Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গণপিটুনি রোধে আইন চান জোটবদ্ধ মুসলিম মহিলারা

গোরক্ষার নামেই হোক বা শিশুচুরির গুজবে— গণপিটুনি রোধে সংসদকে আইন তৈরির পরামর্শও দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

গণপিটুনিতে নিহতদের অনেক পরিবারই ভয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চান না।

গণপিটুনিতে নিহতদের অনেক পরিবারই ভয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চান না।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কেন্দ্রে যাঁরাই ক্ষমতাসীন হোন, তাঁরা যেন গোরক্ষার নামে গণপিটুনি রুখতে আইন আনেন। দশটি রাজ্যের বেশ কয়েক জন মুসলিম মহিলাকে নিয়ে গড়া এক গোষ্ঠী এই আর্জি জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দলের কাছে।

গোরক্ষার নামেই হোক বা শিশুচুরির গুজবে— গণপিটুনি রোধে সংসদকে আইন তৈরির পরামর্শও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ ১০টি রাজ্যের কিছু নির্যাতিত মুসলিম পরিবারের মহিলাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ওই দলটি। গত ২৬ মার্চ লখনউয়ে তারা মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণ, সাচার কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করা, তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে কেন্দ্রের অধ্যাদেশ বাতিল করার মতো ৩৯ দফার একটি ‘ইস্তাহার’ প্রকাশ করেছে। ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশে গণিপিটুনিতে নিহতদের পরিজনেরা, চিকিৎসক কাফিল খানের পরিবারের সদস্যেরাও। যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ওই দলটি তৈরি হয়েছে, তার প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হাসিনা খান বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দল এখনও গণপিটুনি রুখতে আইন তৈরির কথা বলছে না। তাই নারী সংগঠন হিসেবে আমরাই এগিয়ে এসেছি।’’ তিনি জানান, গণপিটুনিতে নিহতদের অধিকাংশই অত্যন্ত গরিব। কোনও ক্ষতিপূরণ বা সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু এখন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা এবং সঠিক আশ্বাস পাওয়াটাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে।’’

গুজরাত হিংসায় নিহত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির মেয়ে নাসরিন হুসেন আমেরিকা থেকে ফোনে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আশা করব, শুধু কয়েক জন মুসলিম মহিলা নন, দেশের আরও মানুষ এই দাবি নিয়ে এগিয়ে আসবেন। কারণ, গণপিটুনির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এটাই সময়। সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অ-রাজনৈতিক দলটির অভিযোগ, দাদরির মহম্মদ আখলাখ থেকে রাজস্থানের পেহলু খান— তাঁদের হত্যার পর কিছু দিন হইচই হয়েছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে ওই পরিবারগুলির খোঁজ নেয়নি কেউ। রাজস্থানের অলওয়ারের গোরক্ষকদের হাতে উমর খান নিহত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন লাগাতার হুমকি দিচ্ছে উমরের স্ত্রী খুরশিদাকে। আটটি সন্তান নিয়ে চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাঁকে। খুরশিদা বলেন, ‘‘লাগাতার হুমকির মুখে রয়েছি। হুমকির জেরে স্বামীর খুনের মামলার শুনানির দিন আদালতে হাজির হওয়ায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’’

গণপিটুনিতে নিহতদের অনেক পরিবারই ভয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চান না। তেমনই একটি পরিবারের এক জন বললেন, ‘‘কোনও সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছি না। আতঙ্কের পরিবেশে বেঁচে আছি। আমি চাই না, আর কেউ এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ুক। তাই রাজনৈতিক দলগুলির কাছে গণপিটুনি রুখতে আইন তৈরির আবেদন করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE