রাহুল গাঁধীর ‘আলিঙ্গন’-এও ফল মিলল না। ফের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকে টেনে আনলেন নরেন্দ্র মোদী।
কংগ্রেসের সভাপতিকে এ বার মোদীর চ্যালেঞ্জ, লোকসভা ভোটের বাকি দু’দফা ‘রাজীব গাঁধীর মানসম্মান’কে কেন্দ্র করেই লড়া হোক। মোদীর মন্তব্য, ‘‘তার পর দেখুন, খেলা কী ভাবে খেলা হয়।’’
যে কোনও প্রধানমন্ত্রীই ভোটে তাঁর পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ানকে প্রধান অস্ত্র করতে চান। কিন্তু মোদী আজ কংগ্রেসকে ‘চৌকিদারের চুনৌতি’ দিয়ে বলেছেন— দিল্লি, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ভোট বাকি রয়েছে। সেখানে রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেমন ছিলেন, কী কাজ করেছিলেন, দেশকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন, ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার পরে কী করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বফর্স কেলেঙ্কারির কী অভিযোগ ছিল—এ সব নিয়েই লড়াই হোক।
এর আগে অর্থনীতির সমস্যা থেকে শুরু করে কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য জওহরলাল নেহরুর দিকে আঙুল তুলেছেন মোদী। এ বার তাঁর নিশানায় রাজীব গাঁধী।
ঠিক এইখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল গাঁধী। তাঁর যুক্তি, মোদী নিজের সাফল্য খুঁজে পাচ্ছেন না বলেই প্রয়াতদের টেনে আনছেন। ঝাড়খণ্ডে মোদীর ওই মন্তব্যের পরেই দিল্লির চাঁদনি চকের জনসভায় কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে মোদী বেকারি, নোট বাতিল, অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কথা বলছেন না। তাঁর দু’দিকে লাগানো টেলিপ্রম্পটারে লেখা থাকে, এ সব কথা বলবেন না। তার বদলে তিনি রাজীব গাঁধীর বিষয়ে কথা বলেন। শহিদের অপমান করেন।’’ গত শনিবার উত্তরপ্রদেশে রাহুলকে নিশানা করতে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘আপনার বাবার পারিষদেরা তাঁকে মিস্টার ক্লিন বলত। কিন্তু তাঁর জীবন শেষ হয়েছিল ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান হিসেবে।’’ জবাবে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আপনার কর্মফল অপেক্ষা করছে। আপনার জন্য আমার সব ভালবাসা এবং একটি বিশাল আলিঙ্গন রইল।’’
আজ ফের রাজীবের প্রসঙ্গ মোদীর উঠে আসার পরে রাহুল দিল্লিতে বলেন, ‘‘আপনার যতই রাগ থাকুক, যত ঘৃণা থাকুক, আমাকে যতই গালি দিন, আমার বাবা-মা, দাদু-দিদা-ঠাকুরমাকে যা খুশি বলুন, আমার দিক থেকে ভালবাসাই ফেরত আসবে। সংসদে আপনাকে আলিঙ্গন করেছিলাম। ২৩ মে ওই আলিঙ্গনই আপনাকে হারাতে চলেছে।’’
ভোটের প্রচারে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনার জন্য অন্যান্য বিরোধী দলের নেতানেত্রীরাও নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেছিলেন। ঝাড়খণ্ডে প্রচারে গিয়ে আজ তার জবাব দিতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘পুরনো কথা এই প্রজন্ম জানুক। বিংশ শতাব্দীতে একটা পরিবার যে দেশকে লুটেছে, তা একবিংশ শতাব্দীর তরুণরা জানুক।’’ কার্যত চ্যালেঞ্জ জানানোর সুরে মোদী বলেন, ‘‘মাথা নিচু করে পালাবেন না। দম থাকলে ময়দানে আসুন। দেখব, কার কব্জিতে কত জোর!’’
আর একটি বিষয়ও আজ প্রধানমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট। তা হল, রাফাল নিয়ে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের জবাবেই তিনি রাহুলের বাবাকে টেনে এনে আক্রমণ শানাচ্ছেন। মোদী বলেন, ‘‘গত এক বছর প্রধানমন্ত্রীর পদকে অপমান করা হয়েছে, অপশব্দ বলে গালি দেওয়া হয়েছে। আমি শুধু একজনের পুরনো কথা মনে করিয়ে দিয়েছি। তাতে তুফান এসে গিয়েছে। কিছু লোকের পেটে এত ব্যথা হচ্ছে, যে কাঁদতে বাকি রেখেছে। যেন বিছে কামড়েছে!’’
রাহুল নিজের অবস্থান থেকে নড়েননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি বুঝতে পারছি, মোদীর মনে ভয়, আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভয় থেকেই ঘৃণা তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি হল, বাবা-মা, গুরুর সম্মান করা। মোদী নিজের গুরু লালকৃষ্ণ আডবাণীকে অপমান করেছেন। ওঁর হৃদয়ে একজনের জন্যই ভালবাসা রয়েছে—নিজের জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy