ছবি: পিটিআই।
কখনও বসে, কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও মঞ্চে হেঁটে, পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে— দলের ইস্তাহার প্রকাশের সময় রাহুল গাঁধী আজ ছিলেন ঝাঁঝালো। নরেন্দ্র মোদীর হিন্দু আর দেশভক্তির তাসকে বিঁধছেন বেকারত্ব, কৃষিসঙ্কটের মতো মৌলিক সমস্যাগুলিকে মেলে ধরে।
তড়িঘড়ি বিজেপি দফতরে ছুটে এলেন সরকারে ‘মোদীর সেনাপতি’ অরুণ জেটলি। রাহুলের ইস্তাহারকে ঢাল করেই প্রচারকে ফের দেশভক্তির দিকে ঘোরাতে চাইলেন। বললেন, ‘‘এ তো বিপজ্জনক ইস্তাহার। একে তো রূপায়ণ সম্ভব নয়। তার উপর ‘টুকড়ে-টুকড়ে’ গোষ্ঠীর ছাপ স্পষ্ট। নেহরু-গাঁধীরা অতীতে যে ঐতিহাসিক ভুল করেছিলেন, কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্বকে আর সেই পাপ করতে দেওয়া হবে না।’’
বলেই জেটলি খুলে বসলেন ইস্তাহারের ৩৫ নম্বর পাতা। যেখানে লেখা আছে— রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তুলে দেওয়া হবে। মানহানি শুধুমাত্র দেওয়ানি অপরাধ থাকবে। বিচার ছাড়াই পুলিশের আটক করার ক্ষমতার আইন তুলে দেওয়া হবে। থাকবে না অত্যাচার প্রতিরোধ আইন। আফস্পা বা সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন সংশোধন করা হবে।
জেটলির অভিযোগ, কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব জিহাদি, মাওবাদীদের মদত দিচ্ছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন তুলে দেওয়ার কথা বলে। মহিলাদের প্রতি ‘এত দরদ’ দেখিয়েও জামিনকে স্বাভাবিক করতে ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করতে চাইছে। তা হলে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করলেও তা লঘু হয়ে যাবে। নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা হলে সরকারের আগাম অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে ‘আফস্পা’য়। সেই ব্যবস্থাটিই কংগ্রেস তুলে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করে তাঁর দাবি, ‘‘সেনার উপস্থিতি কমানোর অর্থ পাথর মেরেও কেউ রেহাই পেয়ে যাবে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে নিরন্তর আলোচনার কথাও বলা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে একটি শব্দও নেই। এ কেমন ধর্মনিরপেক্ষ দল।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অমিত শাহ আজ কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রসঙ্গে বলেন, এটি ‘একগুচ্ছ মিথ্যা’ এবং দেশের সেনাদের প্রতি অসম্মান। ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল এবং আফস্পা আইন পুনর্বিবেচনার কথা ইস্তাহারে বলেছে কংগ্রেস। অমিতের অভিযোগ, এতে সেনাবাহিনীর মনোবলে আঘাত আসবে এবং জঙ্গিদেরই বাড়বাড়ন্ত হবে। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে ২০১৫ সালে ত্রিপুরা থেকে আফস্পা তোলা হয়েছিল কেন? এ দিনই অরুণাচলের তিনটি জেলা থেকে আফস্পা তোলা হল কেন?’’
কংগ্রেসের বক্তব্য, ইংরেজের জমানায় তৈরি রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীদের জেলে পাঠানো হত। নরেন্দ্র মোদী জমানাতেও এই আইনের দেদার অপব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণেই ইস্তাহারে রক্ষাকবচ রাখা হয়েছে। এক, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হবে। একটি সংস্থার হাতে যাবতীয় সংবাদমাধ্যনের মালিকানা চলে যাওয়া রুখতেও আইন হবে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষজনিত অপরাধ, গণপিটুনি, ভিড় জমিয়ে নগ্ন করার মতো অপরাধ রুখতেও আইনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘দেশের মূল আত্মা নষ্ট হয়েছে গত পাঁচ বছরে। সেটি ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য কংগ্রেসের।
কংগ্রেসের ইস্তাহারে সব সত্য লেখা আছে। বিজেপি তাদের ইস্তাহার আনবে কবে?’’
বিজেপি বলছে, কংগ্রেস যেমন আজ দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটের শুভ মুহূর্ত দেখে ইস্তাহার প্রকাশ করেছে, বিজেপিও শুভক্ষণের অপেক্ষা করছে। আর সেটি নবরাত্রি শুরু হলেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy