গোয়ার নাইট ক্লাবে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন অনেক মানুষ। তার পরেই কলকাতা শহরে থাকা বাণিজ্যিক ক্লাবগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনগত কারণেই যে তাঁদের হাত বাঁধা, তা একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশনে কলকাতায় থাকা বাণিজ্যিক ক্লাবগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। মূলত তিনটি প্রশ্ন তোলেন তিনি, যার উত্তর দিতে গিয়ে খানিক অসহায়তা প্রকাশ করেছেন কলকাতার মেয়র।
কলকাতায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ক্লাব, যেমন বিত্তশালী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালিত ক্লাব, নাইট ক্লাব, বার, রুফটপ রেস্তরাঁ ইত্যাদি রয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্বরূপ। তাঁর প্রশ্ন, এই ধরনের ক্লাব পরিচালনা করতে গেলে পুরসভা থেকে কি কোনও লাইন্সেস বরাদ্দ করা হয়? কলকাতা শহরে কি কোনও নাইট ক্লাব আছে? থাকলে কতগুলি? এবং সর্বশেষ তিনি জানতে চান, এই সব বাণিজ্যিক ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার কি কোনও নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে? যদি থাকে তো সেগুলি কী? যদি না থাকে তা হলে কলকাতা পুরসভা কি নতুন করে কোনও নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে? এমন সব প্রশ্ন রাখার পর বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘এই সব ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখা দিলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয় কলকাতা পুরসভা। তাই এদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা থাকা আবশ্যিক।’’
আরও পড়ুন:
-
কলকাতার অফিসপাড়ায় দিনের পর দিন বাড়ছে পানীয় জলের সঙ্কট, চাহিদা মেটাতে আবেদন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে
-
এসআইআর আবহে পুরসভা কি জন্মমৃত্যুর যথেচ্ছ শংসাপত্র দিয়েছে? তথ্য দিয়ে কী জানালেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ
-
পুর অধিবেশনে ‘মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্য নিয়ে খোঁচা দিল বিজেপি! প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছাড়ব, চ্যালেঞ্জ মেয়র ফিরহাদের
জবাবে মেয়র জানান, কলকাতা পুরসভার তালিকায় থাকা এই ধরনের বাণিজ্যিক ক্লাবের সংখ্যা ২৪০টি। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তারা নিজেরাই করে। তবে নাইট ক্লাব সংক্রান্ত কোনও তথ্য পুরসভার কাছে নেই। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ক্লাবগুলিকে অনুমোদন নিতে হয় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে। মেয়র বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার ১৯৮০ সালের অ্যাক্ট রয়েছে। সার্টিফিকেট অফ এনলিস্টমেন্ট আমাদের হাতে রয়েছে। যা এখন পুরসভা থেকে অনলাইনে করা যায়। আর রয়েছে বিল্ডিং রুলস। এই দু’টি বিষয় ছাড়া আমরা আর কোনও ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক ক্লাবগুলির বিল্ডিং রুলসে যদি কোনও গরমিল থাকে, সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভা হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমনকি বেআইনি নির্মাণ হলে তা ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু এই ধরনের বাণিজ্যিক ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকগুলি লাইসেন্স লাগে। যেমন পুলিশের থেকে লাইসেন্স প্রয়োজন, ফায়ার লাইসেন্স লাগে, আবগারি লাইসেন্স লাগে। এ গুলির ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার এক্তিয়ার নেই হস্তক্ষেপ করার।’’
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে উত্তর কলকাতার মেছুয়া এলাকায় একটি রুফটপ রেস্তরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর কলকাতা পুরসভার তরফে শহরের সব রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে আবার রুফটপ রেস্তরাঁগুলি খোলা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি গোয়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষের মৃত্যুর পর আবার কলকাতার রুফটপ রেস্তরাঁ-সহ বাকি বাণিজ্যিক ক্লাবগুলির কর্মপদ্ধতি ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলি প্রশাসনের আতশকাচের তলায় এসেছে বলে সূত্রের খবর।