Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে অনীহা! নোটায় দিন, গ্রাফিতিতে প্রচার

হায়দরাবাদের দম্পতি বিনোদ এবং স্বাতী এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দেশের নাগরিককে নোটায় ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন।

দেওয়াল-ছবির সামনে বিনোদ-স্বাতী। নিজস্ব চিত্র

দেওয়াল-ছবির সামনে বিনোদ-স্বাতী। নিজস্ব চিত্র

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

সময় একেবারেই নেই আর। ১১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে প্রথম দফার ভোট। তেলঙ্গানাতেও ওই দিনই ভোট শুরু। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের প্রার্থীদের সমর্থনে জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু একদম উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে ৬৫ নম্বর জাতীয় সড়কে। বিজয়ওয়াড়া-হায়দরাবাদ জাতীয় সড়কে এখন চোখ টানছে হাতে আঁকা একটি সামাজিক বয়ান— ‘‘মিসিং অনেস্ট পলিটিশিয়ান’’। তার নীচেই লেখা, ‘‘মানুষের কাছে এই বিষয়ে তথ্য না থাকলে নোটার কথা ভাবা যেতে পারে। ১১ তারিখ বুথে পৌঁছে যান।’’

হায়দরাবাদের দম্পতি বিনোদ এবং স্বাতী এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দেশের নাগরিককে নোটায় ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন। তাঁদের এই কাজে প্রধান হাতিয়ার শহরের রাস্তায় হাতে আঁকা গ্রাফিতি। এই দুই ‘স্ট্রিট আর্ট’ শিল্পীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রচার শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। ভোটাধিকার প্রয়োগে মানুষকে বুথমুখী করা এবং একই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থী যাতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত না হন, তা বোঝাতে শিল্পকে মাধ্যম করেছেন তাঁরা।

ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিনোদ জানান, তাঁরা বহু দিন ধরেই এই ধরনের কাজ করে আসছেন। বিনোদ বলেন, ‘‘গত দশ বছরে চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো শহরে গ্রাফিতি এঁকে চলেছি। চাইছি, শিল্পের মধ্যে দিয়ে, ছবির মধ্যে দিয়ে আমাদের মনের ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করতে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে আমাদের আঁকা কমোডের ছবি দেখে অনেকে এগিয়ে এসে জানিয়েছেন, তাঁরা ঠিক এইটাই মনে মনে ভেবেছেন। কিন্তু বহিঃপ্রকাশ করতে পারেননি। আমাদের ছবি তাঁদের মুখে ভাষা জুগিয়েছে।’’ তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোটের সময়েই নজর কেড়েছিল বিনোদ-স্বাতীর সেই দেওয়াল চিত্র। যেখানে মানুষ লাইন দিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন একটি কমোডে। ছবিটি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিনোদ জানিয়েছেন, ওই দেওয়াল চিত্র এঁকে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন মানুষ যখন নিজের পছন্দমতো যোগ্য, সৎ প্রার্থীকে বাছতে পারছেন না, তখন তাঁর ভোট দেওয়া পক্ষান্তরে কমোডে ফ্লাশ করারই সমান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

একই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে থাকা শহরের বিভিন্ন হেরিটেজ বিল্ডিংয়ে স্প্রে পেইন্ট করে সামাজিক বার্তা দিয়েছিলেন বিনোদ এবং স্বাতী। যা সেই সময়ে পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকেরা মোটেই ভাল চোখে দেখেননি।

এ বারেও কি তেমন কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে? আত্মবিশ্বাসী উনত্রিশের ওই তরুণ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ফান্ডিংয়ে কাজ করছি। কারও উপরে নির্ভর করে নেই। যেমন কারও সাহায্য পাইনি, তেমনই কোনও বাধাও আসেনি।’’

দিন পনেরো আগে থেকে নোটায় ভোট দেওয়াকে সমর্থন জানিয়ে নতুন প্রচার শুরু করেছেন ওঁরা। আপাতত, সরকারি জমি বা দেওয়ালেই প্রচারের ছবি আঁকছেন। বিনোদ বলছেন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে অনেকেই ভোট দিতে বুথ পর্যন্ত পৌঁছন না। তাঁদের কাছে অনুরোধ, অসৎ রাজনৈতিক নেতাদের যদি ভোট দিতে ইচ্ছে না হয়, তা হলে নোটায় ভোট দিন। নিজের মূল্যবান ভোট নষ্ট করবেন না।’’

কিন্তু সবাই নোটায় ভোট দিলে দেশ চালাবে কে? বিনোদের বক্তব্য, ব্রিটিশ শাসনে থাকাকালীন ভারতের সব শাসকই তো আর খারাপ ছিলেন না। অনেকেই সেতু, রেলপথ তৈরির মতো উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। কিন্তু তার পরেও ভারতের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। বিনোদের কথায়, ‘‘স্বাধীনতার সত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের শিক্ষা বা খাদ্যের অধিকার সুরক্ষিত নয়। তাই দেশের মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির কথা ভাবানো জরুরি।’’ বিনোদরা জানিয়েছেন, তাঁরাও এ বার নোটাতেই ভোট দেবেন। কারণ তাঁদের কেন্দ্রের জনপ্রতিনিধি গত পাঁচ বছরে কোনও উন্নয়নই করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE