এই তো কয়েক দিন আগে রাঁচীর নির্বাচনী জনসভায় ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর গল্প শুনিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রে বিজেপি সরকার, রাজ্যেও বিজেপি সরকার। এই ডাবল ইঞ্জিনের জন্যই রাজধানী রাঁচীতে উন্নয়ন হয়েছে তড়তড়িয়ে।’’ স্থানীয় বিজেপি নেতারাও তাঁকে আশ্বস্ত করেন, ‘ডাবল ইঞ্জিন’-ই চলবে।
কিন্তু এ বারেও রাঁচীতে কি বিজেপি এক্সপ্রেস দ্রত ছন্দে চলবে, নাকি বেলাইন হবে? আগামী ৬ মে রাঁচী লোকসভা আসনের ভোট। বিরোধীরা তো আছেই। তার সঙ্গে শামিল হয়েছেন বিদায়ী বিজেপি সাংসদ রামটহল চৌধুরিও। সত্তর বছরের গেরোয় রামটহলের টিকিট কেটে দিয়েছে দল। প্রার্থী করা হয়েছে ঝাড়খণ্ড খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান সঞ্জয় শেঠকে। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস ও জেএমএম-এর জোটপ্রার্থী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়। আর এই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের মধ্যে ‘ফুটবল’ নিয়ে গোল দিতে নেমে পড়েছেন রামটহল। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ‘ফুটবল’ প্রতীক নিয়ে বিজেপির পাঁচবারের সাংসদ, এ বারের ‘নির্দল’ রামটহল বিজেপির গোলেই বল ঢোকাবেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাঁচীর ভোটারদের একটা বিরাট অংশ দল দেখে নয়, ব্যক্তি রামটহলকেই ভোট দেন। বিজেপির বিশেষ চিন্তা, রামটহলের কুর্মি ভোট ব্যাংক নিয়ে। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘কুর্মি সম্প্রদায় বিজেপি ঘেঁষা ঠিকই, কিন্তু রাঁচীতে যত না বিজেপি, তার থেকেও বেশি রামটহল-অনুরাগী।’’ রামটহল অবশ্য ভোট কাটাকাটিতে বিশ্বাসী নন, ‘‘ভোট কাটাকটি করতে নয়, জেতার জন্যই ময়দানে নেমেছি আমি।’’
শুধু রামটহলই বিজেপি ছাড়েননি, বাবার ‘অপমান’-এ বিজেপি ছেড়েছেন তাঁর ছেলে রনধীর চৌধুরিও। বহু বছর ধরে রাঁচির গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির সংগঠন করছেন তিনি। তাঁর বিজেপি ছাড়ায় রাঁচীর গ্রামীণ এলাকার ভোটেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
অন্য দিকে কংগ্রেস প্রার্থী সুবোধকান্তের দাবি, কংগ্রেস-জেএমএম জোটের প্রার্থী হিসেবে তাঁর জিত নিশ্চিত। রাঁচীর মুসলিম ও আদিবাসী খ্রিস্টান ভোট বিজেপি যে পাবে না তা দলের কট্টর সমর্থকরাও স্বীকার করছেন। সেখানেই সুবোধকান্ত এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন অনেকে। সুবোধকান্তের দাবি, ‘‘শুধু মুসলিম বা আদিবাসী খ্রিস্টান ভোটই নয়, জিতব সবার ভোট পেয়েই।’’
রামটহল বা সুবোধকান্তের তুলনায় সংসদীয় রাজনীতিতে একেবারেই নতুন সঞ্জয় শেঠ। গত পাঁচ বছরে ঝাড়খণ্ড খাদি বোর্ডের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছেন সঞ্জয়। তা মেনে নিয়েও বিরোধীদের দাবি, খাদির বোর্ডের জন্য কাজ করা সঞ্জয়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কোথায়? বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, সঞ্জয়ের মোদী আছেন। সঞ্জয় বলছেন, ‘‘মানুষ কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার চায়। রাঁচী ঘুরে দেখলে চারদিকে উন্নয়নই চোখে পড়বে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, সবেতেই এগিয়ে রাঁচী। আগামী দিনে স্মার্ট সিটিও হতে চলেছে। মোদীজির কাজ দেখেই সাধারণ মানুষ পদ্মেই ভোট দেবেন।’’
রাঁচীর রাস্তায় হোর্ডিং যুদ্ধে কংগ্রেসের সুবোধকান্ত সহায় ও বিজেপির সঞ্জয় শেঠের মধ্যে টক্কর সমানে সমানে। শহরে ছোট ছোট পোস্টারে রয়েছেন ‘ভূমিপুত্র’ মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তবে তিনি কোনও দলের পোস্টারে নন, রয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রচারে। ধোনির কথা, ‘‘লোকসভা ভোট বিশ্বকাপ ক্রিকেটের থেকেও বড় ম্যাচ। আপনি আপনার শক্তি দেখান। অবশ্যই ভোট দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy