দিল্লিতে কংগ্রেস এবং আপ-এর জোটের সম্ভাবনায় নতুন করে তোড়জোড়। —ফাইল চিত্র
আসন্ন লোকসভা ভোটে দিল্লিতে জোটে ‘না’ করে দিয়েছে কংগ্রেস। প্রথম দিকে এমনটাই জানিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। কখনও বলেছেন, কংগ্রেসকে বোঝাতে বোঝাতে তিনি ক্লান্ত। এমনকি, দিল্লির সাতটির মধ্যে ছ’টি আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করে দিয়েছে তাঁর আম আদমি পার্টি (আপ)। অন্য দিকে, কংগ্রেসও ছিল নিরুত্তাপ। কিন্তু হঠাৎই দু’দলের জোটের সম্ভাবনা জোরদার হল। বিশেষ করে কংগ্রেসের তরফে কিছুটা আঁচ মিলতেই একাধিক আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে আপ। কংগ্রেস সূত্রে খবর, এমন একটা পরিস্থিতিতে জোট নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লির নেতাদের নিয়ে মঙ্গলবারই বৈঠকে বসছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।
তা হলে নয়া সমীকরণ কী হতে চলেছে দিল্লিতে? রাজনৈতিক শিবিরের খবর, দিল্লিতে সাতটি আসনের মধ্যে তিনটি করে আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে পারে আপ এবং কংগ্রেস। যদিও এ নিয়ে দর কষাকষি হতে পারে। আপ সূত্রে খবর, কংগ্রেসের জন্য আপাতত দু’টি আসন ছাড়তে রাজি তারা। এমনকি, তিনটিতেও রাজি হয়ে যেতে পারেন কেজরীওয়াল। বাকি আসনটিতে দু’দলের সমর্থিত কোনও হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। আলোচনায় রয়েছে শত্রুঘ্ন সিনহা এবং যশবন্ত সিনহার নাম। দিল্লির বিজেপি সভাপতি তথা বিদায়ী সাংসদ মনোজ তিওয়ারি এ বারও উত্তর-পূর্ব দিল্লি কেন্দ্রের প্রার্থী হচ্ছেন বলে খবর। বিহারিবাবু শত্রুঘ্ন বা বিজেপিত্যাগী যশবন্ত সিনহাকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করার বিষয়েও নতুন করে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে বলে কংগ্রেস-আপ সূত্রে খবর।
এই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবারই দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন দলের সভাপতি রাহুল গাঁধী। ওই বৈঠকে দলের নেতাদের মনোভাব বুঝে নিতে চাইছেন কংগ্রেস সভাপতি। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা, ভারত ও পাকিস্তানের আকাশযুদ্ধের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কিছুটা নরম অবস্থান নিয়ে শেষ পর্যন্ত জোটে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারে।
আরও পড়ুন: কোনও খবর মিস করলেন না তো? ঝালিয়ে নিন জ্ঞানভাণ্ডার
আরও পড়ুন: বিজেপির ওয়েবসাইট হ্যাক, মোদীকে নিয়ে কুমন্তব্য, সন্দেহ পাক হ্যাকারদের দিকে
অথচ গত সপ্তাহেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। গত শনিবারই লোকসভায় দিল্লির ৬টি কেন্দ্রে নিজেদের দলের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছেন কেজরীওয়াল। কংগ্রেস জোটে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলেই তিনি প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন আপ সুপ্রিমো। মহাজোটে না করায় তিনি যে কংগ্রেসের উপর মনঃক্ষুণ্ণ, তা উঠে এসেছে একাধিক প্রকাশ্য জনসভাতেও। একাধিক জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘‘মহাজোটের বিষয়ে কংগ্রেসকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আমি ক্লান্ত। কিন্তু ওরা বুঝতেই চায় না। জোট হলে দিল্লিতে একটি আসনেও জিততে পারবে না বিজেপি। আমি বুঝতে পারছি না, কংগ্রেস কী চায়।’’
তা হলে নতুন করে পরিস্থিতি পাল্টাল কী ভাবে? কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি সূত্রে খবর, দলের নমনীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা অনুঘটকের কাজ করেছে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি। কারণ, এই ঘটনা এবং তার পর গোটা ঘটনাক্রমের জেরে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় বিজেপির পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে। রাফাল, পিএনবি, নোটবন্দি-সহ শাসক দলকে বিপাকে ফেলার মতো ইস্যুগুলি চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। ফলে কংগ্রেস কিছুটা নরম অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামার ত্রালে জঙ্গিদের ডেরা ভাঙতে সেনা অভিযান, নিকেশ দুই সন্ত্রাসবাদী
তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিরোধী শিবিরের তদ্বির। সূত্রের খবর, বিজেপি বিরোধী মহাজোটের নেতারা কংগ্রেসকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু সক্রিয় ছিলেন আগে থেকেই। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিজেপি বিরোধী এই হাওয়ায় কংগ্রেস-আপ জোট না হলে মহাজোটের ক্ষেত্রে বিরূপ বার্তা যাবে। পুলওয়ামা পরিস্থিতির পর সেই বিষয়টিই আবারও কংগ্রেসকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরই আগের অবস্থান থেকে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধী অনেকটাই সরে এসেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফলে আজকের কংগ্রেসের বৈঠকের পরই জোটের ঘোষণা হতে পারে বলেই বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy