Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-national

শিখ দাঙ্গা নিয়ে মন্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ রাহুল, ক্ষমা চাইলেন পিত্রোদা

রাজীব গাঁধীর এই বন্ধুদের নিয়েই নাজেহাল রাহুল। মণিশঙ্কর এবং স্যাম— রাজীবের এই দুই বন্ধুই সেই অর্থে রাজনীতিক নন। একজন কূটনীতিক, একজন প্রযুক্তিবিদ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

প্রথমে মণিশঙ্কর আইয়ার। এ বারে স্যাম পিত্রোদা।

গুজরাতে বিধানসভা ভোটের সময় মোদীকে ‘নীচ’ বলে মণিশঙ্কর আইয়ার গোটা নির্বাচনের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু সেটিকেই হাতিয়ার করে কোনও রকমে নিজের রাজ্য ধরে রাখতে পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মণিকে তখন সাময়িক বহিষ্কার করে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করেন রাহুল। এ বারে শিখ দাঙ্গা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মণিশঙ্করের ‘দ্বিতীয় অবতার’ হয়ে উঠেছেন স্যাম পিত্রোদা, বলছেন কংগ্রেস নেতারাই। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ রাহুল গাঁধী সরাসরি স্যামকে নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমা চাইতে। স্যাম চেয়েছেনও। কিন্তু তাতে মোদীকে ঠেকানো যায়?

রাজীব গাঁধীর এই বন্ধুদের নিয়েই নাজেহাল রাহুল। মণিশঙ্কর এবং স্যাম— রাজীবের এই দুই বন্ধুই সেই অর্থে রাজনীতিক নন। একজন কূটনীতিক, একজন প্রযুক্তিবিদ। দু’জনেই রাজীব গাঁধীর থেকে বয়সে বড়। বিজেপি এই দু’জনকেই রাহুলের ‘গুরু’ বলে অ্যাখ্যা দেয়। রাহুল গাঁধী সভাপতি হওয়ার পর গোটা দলকে এক প্রকারে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও বাবার এই বন্ধুদের মুখে লাগাম পরাতে পারছেন না। আর ভোটের সময় বেফাঁস মন্তব্য করে এই নেতারা বারেবারেই মোদীর হাতে একের পর এক অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘হুয়া তো হুয়া’। তিনটি শব্দ। ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা নিয়ে গত কাল এই তিন শব্দই বেরিয়েছে কংগ্রেসের অনাবাসী ভারতীয় সেলের প্রধান স্যাম পিত্রোদার মুখ থেকে। গুজরাতি হলেও উচ্চশিক্ষা বিদেশে। রাজীব গাঁধীর কম্প্যুটার বিপ্লবের কান্ডারি। ভাল হিন্দি বলতে পারেন না। তা সত্ত্বেও বারবার প্রধানমন্ত্রীর মুখে শিখ দাঙ্গার কথা শুনে বলেছিলেন, ‘‘হয়েছে তো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত পাঁচ বছরের কাজ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ভিত্তিতে ভোটে লড়ুন না।’’

গত কালই অমিত শাহ মাঠে নেমেছিলেন। আজ নামলেন মোদী। সঙ্গে গোটা বিজেপি। স্যাম একবার বলেছেন ‘হুয়া তো হুয়া’। মোদী এক একটি জনসভায় আজ এই তিনটি শব্দ ডজন বার বলেছেন! আর বলছেন, “এটাই কংগ্রেসের অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য। মানুষকে মানুষ গণ্য করে না।’’ দিল্লিতে শিখ দাঙ্গায় আক্রান্তদের দলের দফতরে এনে সাংবাদিক সম্মেলনও করায় বিজেপি।

বালাকোটে সেনার অভিযানের পরে এই স্যাম পিত্রোদাই প্রকাশ্যে দাবি করেন, সরকার প্রমাণ দিক কত জন মারা গিয়েছে পাকিস্তানে। এমন এক সময়, যখন খোদ রাহুল সরকারের পাশে থাকার অবস্থান নিয়েছিলেন। স্যামের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ রাহুল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘স্যাম পিত্রোদা যা বলেছেন, তা একেবারেই যথাযথ নয়। এই মন্তব্যের জন্য ওঁকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, শিখ দাঙ্গার জন্য মনমোহন সিংহ-সনিয়া গাঁধী ক্ষমাও চেয়েছেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ বলেছেন, ‘‘এমন মন্তব্য লজ্জাজনক। আমি স্তম্ভিত। ১৯৮৪ সালের বিপর্যয়ে লোকে এখনও বিচার চাইছে।’’ স্যাম দিনভর বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিজেপি তাঁর মন্তব্য বিকৃত করছে। কিন্তু দিন গড়াতে বলেন, ‘‘আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম, ‘হুয়া তো বুরা (খারাপ) হুয়া।’ কিন্তু ‘বুরা’র অনুবাদ করতে পারিনি। ক্ষমা চাইছি।”

রাহুলের হস্তক্ষেপে স্যাম ক্ষমা চাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে কংগ্রেসের এই নেতার থেকে দূরত্ব তৈরি করে। পাশাপাশি টেনে আনে গুজরাত দাঙ্গার কথা। সেখানে আক্রান্তদের ন্যায় বিচারের কথা মনে করিয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘হিংসা ও দাঙ্গা কংগ্রেসের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ক্ষমার অযোগ্য। স্যাম পিত্রোদা-সহ যে কেউ এই অবস্থানের বাইরে মন্তব্য করলে সেটি কংগ্রেসের মত নয়। সব নেতাকেই সতর্ক ও সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কংগ্রেস।’’

এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি সন্ত্রাসে অভিযুক্তকে প্রার্থী করেছে আর মোদী তাতে বাহবা দিচ্ছেন! বিভাজনের ভিত্তিতে ভোটও চাইছেন! কংগ্রেস ১৯৮৪-র দাঙ্গার পাশাপাশি ২০০২ গুজরাত দাঙ্গায় আক্রান্তদের জন্যও বিচার চায়।’’ কংগ্রেস শিখ দাঙ্গায় আরএসএসের ভূমিকাও তুলছে। এ দিন রাহুলের বিবৃতি তুলে কংগ্রেস বলছে, ওই যন্ত্রণা আজও বইছে কংগ্রেস। শিখ দাঙ্গার জন্য ৪৪২ জনের সাজা হয়েছে। দাঙ্গা আক্রান্তদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গুজরাত দাঙ্গার পর মোদী বলেছিলেন, ‘‘সব ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া আছে’’...‘‘যদি কুকুরের বাচ্চা গাড়ির নীচে চলে আসে তো...?’’ এ কথার বিচার কবে হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE