নিজস্বী: চেন্নাইয়ের এক কলেজে রাহুল গাঁধী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
কঠিন প্রশ্ন চেয়েছিলেন মঞ্চে উঠে। এবং বাউন্সারের মুখেই পড়লেন রাহুল গাঁধী। মাইক্রোফোনে কংগ্রেস সভাপতিকে চেন্নাইয়ের কলেজছাত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আপনি তো রবার্ট বঢরাকে নিয়ে কিছু বললেন না।’’
‘‘হ্যাঁ, ওঁকে নিয়ে কী বলবেন বলুন? কী বলবেন?’’ ছাইরঙা টি-শার্ট, নীল জিন্স পরা রাহুলই ছুড়ে দিলেন পাল্টা প্রশ্ন। কিছুটা অপ্রস্তুত মুখে তখন হাসছেন ছাত্রী।
নৈঃশব্দ্য ভাঙলেন রাহুলই। বললেন, ‘‘প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। মিস্টার বঢরার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। আমিই প্রথম লোক, যে বলবে, তদন্ত হোক। কিন্তু তদন্ত হোক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও। সরকারের অবশ্যই অধিকার রয়েছে তদন্ত করার। কিন্তু আইন সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। সরকারি নথিই বলছে, প্রধানমন্ত্রী রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে নির্মাতা সংস্থা দাসো-র সঙ্গে সমান্তরাল দরাদরি চালাচ্ছিলেন।’’
তিন হাজার মহিলা শ্রোতার ভিড় থেকে তখন হাততালি উঠছে। পরে রাজনৈতিক মহলও মেনেছে, নরেন্দ্র মোদীকে আজ কঠিন চ্যালেঞ্জই ছুড়েছেন রাহুল। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ভগ্নিপতিকে নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতেই পারতেন। তা না-করে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। উল্টে মোদীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘লুকিয়ে না-থেকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখান।’’ শ্রোতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘‘আপনারা কেউ কখনও প্রধানমন্ত্রীকে এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন? সকলের কাছ থেকে যে-কোনও প্রশ্ন চাইতে দেখেছেন? কখনও দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী তিন হাজার মহিলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
খোলা মঞ্চ থেকে দর্শকদের মধ্যে চলে-যাওয়া লম্বা র্যাম্পে পায়চারি করতে করতে কথা বললেন রাহুল। আজকের সভার দর্শকাসনে ছিলেন শুধু মহিলারাই। প্রথম প্রশ্নটা যিনি করলেন, আজরা নামে সেই ছাত্রী শুরু করেছিলেন ‘স্যর’ বলে। ‘স্যর’ থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমাকে ‘রাহুল’ বলবেন প্লিজ? অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করব।’’ আজরা হেসে বললেন, ‘‘হাই, রাহুল...।’’ হর্ষধ্বনি, হাততালি।
তার পরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে রাফাল, কাশ্মীর, সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে সরকারি হস্তক্ষেপ, নোটবন্দি, মহিলাদের সংরক্ষণ— একের পর এক বিষয়ে মোদীকে কাঠগড়ায় তুললেন রাহুল। বললেন, ‘‘এই ব্যক্তি ক্ষমতায় আসার সময়ে বলেছিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, চৌকিদার। নিজের বেলায় কথাটা ভুলে যাচ্ছেন কেন? হ্যাল-কে বাদ দিয়ে কেন আনকোরা অনিল অম্বানীকে রাফালের বরাত দিলেন তিনি?’’
বালাকোট অভিযানের সূত্রে বিরোধীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মোদী। রাহুলের মতে, কাশ্মীর নিয়ে মোদীর ভুল নীতির ফলেই জঙ্গি হামলা চালাতে পারছে পাকিস্তান। মোদীর নীতিই আগুন লাগাচ্ছে কাশ্মীরে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়া যায় না। দেশবাসীকে বাঁচানোটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ৪৫ জন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর পরে ‘এ বার কিছু করব’ বললে হয় না।’’
পরে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল ফের বলেছেন, বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালই কন্দহরে ছেড়ে দিয়ে এসেছিলেন পুলওয়ামার চক্রী, জইশ নেতা মাসুদ আজহারকে। আর আসন্ন ভোটে এডিএমকে-বিজেপিকে জোট নিয়ে দক্ষিণী রাজ্যটির বাসিন্দাদের বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘‘কখনও দিল্লি থেকে তামিলনাড়ুর সরকার চালানো হয়নি।’’
রাতে টুইটারে চেন্নাইয়ের স্টেলা মেরিজ কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের ধন্যবাদ দিয়ে রাহুল লেখেন, ‘‘ভারতের ভবিষ্যৎ এঁদের হাতে সুরক্ষিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy