Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

উৎকোচ ছাড়া কাজই হয় না শিলচরের সরকারি দফতরে, বিব্রত শাসক বিজেপি

ভোটের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাছাড়ের এই ‘উৎকোচ কাণ্ড’-এ শাসক দল বিজেপি বিব্রত।

‘উৎকোচ কাণ্ড’-এ বিব্রত শাসক দল বিজেপি।  ছবি: এএফপি।

‘উৎকোচ কাণ্ড’-এ বিব্রত শাসক দল বিজেপি। ছবি: এএফপি।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

রাধামাধব কলেজের বর্ষশেষের বিল ছাড়াতে ট্রেজারিতে ১৮ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। জনতা কলেজের কাছে দাবি ছিল ২০ হাজার টাকা। বিজেপি জমানাতে অসমের কাছাড় জেলায় ‘অতিরিক্ত’ ছাড়া কাজ হয় না। অফিসের বাইরে বোর্ড ঝুলছে, ‘দেবও না, নেবও না’। ভেতরে গেলেই নতুন স্লোগান, ‘দিবে আর নিবে’।

জমি-বাড়ির কাজে অর্থ দাবি করেন ভূমি বন্দোবস্ত দফতরের কর্মীরা। ঘুষ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনসনের কাগজ উপ-পরিদর্শকের অফিস থেকে নিয়ে যেতে কী হয়রানি হয়, কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন এক শিক্ষক। এক টাকাও ঘুষ দেবেন না, প্রতিজ্ঞা করায় ১১ বছর লেগেছে তাঁর পেনশন মঞ্জুরিতে। আর স্টাম্প পেপার ভেন্ডাররা তো প্রতিদিন মানুষকে ভুগিয়ে মারছেন। ২০ টাকার স্টাম্প ৩০ টাকায় বিক্রি নিয়মিত ব্যাপার। ৫০-৬০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

গত ২৮ মার্চ উৎকোচ আদায়ের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন কাছাড় জেলা নির্বাচন শাখার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট অতসী দত্ত তরফদার। ছাপাখানার আড়াই লক্ষ টাকার বিল মেটানোর জন্য ৯৫ হাজার টাকার ঘুষ দাবি করেছিলেন তিনি। অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন শাখা ফাঁদ পেতে তাঁকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে জেরা করা হচ্ছে। ওই সূত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎকোচ-কথার এখন ছড়াছড়ি। যত সময় যাচ্ছে, ‘কোথায় কত ঘুষ দিতে হয়’, সেই তালিকার বহর বাড়ছে। কাছাড়ের জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরির দৃষ্টি আকর্ষণ করেই অভিযোগ জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জেলাশাসক অবশ্য অতসীদেবীকে গ্রেফতারের পরদিনই বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ডেকে বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি যতদিন এখানে আছি, অন্তত ততদিন এখানে উৎকোচ আদায় চলবে না। অভিযোগ পেলে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় মূল অভিযোগ ট্রেজারির বিরুদ্ধে। রাধামাধব কলেজ বা জনতা কলেজের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিউ শিলচর সাব-ট্রেজারি। শিলচর ট্রেজারিতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে নালিশ অনেকের। যে কোনও বিভাগের যে কোনও বিল ছাড়াতে অতিরিক্ত দিতে হয় তাদের। অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধেও। ভুক্তভোগীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেল বা দুর্নীতি দমন শাখাকে দিয়ে দু’-চারটি আকস্মিক অভিযান চালালেই অনেকে ধরা পড়বেন।

ভোটের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাছাড়ের এই ‘উৎকোচ কাণ্ড’-এ শাসক দল বিজেপি বিব্রত। তবে দলের জেলা সভাপতি কৌশিক রাইয়ের দাবি, ‘‘মোদী জমানা বলেই অতসী দত্ত তরফদার গ্রেফতারের পর কোনও নেতা থানায় ছুটে যাননি। আগে এই ধরনের ঘটনা থানাতেই শেষ হয়ে যেত।’’ আর অন্য যে সব কথা সামনে আসছে? কৌশিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে কেউ রেহাই পাবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Silchar শিলচর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE