Advertisement
E-Paper

ন্যায়ের পাল্টা দেশভক্তিই অস্ত্র বিজেপির

বিজেপির চাপ ক্রমশ বাড়িয়েই যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। দলের ইস্তাহারে সামাজিক ন্যায় প্রকল্পের ঘোষণা করে প্রচারপর্বের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদীকে চাপে ফেলে দিয়েছেন রাহুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২০

ইস্তাহারের পরে গানেও ন্যায়। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষায় স্বশাসন এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিখরচায় সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগের প্রতিশ্রুতি।

বিজেপির চাপ ক্রমশ বাড়িয়েই যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। দলের ইস্তাহারে সামাজিক ন্যায় প্রকল্পের ঘোষণা করে প্রচারপর্বের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদীকে চাপে ফেলে দিয়েছেন রাহুল। যার জবাব খুঁজতে গিয়ে পিছিয়েছে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ। আজ কংগ্রেসের প্রচারের মূল ‘থিম’ গানেও ফের ‘ন্যায়’-এর কথাই উঠে আসায় তড়িঘড়ি মাঠে নামতে হল বিজেপি নেতৃত্বকে। ইস্তাহার প্রকাশের আগেই বিজেপির প্রচারের মূল সুরটি ব্যাখ্যা করে মোদীর অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলি বোঝালেন, দেশভক্তির জিগিরকে সামনে রেখেই তাঁরা ন্যায়ের মোকাবিলা করবেন।

ক্ষমতায় এলে গরিবদের বছরে ৭২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইস্তাহারে ন্যূনতম আয় যোজনা বা ন্যায় প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন রাহুল গাঁধী। ন্যায় যে কংগ্রেস তুরুপের তাস হতে চলেছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে বিজেপি। ব্যাকফুটে থাকা শাসক শিবিরকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে আজ সকালে দলের থিম সঙ্গীতটি প্রকাশ করে কংগ্রেস। গীতিকার জাভেদ আখতারের লেখা ওই গানের প্রতিটি লাইনে ও দলীয় স্লোগানে বিজেপি সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এক মিনিটের ওই ভিডিয়োয় বেকারি, নোট বাতিল, ব্যবসা ক্ষেত্রে মন্দা, স্টেশনের নাম বদল, কৃষি ক্ষেত্রে দুর্দশার মতো বিষয়গুলি তুলে ধরে মোদী সরকারের আমলে কী ভাবে অন্যায় হয়েছে, তা দেখানো হয়েছে। সেই অন্যায় থেকে দেশের মানুষকে ন্যায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যেমন দিয়েছে কংগ্রেসের সরকার, তেমনই ‘ন্যায়’ প্রকল্পটিকে আমজনতার মনে গেঁথে দিতেই ওই শব্দটিকে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে।’’

এটুকুতেই শেষ নয়। দেশের তরুণ প্রজন্মের মন জিততে এক ফেসবুক পোস্টে রাহুল গাঁধী জানালেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে উচ্চশিক্ষায় স্বশাসন ফেরাবে। মোদী জমানার গোড়া থেকেই উচ্চশিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ উঠেছে। সেটা রোখার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ এবং এ বছর ৩১ মার্চ অবধি শিক্ষাঋণে সুদও মকুব করার আশ্বাস দিলেন কংগ্রেস সভাপতি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির মোকাবিলায় তড়িঘড়ি মাঠে নামেন বিজেপি নেতৃত্ব। আধ ঘণ্টার নোটিসে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে অরুণ জেটলি জানান, বিজেপির নির্বাচনী প্রচার সঙ্গীত সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের মূল প্রচারমূলক গানটি হবে, ‘ফের এক বার মোদী সরকার।’ জেটলি জানান, গানের সঙ্গেই ব্যবহার হবে তিনটি স্লোগান। প্রথম দু’টি হল— কাজের সরকার ও ইমানদার সরকার। আর তৃতীয়টিতে ‘শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সরকার’ বলে প্রচ্ছন্ন ভাবে দেশভক্তিকে উস্কে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের টিভি বিজ্ঞাপনেও ডাক দেওয়া হয়েছে দেশাত্মবোধের। বিজেপির সময়ে সার্জিকাল স্ট্রাইকের উদাহরণ দেখিয়ে বলা হয়েছে, মোদী ক্ষমতায় এলে মশাদের মতো নিকেশ করে দেওয়া হবে জঙ্গিদের।

কংগ্রেসের ন্যায়ের পাল্টা দিতে দেশভক্তির জিগিরই যে যথেষ্ট নয়, তা বুঝে গরিব মন জয়েরও চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। দেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ রাহুলের ন্যায় প্রকল্পের আওতায় চলে আসতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন মোদী। গরিবদের আস্থা অর্জনে তাই বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা বা শৌচাগারের সাফল্যের কাহিনিকে। একই সঙ্গে করা হয়েছে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সূক্ষ্ম একটি বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টাও। বিজেপির দাবি, কংগ্রেস গত চার প্রজন্ম ধরে গরিবি হটাও-এর কথা বললেও আসলে মোদীর আমলেই গরিবদের একটি বড় অংশ আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হয়েছেন। গরিব তকমা ঝেড়ে তাঁরা উন্নীত হয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে। জেটলির কথায়, ‘‘অথচ সেই শ্রেণির ব্যাপারে কংগ্রেস সভাপতি একেবার নিশ্চুপ।’’ উন্নীত হওয়া নতুন মধ্যবিত্তদের পাশে পেতে জেটলি বলেন, ‘‘রাহুলের পরামর্শদাতারা নতুন মধ্যবিত্তদের উপরে কর চাপানোর পক্ষপাতী। সেখানে বিজেপি গত পাঁচ বছরে মধ্যবিত্তদের উপর থেকে ধীরে ধীরে আয়কর কমিয়ে এনেছে।’’

বিজেপির প্রশ্ন, কংগ্রেস এত দিন পরে ন্যায়ের কথা বলছে। তা হলে এ যাবৎ কংগ্রেসের শাসনে কি অন্যায় হচ্ছিল? জবাবে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘পুরনো কথা ছেড়ে বরং গত পাঁচ বছরের খতিয়ান দেখা যাক। মোদী সরকারের আমলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির শিকার হয়েছেন গরিব ও মধ্যবিত্তরা। দেশে বেকারির হার গত ৪৫ বছরে সর্ব্বোচ্চ হয়েছে। আঘাত হানা হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপরেও। সর্বোচ্চ স্তরে অন্যায়ের শিকার হয়েছেন দেশের মানুষ। তাই দেশবাসীকে ন্যায় দিতে বদ্ধপরিকর রাহুল গাঁধী।’’

Lok Sabha Election 2019 NYAY Patriotism Rahul Gandhi BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy