Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Madhumita Shukla Murder

অমরমণিরা মুক্তি পেতেই আতঙ্কে মধুমিতার পরিবার

২০০৩ সালে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা কবি মধুমিতা শুক্লকে লখনউয়ের পেপার মিল কলোনিতে গুলি করে খুন করা হয়। তখন কবির বয়স ছিল ২৪।

nidhi shukla.

নিধি শুক্ল। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
লখনউ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

কবি মধুমিতা শুক্ল হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অমরমণি ত্রিপাঠী এবং তাঁর স্ত্রীকে রাজ্য সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই মুক্তি দিয়েছে। আর তার পর থেকেই আতঙ্কে দিন কাটছে নিহত কবির বোন নিধির। হুমকি ফোন পাচ্ছেন প্রায় নিয়ম করে। এই অবস্থায় নিজের জন্য পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়ার পাশাপাশি এই মুক্তির বিরুদ্ধে আদালতে ফের আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছেন নিধি।

২০০৩ সালে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা কবি মধুমিতা শুক্লকে লখনউয়ের পেপার মিল কলোনিতে গুলি করে খুন করা হয়। তখন কবির বয়স ছিল ২৪। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী নেতা-বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী অমরমণি ত্রিপাঠী ও তাঁর স্ত্রী মধুমণিকে। তদন্তে অভিযোগ ওঠে, অমরমণির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মধুমিতার। জানা যায়, মধুমিতা শুক্লকে খুনের ষড়যন্ত্র এবং তাঁকে খুন করার গোটা ঘটনায় জড়িত ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। ২০০৭-এ দেহরাদূনের আদালত অমরমণি এবং মধুমণিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু চলতি বছর উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কারা দফতর ২০১৮ সালের কারা আইনে ১৬ বছর কারাবাস করে ফেলা ৬৬ বছরের অমরমণি ও ৬১ বছরের মধুমণিকে মুক্তি দেয়।

নিধির অভিযোগ, তার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। গত ২৫ অগস্ট তাঁকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। প্রভাবশালী এই বাহুবলী নেতাকে খুনের মামলায় সময়ের আগেই মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠিও লিখেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে চরম হতাশ মধুমিতা শুক্লর বোন নিধি বলেন, ‘‘আমরা জীবনভর এই মামলাটা লড়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই করিনি। আমার জীবনের অর্ধেক সময় কেটে গিয়েছে এই মামলায় সুবিচার পেতে। বাকি অর্ধেকও যদি কেটে যায়, তা হলেও আমি লড়ব। প্রতিটা মুহূর্ত এই আতঙ্কের ছায়ায় বেঁচে থাকা!’’

নিধি জানান, তাঁর দিদির খুনের মামলায় অমরমণির গ্রেফতারের পর থেকেই নানা রকম হুমকি আর আতঙ্ককে সঙ্গী করে বাঁচতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়তে নারাজ নিধি বলেন, ‘‘আমরা চাই, ওদের তিহাড় জেলে পাঠানো হোক। এই লড়াইয়ে আপনাদের সকলের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছি। কুড়ি বছরের লড়াইকে নষ্ট হতে দেব না।’’

নিধি লড়তে চাইলেও সে লড়াই কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রাজনৈতিক মহল। বাহুবলী অমরমণির সস্ত্রীক মুক্তির পিছনে রাজ্যের বিজেপি সরকারের অঙ্ক রয়েছে বলেই তাঁদের বক্তব্য। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এমনিতে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নন বিজেপি নেতারা। কিন্তু তাঁদের কিছুটা অস্বস্তিতে রেখেছে রাজ্যে ঠাকুর বনাম ব্রাহ্মণ স্নায়ুযুদ্ধ। ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজত্বে ঠাকুরদের বাড়বাড়ন্তে ব্রাহ্মণ সমাজের একটা অংশের ক্ষোভ রয়েছে। সেটা আঁচ করেই কৃষক আন্দোলনের সময় খুনের মামলায় ছেলের নাম জড়ালেও বাবা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এ বারে প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ নেতা অমরমণিকে সময়ের আগেই মুক্তি দিয়ে রাজ্যের ব্রাহ্মণ সমাজকে ফের বার্তা দেওয়া হল বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁকে বিজেপিতে নেওয়া হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ফলে সুবিচারের আশায় লড়তে চাওয়া নিধির ‘সাফল্য’ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বহু মহলেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Lucknow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE