখ করতে হবে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
সামনেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় এবং বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে খসড়া তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। তা নিয়েই বিতর্ক। এই খসড়া তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রশ্ন উঠেছে সুপ্রিম কোর্টেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy