নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে লোকসভায় ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে পারে কেন্দ্র। একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনই জানানো হয়েছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভায় বাদল অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহেই প্রস্তাবটি পেশ করা হতে পারে। আগামী সোমবার (২১ জুলাই) লোকসভায় বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে দেশের সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজিু ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে বলেন, “হাই কোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংসদ।” তবে সুপ্রিম কোর্ট সমান্তরাল এবং নিরপেক্ষ ভাবে অন্য পদক্ষেপ করতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদনে সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে সব দলকে পাশে পেতে চাইছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে রেখেছেন রিজিজু। কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়কমন্ত্রীর কথায়, “দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে হাই কোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা হলে, সেখানে কোনও রাজনীতি থাকতে পারে না। সরকার এই বিষয়ে সবাইকে সঙ্গে নিতে চায়। সে ক্ষেত্রে দলগুলির মধ্যে মতপার্থক্যের কোনও জায়গা থাকবে না।”
ইমপিচমেন্টের নোটিসে লোকসভার অন্তত ১০০ জন সাংসদের স্বাক্ষর প্রয়োজন। বিভিন্ন দলের সাংসদেরা এই নোটিসে স্বাক্ষর করবেন বলে কেন্দ্রের একটি সূত্রের খবর। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কি না, তা স্থির করবেন স্পিকার। যদি সংসদের যে কোনও একটি কক্ষে (লোকসভা কিংবা রাজ্যসভা) ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে লোকসভার স্পিকার কিংবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন দেশের প্রধান বিচারপতি কিংবা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতি। ওই কমিটি যদি কোনও কারচুপি খুঁজে পায়, তবে রিপোর্ট আকারে তা সংসদে পাঠাতে হয়। সংসদে সেই রিপোর্ট পেশ হয়। তার পরেই বিচারপতিকে পদ থেকে অপসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কেন্দ্রের একটি সূত্রের খবর, বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার আগেই গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
চলতি বছরে দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।
অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবসরগ্রহণের দিনকয়েক আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জিও জানিয়েছিলেন। যদিও অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ইতিমধ্যেই অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিচারপতি বর্মা।