Advertisement
E-Paper

শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক ধোয়ারবন্দে

মন্ত্রী-বিধায়ক ছিলেন না তিনি। পঞ্চায়েত, পুরসভার সদস্যও নন। বা বড় শিল্পপতি, সরকারি আমলা। এসইউসিআই করতেন, কিন্তু জেলা সম্পাদক হননি কখনও। অথচ হায়দরাবাদ থেকে আগরতলা হয়ে তুলসী মিশ্রের মৃতদেহ আজ সকালে ধোয়ারবন্দে পৌঁছলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শোকের ছায়া নামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৪

মন্ত্রী-বিধায়ক ছিলেন না তিনি। পঞ্চায়েত, পুরসভার সদস্যও নন। বা বড় শিল্পপতি, সরকারি আমলা। এসইউসিআই করতেন, কিন্তু জেলা সম্পাদক হননি কখনও। অথচ হায়দরাবাদ থেকে আগরতলা হয়ে তুলসী মিশ্রের মৃতদেহ আজ সকালে ধোয়ারবন্দে পৌঁছলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শোকের ছায়া নামে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ যান তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে।

লিভার ও কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাগবাহার বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুলসী মিশ্র। বছর তিনেক আগে স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এ দিন প্রাক্তন সহকর্মীদের দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হয় স্কুলপ্রাঙ্গণে। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকরা চোখের জলে চিরবিদায় জানান তাঁদের ‘তুলসীস্যার’কে। চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি সর্বশিক্ষা মিশনের ওই অঞ্চলের সিআরসি প্রদ্যুৎকুমার বর্ধন। কাছাকাছি সমস্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা রবিবারও উপস্থিত হয়েছিলেন বাগবাহারে।

তাঁরা স্মরণ করেন— সরকারের মঞ্জুরিতে মিড-ডে মিল খাওয়াতে যেখানে অন্যরা হিমশিম খান, তখন তুলসীবাবু পরিচালন সমিতির সভা ডেকে উদ্বৃত্ত টাকায় কী করা যায়, তা জানতে চাইতেন। এক বার সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের মাংস-ভাত খাইয়ে দিলেন।

শুধু স্কুল নয়, গোটা এলাকায় তুলসীবাবু জনপ্রিয় ছিলেন বনভোজনের জন্য। লাগাতার ২৪ বছর তিনি ধোয়ারবন্দ অঞ্চলের প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এক দিনের জন্য বেরিয়ে পড়তেন। এক বার নিয়ে যান বিমানবন্দরে, আরেকবার বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝে কোথাও ভুরিভোজ। পরে এক দিন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হতো এ বারের ‘বনভোজন’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা।

অবসরের পর নিঃসন্তান তুলসীবাবু বাড়িতে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলেছিলেন ফ্রি কোচিং সেন্টার, আর্ট স্কুল ও যোগব্যায়াম কেন্দ্র। নাম দেন ‘ভোরের পাখি’।

এসইউসিআই জেলা সম্পাদক শ্যামদেও কুর্মি জানিয়েছেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর এককালীন ১৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তুলসীবাবু। একটি টাকাও নেননি। পুরোটা দান করেন দলীয় তহবিলে।

তাঁর সুবাদেই বৃহত্তর ধোয়ারবন্দের প্রায় প্রতিটি মানুষ ক্ষুদিরামের বিপ্লবের কথা জানেন, জানেন শরৎ সাহিত্যও। প্রতি বছর এই দুই মনীষীকে নিয়ে এলাকায় অনুষ্ঠান করতেন তিনি। রাস্তার দাবিতে আন্দোলন, কি ভাড়াবৃদ্ধির প্রতিবাদ— তুলসী মিশ্র সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মৃত্যুতেই অবশ্য তাঁর জনসেবা থেমে যায়নি। এর পরও যাতে জনতার কাজে লাগা যায়, সে কথা ভেবে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহ দানের অঙ্গীকার করে যান। কিন্তু হায়দরাবাদে এক বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে যখন বুঝে যান, সুস্থ হয়ে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তখন সকলের অজান্তে ওই হাসপাতালে মৃতদেহ দানের চুক্তিপত্রে সই করে আসেন। প্রশান্ত ভট্টাচার্য নামে এক দলীয় কর্মী তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ফিরে জানান, মৃতদেহ আনতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তুলসীবাবুর সাক্ষর দেখান। প্রশান্তবাবু বিস্মিত, মৃতপ্রায় অবস্থায় তিনি কখন কী করে সই করে গেলেন! হায়দরাবাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য শিলচর মেডিক্যালে দানের কথা শুনে মৃতদেহ দিয়ে দেন।

মৃতদেহ গ্রহণ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘‘স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের খুব কাজে আসবে তাঁর এই দান।’’

Last Tribute Funeral Dhoar Bandh Silchar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy