Advertisement
E-Paper

‘কী করে দারিদ্র ঘোচাবেন? দারিদ্র দেখেছেন তিনি?’ রাহুলকে খোঁচা শাহের

ভোটের মুখে রাহুলের এক ঘোষণাতেই আলোচনার মোড় অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে রাতারাতি। 

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫৪
রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।

রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।

জয়পুরে ব্যাট করছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। বল হাতে রাজস্থান রয়্যালস। ১৯ ওভার চলছে। সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে হঠাৎই ভেসে উঠল রব- ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’।

রাহুল গাঁধী আজ রাজস্থানে পা রেখেছেন। আর এটি গতকালের ছবি। গতকাল ততক্ষণে দেশের ৫ কোটি গরিব পরিবারকে মাসে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন রাহুল। যে ‘ন্যূনতম আয় যোজনা’র (ন্যায়) টাকা সরাসরি যাবে পরিবারের মহিলার ব্যাঙ্ক খাতে। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও বলছেন, ‘‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন হলে পরিবারের ক্ষমতা বাড়বে। সেটাই সবচেয়ে খুশির খবর।’’ দিল্লিতে বিজেপির প্রাসাদের মতো ঝাঁ চকচকে দফতরের ঠিক পিছনে চায়ের দোকানেও আলোচনা শুরু হয়েছে, গরিবের ঘরে ৬ হাজার টাকা দেবে কংগ্রেস। ভোটের মুখে রাহুলের এক ঘোষণাতেই আলোচনার মোড় অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে রাতারাতি।

যে কারণে গতকালই আসরে নেমেছিলেন অরুণ জেটলি। বিজেপি বুঝছে, ৫ কোটি পরিবারের ২৫ কোটি ভোটারের কাছে সরাসরি পৌঁছনোর বাজি মেরেছেন রাহুল। আজ উত্তরপ্রদেশের জনসভায় নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহকেও তাই সার্জিকাল স্ট্রাইকের গুণ গাইতে গিয়েও বলতে হল, ‘‘রাহুল গাঁধী কী করে দারিদ্র ঘোচাবেন? দারিদ্র দেখেছেন তিনি? বিজেপিতেই এক চা-ওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। নরেন্দ্র মোদীই গরিব-দরদী।’’

কিন্তু আজ রাজস্থানে পা রেখে তার জবাব দিলেন খোদ রাহুলই। বিজেপির ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ নিয়ে দেশভক্তির স্লোগান ভোঁতা করলেন ‘ন্যায়’ অস্ত্রে। বললেন, ‘‘আমাদের ন্যায় দারিদ্রের উপরে কংগ্রেসের সার্জিকাল স্ট্রাইক। এটিও বিস্ফোরণ, বোমা ফাটবে। ধর্ম-জাত-ভাষা-রাজ্য-স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের ২৫ কোটি মানুষের কাছে যাবে বছরে ৭২ হাজার টাকা। ইউপিএ-র দশ বছরে ১৪ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার নীচ থেকে তোলা হয়েছে। এ বারে একবিংশ শতাব্দীতে কেউ গরিব থাকবেন না। নরেন্দ্র মোদী সকলের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আসলে ১৫ জন ধনীকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। আমি গরিবের অ্যাকাউন্টে বছরে ৭২ হাজার টাকা পৌঁছনো নিশ্চিত করব।’’ রাহুল জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পরে স্থির হয় ভারতে সকলের ন্যূনতম আয় মাসে ১২ হাজার টাকা হওয়া উচিত। অর্থাৎ বছরে ৭২ হাজার টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস সরকার গড়ার পরেই এই ন্যূনতম মাসিক আয় নিশ্চিত করা হবে।’’

রাহুলের সভায় ফের উঠল ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ রব। কংগ্রেস ঠিক এটাই চাইছিল। দেশভক্তির প্রচার থেকে অর্থনীতি, বেকারত্ব, কৃষক দুর্দশার মতো মৌলিক সমস্যাগুলির দিকে ফের মুখ ঘুরিয়ে আনতে চাইছিলেন রাহুল গাঁধী। জেটলিদের দিকে তির ছুড়ে তাই আজ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘দেশের সবচেয়ে গরিবের জন্য আমরা ন্যায় ঘোষণা করেছি। অরুণ জেটলি কি এর সমর্থন করছেন না বিরোধিতা?’’ রাহুলও বলছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী গরিবদের দূর করছেন, আমরা দারিদ্র।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের অভিমুখ যে অর্থনীতি, রোজগার হওয়া উচিত, তা বলছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও। রাহুলের দাবি, তিনি যে সব অর্থনীতিবিদের সঙ্গে ‘ন্যায়’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে রাজনও আছেন।

তবে ‘ন্যায়’ প্রকল্প নিয়ে সদর্থক বার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রাক্তন অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামেরও মত, ঠিকমতো রূপায়ণ হলে ‘ন্যূনতম আয়’ প্রকল্প একশো দিনের কাজের মতো সফল হবে। কৌশিক বসুও শোনাচ্ছেন, ইউপিএ আমলে কী ভাবে দারিদ্র ঘুচেছে। এসব দেখে চাপে এখন বিজেপি। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমার সরকারের হয়ে বলতে গিয়েও কোপে পড়েছেন। সরাসরি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বসেছেন। বিরোধীরা বলছে, রাজনীতি করতে চাইলে সরাসরি ‘মোদী টি-শার্ট’ বিজেপিতে যোগ দিন না। নজরে এসেছে নির্বাচন কমিশনেরও। কমিশনও খতিয়ে দেখছে রাজীব কুমার ভোট-বিধি ভঙ্গ করেছেন কি না।

Rahul Gandhi Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ রাহুল গাঁধী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy