নাগাল্যান্ডের সাংসদ, তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী তথা নাগা পিপলস ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা নেফিয়ু রিওকেই দল থেকে সাসপেন্ড করা হল। দলের বর্তমান বিধায়ক সুরোজেলি লেজিয়েৎসু দলবিরোধী কাজের অভিযোগে রিওকে সাসপেন্ড করার নোটিস জারি করেছেন। অভিযোগ, ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লোভে রিও দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছিলেন।
২০০৩ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে এনপিএফ গড়েন রিও। তখন থেকেই নাগাল্যান্ডে কংগ্রেসের জমানায় ইতি পড়ে। রিওর নেতৃত্বে ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে এনপিএফের নেতৃত্বাধীন ড্যান জোট ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ সালে জেলিয়াংকে মুখ্যমন্ত্রী করে তিনি লোকসভা ভোটে লড়েন। আশায় ছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে শরিক দলের প্রধান হিসেবে তাঁকে কেন্দ্রে পূর্ণমন্ত্রী না হোক, অন্তত প্রতিমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এলেও মন্ত্রিত্ব পাননি রিও।
এ দিকে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার পরে নিছক সাংসদ হয়ে থাকাও তাঁর পোষাচ্ছে না। জেলিয়াংপন্থীদের দাবি, ২০১৪ সালের শেষ দিকে এনপিএফ বিধায়কদের একাংশকে উস্কে রিও জেলিয়াংকে হঠানোর পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এনপিএফ দলে বিদ্রোহ হয়। অভিযোগ, দলীয় বিধায়কদের একাংশকে নিজের প্রাসাদে বন্দি করে মোবাইল কেড়ে নেন রিও। উদ্দেশ্য ছিল, নিজেই ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। এমনকী, নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়ে রিও দাবি করেন তিনি ও তাঁর সঙ্গে থাকা বিধায়করাই আসল এনপিএফ। তাঁদের সিদ্ধান্তই এনপিএফের সিদ্ধান্ত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে আবেদন অগ্রাহ্য করে এনপিএফের দুই গোষ্ঠীকে ফের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেয়।
এর পর, ২০১৫-র ফেব্রুয়ারি মাসের আস্থা ভোটে জেলিয়াং ও সুরহোজেলির কূটনীতিতে রিওপন্থীরা তো বটেই, এমনকী কংগ্রেসের সব বিধায়কও জেলিয়াংয়ের পক্ষে ভোট দেন। রাজ্যে বিরোধীশূন্য বিধানসভা তৈরি হয়। পরে কংগ্রেসের বিধায়করাও এনপিএফে যোগ দেন। ক্ষমতা মজবুত করে রিওর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজ ও সরকার ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দেন জেলিয়াং ও সুরহোজেলি। রিওকে একাধিক কারণ-দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়। তার জবাব মেলার পর, গত কাল সুরহোজেলি শৃঙ্খলাভঙ্গ, দলবিরোধী কাজ ও দলের বিদ্রোহে মদত দেওয়ার অভিযোগে রিওকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। বলা হয়, দলের ঐক্য বৈঠকের পরেও রিও গোপনে দলবিরোধী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই দল ও রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। এর আগে রিওপন্থী বিধায়ক তথা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমকং ইমচেনকেও সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
অবশ্য এনপিএফের ভিতরে রিওকে সাসপেন্ড করা নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে। বিধায়কদের একাংশের মতে বিদ্রোহে ইন্ধন দেওয়ার অপরাধে গত বছরই রিওকে সাসপেন্ড করা যেত। তা না করে এখন তাঁকে সাসপেন্ড করার পিছনে অন্য অঙ্ক রয়েছে। রিওকে এ বার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করার সম্ভাবনা ছিল। সেই সঙ্গে অসমে বিজেপি ক্ষমতা দখল করলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ রিও ফের কেন্দ্রের সাহায্য নিয়ে নাগাল্যান্ডে বিজেপি সরকার গড়ে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করতেন বলেও জেলিয়াংরা আশঙ্কা করছিলেন। অসমের ভোটফলের দিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই দলের বিধায়কদের কাউকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া রাজ্য ছাড়তে মানা করা হয়েছে। রিও ও ইমকংয়ের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে লক্ষ্য রাখছে দল। রাজ্যের রাজনীতিতেও এই দুই হেভিওয়েটের পরবর্তী পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
কংগ্রেস-সঙ্গ ছাড়তে পারলে বাঁচেন পিকে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy