Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-journalist

পুরীর ঐতিহ্যও পথের কাঁটা মোদীর সম্বিতের

ইতিহাস অবশ্য একটু অন্য কথা বলছে। হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হলে কী হবে, পুরীর মাটিতে কখনওই দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। এখানে বামেরা জিতেছে, জনতা পার্টি জিতেছে, কংগ্রেস জিতেছে, আর বিজেডি তো বটেই—কিন্তু বিজেপি নৈব নৈব চ।

সম্বিত পাত্র। ফাইল চিত্র।

সম্বিত পাত্র। ফাইল চিত্র।

সৈকত বসু
পুরী শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

গত বার শৈবতীর্থ দখল করেছেন। এ বার নাকি তাঁর নজর ছিল বৈষ্ণবতীর্থে।

শেষ পর্যন্ত লোকসভা ভোটে পুরী থেকে লড়ছেন না বটে নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি কিন্তু জান কবুল করে দিচ্ছে। মন্দির-শহর জুড়ে গেরুয়া পতাকা। সকাল থেকে সন্ধে পথে পথে ঘুরছে এলইডি স্ক্রিন লাগানো প্রচার ভ্যান। কপালে চন্দন-সিঁদুর লেপে লোকসভা কেন্দ্র চষে ফেলছেন দলের প্রার্থী সম্বিৎ পাত্র। গ্রামে গ্রামে রাত কাটাচ্ছেন, দলিতদের বাড়িতে খাচ্ছেন, তাঁদের খাইয়ে দিচ্ছেন। (সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ট্রোলডও হচ্ছেন।) আর ভুবনেশ্বরে দলের রাজ্য সদর দফতরে বসে নেতারা বলছেন, পুরী এ বার আমাদের হাতের মুঠোয়।

ইতিহাস অবশ্য একটু অন্য কথা বলছে। হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হলে কী হবে, পুরীর মাটিতে কখনওই দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। এখানে বামেরা জিতেছে, জনতা পার্টি জিতেছে, কংগ্রেস জিতেছে, আর বিজেডি তো বটেই—কিন্তু বিজেপি নৈব নৈব চ। ১৯৯৮ সালে দল গঠনের পর থেকেই পুরী বিজেডির দখলে। ২০১৪-র প্রবল মোদী হাওয়ায় ভর করেও সেখানে এমনকি দু’নম্বরে আসতে পারেনি বিজেপি। কংগ্রেস প্রার্থীকে আড়াই লাখের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন বিজেডির পিনাকী মিশ্র। ২০০৯ সালেও পুরী থেকে জেতা পিনাকী এ বারও প্রার্থী।

সুতরাং বিজেডির আত্মপ্রত্যয়ী নেতাদের মতে, বিজেপি তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামায় জয়ের ব্যবধান হয়তো কিছু কমবে। হয়তো তিন থেকে দুইয়ে উঠে আসবে মোদী-অমিত শাহের দল। কিন্তু পিনাকী মিশ্রের তৃতীয় বার লোকসভায় যাওয়া পাকা।

এই নিশ্চিত অঙ্ক উল্টে দিতে ধর্মকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। এই কেন্দ্রের সওয়া পনেরো লক্ষ ভোটারের ৯৫ শতাংশই হিন্দু। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে পুরীকে ‘ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী’ হিসেবে তুলে ধরা হবে, ঘোষণা বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে। জগন্নাথদেবের ছবি হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সম্বিত। জগন্নাথমূর্তি সামনে রেখে রোড-শো করে ভক্তদের তোপের মুখেও পড়েছেন। কারণ, প্রভু জগন্নাথকে রাজনীতির সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে টেনে আনাটা গর্হিত কাজ বলেই মনে করা হয়। তার পরেও অবশ্য পুরীর প্রচার জগন্নাথময়। তাঁর নামে জয়ধ্বনি করেই বক্তৃতা শুরু, বক্তৃতা শেষ। ‘নমো এগেন’ গেঞ্জি পরে জগন্নাথ মন্দিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিজেপি সমর্থকেরা।

‘‘আপনারা ধর্মের দিকটায় জোর দিচ্ছেন বটে, কিন্তু আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় পুরীর উন্নয়ন’’, বললেন সন্দীপ দত্ত। বাঙালি হলে কী হবে, ওড়িশাতেই জন্ম। কাজ করেন পুরীর হোটেলে। তাঁর দাবি, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কিছুই করেনি বিজেডি সরকার। পর্যটনের উন্নতি হয়নি। যুবক-যুবতীদের হাতে কাজ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম পরিবর্তন চাইছে। পুরীর স্থানীয় প্রশাসন সম্পর্কে ক্ষোভ শোনা গেল জিতেন্দ্র নায়েকের গলাতেও। গোয়ার কলেজ থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেছেন। কিন্তু স্বর্গদ্বারে রাস্তার উপরে চায়ের দোকান চালান। ‘‘হোটেলে কাজ করলে কত আর মাইনে পেতাম! বড়জোর ১২ হাজার। দোকান থেকে অনেক বেশি রোজগার হয়। কিন্তু পুরসভার লোকেরা হাত পেতে পয়সাও নেয়, আবার যখন-তখন দোকান তুলে দেয়।’’ তিনিও কি পরিবর্তনের কথা ভাবছেন? ‘‘ভেবে আর কী করব! গরিবের কথা কে ভাবে বলুন?’’ হতাশ গলায় জবাব দেন জিতেন্দ্র।

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, তিনি ভাববেন। কেন্দ্রে যেমন উন্নয়ন করেছেন নরেন্দ্র মোদী, পুরীতে বিজেপি জিতলে তার ঢেউ এসে লাগবে মন্দির শহরেও। তৈরি হবে হাসপাতাল, ঢেলে সাজানো হবে পর্যটন পরিকাঠামো। সেই আশ্বাসে ভরসা রাখার লোক কম নয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভরসা না রাখার লোকও অবশ্য যথেষ্ট। যেমন গ্র্যান্ড রোডের বাসিন্দা যুগলচন্দ্র সিনহা। তাঁর দাবি, ‘‘পুরীর জন্য নবীন পট্টনায়ক যা করেছেন, তার তুলনা হয় না। ফলে শঙ্খই এখানে জিতবে। মার্জিন কিছু কমতে পারে, তার বেশি কিছু নয়।’’

দিনভর পুরী শহরে চক্কর কেটে বেলাশেষে মনে হল, যতই দু’বারের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ থাকুন বা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ঝড় তোলা মুখপাত্র— লড়াইটা শেষ পর্যন্ত মোদীর সঙ্গে নবীনেরই। তাই সম্বিৎ বলছেন, ‘‘পুরীর জন্য যদি কেউ ভেবে থাকেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী। তিনিই আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। তাঁর নামেই আমি জিতব।’’ আর পিনাকী মিশ্র বলছেন, ‘‘নবীনবাবুর নামে, তাঁর উন্নয়ন প্রকল্পের জোরেই হইহই করে জিতে যাব আমি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE