Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেই করুণা-জয়া, রংহীন ভোটে নজর স্ট্যালিনে

কালাইনার— করুণানিধি। আম্মা— জয়ললিতা। ৪০ বছরেরও বেশি সময় পরে এমন অভিভাবকহীন দশায় লোকসভা নির্বাচনই শুধু নয়, একই সঙ্গে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনও হতে চলেছে।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

কালাইনার নেই। নেই আম্মাও। দুজনের অনুপস্থিতিতে এই প্রথম কোনও ভোট হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। যে ভোটে উত্তেজনা হয়তো আছে, কিন্তু রং বিশেষ নেই।

কালাইনার— করুণানিধি। আম্মা— জয়ললিতা। ৪০ বছরেরও বেশি সময় পরে এমন অভিভাবকহীন দশায় লোকসভা নির্বাচনই শুধু নয়, একই সঙ্গে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনও হতে চলেছে। ডিএমকে, এডিএমকে দু’পক্ষের কাছেই বড়সড় পরীক্ষা। শুধু ভোটে জেতার নয়, দলকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক দিকে স্ট্যালিন এবং অন্য দিকে পনিরসেলভম-পালানিস্বামী কতটা যোগ্য, সেটাও যাচাই হয়ে যাবে বৃহস্পতিবারের ভোটে।

তামিলনাড়ু এমন একটা রাজ্য যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলেরই একক মৌরসিপাট্টা গড়ে উঠতে পারেনি। পাশা উল্টে গিয়েছে বার বার। যেমন, ২০০৪ সালে জয়ললিতা তখন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সে বারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল এডিএমকে একটি আসনও পায়নি। শাসক দলের এই পারফরম্যান্স কার্যত রেকর্ড তৈরি করেছিল গোটা দেশেই। ২০১৪র নির্বাচনে আবার ডিএমকে ধরাশায়ী হয়। ৩৯-এ শূন্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সেই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে সামলে উঠছে ডিএমকে। আত্মবিশ্বাস যে বেড়েছে, তা আরও স্পষ্ট টু জি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এ রাজা এবং করুণানিধির কন্যা কানিমোজি টিকিট পাওয়ায়। তাঁদের মতে, হাওয়া বেগতিক বুঝলে ওই ঝুঁকি নিত না ডিএমকে। বস্তুত, রাজা এবং কানিমোজির কেন্দ্র নীলগিরি এবং তুতিকোরিনে একাধিক জনসভা, রোড শো দেখে বোঝা গিয়েছে, এই আত্মবিশ্বাসের যথেষ্ট ভিত্তিও রয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অন্যদিকে, জয়ললিতার মৃত্যুর পরে পালানিস্বামী এবং পনিরসেলভমের অনুগামীদের খেয়োখেয়ি নির্লজ্জভাবে সামনে এসে পড়েছে। আম্মামাক্কাল মুন্নেত্র কাজাখম-এর প্রতিষ্ঠাতা টিটিভি দিনকরনও এই এডিএমকে-র এই সঙ্কট আরও খানিকটা বাড়িয়ে তুলছেন। এডিএমকে থেকে বহিষ্কৃত এই বিদ্রোহী নেতার দল বেশ খানিকটা ভোট কাটবে বলে আশঙ্কা এডিএমকে-র শীর্ষ নেতারাই।

ডিএমকে-র মুখপাত্র এলানগোভান বলছিলেন, ‘‘ছোট ছোট দলগুলির অস্তিত্ব এবারের নির্বাচনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা হয় ডিএমকে, নয়তো এডিএমকে-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে। ফলে একটি-দুটি করে আসনে লড়লেও তাদের উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ।’’ তবে বড় আকারে দেখতে গেলে এ বারে তামিলনাড়ুতে দুটি জোট। এডিএমকে-বিজেপি-পাট্টালি মাক্কাল কাটচি জোট এবং ডিএমকে-কংগ্রেস জোট। এডিএমকে এবং ডিএমকে দুই দলই ২০টি করে আসন নিজেদের দখলে রেখেছে। বিজেপি লড়ছে পাঁচটিতে। কংগ্রেস ১০টিতে। ডিএমকে-র থেকে রাস্তা আলাদা হয়ে যাওয়ার ২৫ বছর পরে এ বারই প্রথম উদিত সূর্যের প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ভাইকো। তাঁর দল এমডিএমকে গত দুটি নির্বাচনে খুবই খারাপ ফল করায় নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি হারিয়েছে। এ বার তাই ফিরতে হয়েছে ডিএমকে-র প্রতীকে। কমল হাসন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এখনই তাঁর দলকে বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চাইছে না ডিএমকে-এডিএমকে কোনও দলই।

লোকসভা ভোটের পাশাপাশি বিধানসভা উপনির্বাচনের উপরে নির্ভর করছে পালানিস্বামী সরকারের ভবিষ্যতও। ২৩৫টি আসনের বিধানসভায় এই মুহূর্তে ২১টি আসন খালি। এডিএমকের দখলে ১১৪টি আসন। ডিএমকে রয়েছে ৮৮টি আসনে। কংগ্রেস আটটিতে এবং বাকি আসনগুলিতে নির্দল এবং কয়েকটি ছোট দল। ফলে ওই ২১টি আসনে কারা জিতবেন, এই মূহূর্তে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পক্ষে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এডিএমকের তরফে জয়কুমারের দাবি, ‘‘এ সব নিয়ে অযথা মাথা ঘামাচ্ছি না। আমরা কাজ করেছি। তাই মানুষ আমাদের পাশেই থাকবেন।’’

সত্যিই কি এতটা নিশ্চিন্ত থাকার মতো পরিস্থিতি? তুতিকোরিনের মাল্লিপুদুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মনিভন্নান বলছিলেন, ‘‘এ রাজ্যে গর্ব করে এত দিন বলতাম, আঞ্চলিক দলই শক্তিশালী। সেখানে বিজেপির কাছে অনেকটাই আত্মসমর্পণ করে বসে আছে এডিএমকে। এটা মানতে অসুবিধা হচ্ছে।’’ শিবগঙ্গা কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষিকা জাহ্নবীও বলেছেন একই কথা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা ঠিক হল না!’’

তামিল জনতার একাংশের এই ‘সেন্টিমেন্ট’কেই ১০০ শতাংশ কাজে লাগাতে চাইছে ডিএমকে এবং কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী প্রচারে গিয়ে বলছেন, ‘‘রাজ্যটাকে রাজ্যের ভিতরে থেকেই চালাতে দিন। বাইরে থেকে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করার ষড়যন্ত্র চলছে।’’ একই অস্ত্র ডিএমকে-রও। কন্যাকুমারী, কোয়ম্বত্তুর, শিবগঙ্গা, তুতিকোরিন এবং রামানাথপুরম কেন্দ্রে লড়ছে বিজেপি। এই প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই তামিল জনতার দ্রাবি়ড়ীয় গর্বকেই উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এডিএমকে-র ঘরোয়া বিবাদও তাদের অনেকটাই কোণঠাসা করেছে। জয়ললিতার অনুগত পনিরসেলভাম এবং শশীকলাপন্থী পালানিস্বামীর অনুগামীরা অহরহ পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। দলের প্রবীণ নেতারা নিজেরাই আক্ষেপ করছেন, ‘‘এত ঝগড়া করলে মানুষ বিশ্বাস করে না। লোকে ভাববে, এরা জিতলে নেতা কে হবে? আম্মা থাকলে এমনটা হত না।’’

ঝগড়া ডিএমকে-তে নেই তা নয়, কিন্তু প্রাণপণে তা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টাও রয়েছে। বিধানসভায় জিতলে স্ট্যালিনই যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন সে বিষয়ে কোনও রাখঢাক করেনি তাঁর দল। চেন্নাইয়ে দলের সদর দফতরে বসে স্ট্যালিন‌ বললেন, ‘‘আমি বাবার মতো নেতা নই। কিন্তু এতগুলো বছর ধরে আমি চেষ্টা করেছি মানুষের লোক হয়ে ওঠার। সেই সুযোগটুকু থেকে তাঁরা নিশ্চয় আমাকে বঞ্চিত করবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE