লোকসভায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। — ফাইল চিত্র।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের অভিযোগ, ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই এসআইআর করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন ভোটারদের কী ভাবে তালিকায় যুক্ত করা হবে, তা নিয়ে এসআইআরে কেন কোনও আলোকপাত করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন কল্যাণের। তিনি বলেন, “ভোটারদেরই যখন রাখছেন না, তা হলে ভোট করিয়ে কী হবে। ভোটারেরাই সরকার ঠিক করেন। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে মোদী সরকার ঠিক করে, তাদের ভোটার কারা থাকবে।”
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বলেন, “নির্বাচন কমিশন সব সময় বলে যাচ্ছে, তাদের কাছে তদারকির ক্ষমতা আছে। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু তদারকির ক্ষমতা কখনোই সংসদের তৈরি করা কোনও আইনের ক্ষমতার চেয়ে বেশি হতে পারে না।”
বিএলও-দের উপর কাজের চাপের অভিযোগে সংসদে সরব হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনিও বলেন, “এসআইআর কাজ শুরু হওয়ার পরে বিএলও-দের উপর অমানবিক কাজের চাপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে ২০ জন আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটও রয়েছে। পাঁচ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ১৯ জন মারা গিয়েছেন। তিন জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এর জন্য দায়ী কে! নির্বাচন কমিশন?”
উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। কল্যাণ বলেন, “এটি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নয়। অখিলেশও একটু আগেই বললেন। সেখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেটি বিজেপি শাসিত রাজ্য। মধ্যপ্রদেশে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিও বিজেপি শাসিত রাজ্য। গুজরাতে ৬ জন, রাজস্থানে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেউ তাঁদের কাছে গিয়েছেন? বিজেপির কোনও সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন খোঁজ নিতে যে কেন মৃত্যু হয়েছে? আমরা গিয়েছিলাম। সিপিএম শাসিত কেরলে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ুতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।”
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও লোকসভায় প্রশ্ন তুললেন এসআইআর নিয়ে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘কাজের চাপে’ বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএলও-দের মৃত্যুর প্রসঙ্গ লোকসভায় তুলে ধরেন তিনি।এসপি সাংসদের বক্তব্য, ইভিএম যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে অতীতে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। তাই ব্যালট পেপারে নির্বাচন করানোর দাবি তোলেন তিনি। ব্যালট পেপারে ভোটের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিও।
মণীশ তিওয়ারির বক্তৃতার পরেই লোকসভায় বক্তৃতা করেন বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জয়সওয়াল। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভোট চুরি’ বিতর্কে কেন্দ্রকে বার বার নিশানা করেছে কংগ্রেস। এ বার সেই অস্ত্রকে কংগ্রেসকে নিশানার চেষ্টা করেন বিজেপি সাংসদ। সঞ্জয় বলেন, “প্রথম ভোট চুরি হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। তখন কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি সর্দার পটেলের সঙ্গে ছিল। কিন্তু নেহরুকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৭৫ সালে যখন ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, তখনও ভোট চুরি হয়েছে।”
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ের জন্য বর্তমানে তিন সদস্যের একটি প্যানেল রয়েছে। ওই প্যানেলে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা এবং দেশের প্রধান বিচারপতিকেও যুক্ত করার প্রস্তাব দেন মণীশ। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাজ নিরপেক্ষ আম্পায়ারের মতো হওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন বিরোধীরা এবং সাধারণ জনতাকে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে।”
এসআইআর সংস্কারের কাজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোনও আইনি অধিকার নেই। লোকসভায় এমনটাই দাবি করলেন মণীশ তিওয়ারি। তিনি আরও বলেন, “ভোটদানের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছরে করে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী সংস্কার করেছিলেন রাজীব গান্ধী।”
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার কিছু পরে লোকসভায় এসআইআর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রারম্ভিক ভাবে আলোচনায় বক্তৃতা রাখছেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি।
লোকসভায় এসআইআর নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে কংগ্রেস সাংসদ উজ্জ্বল রমন বলেন, “আলোচনার সময় আমরা ইতিবাচক কিছু পরামর্শ দেব। নির্বাচন কমিশনের উপর যাতে সাধারণ মানুষের আস্থা বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করা উচিত।”
সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “আজ, লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। রাজ্যসভায়, বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দলের সাংসদেরাও নিজেদের বক্তব্য জানাবেন। যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে তা দূর করার সুযোগ পাবে সরকারও।” তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রের উপরে ভরসা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। তাই কেউ যাতে মিথ্যা ব্যাখ্যার দ্বারা বিভ্রান্ত না হন, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই বিতর্কে আমারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরার সুযোগ পাব।”
এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিরোধী শাসিত একাধিক রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছে। সেই মামলাগুলি এখনও বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সংসদের আলোচনায় কী কী বিষয় উঠে আসে, তা নিয়ে কৌতূহল বৃদ্ধি পেয়েছে জনমানসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy