গত পাঁচ বছর ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত তিনি। হুইলচেয়ার সঙ্গী। কিন্তু জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত মধ্যপ্রদশের ইনদওরের চন্দ্রকান্তা জেঠওয়ানি। ৫২ বছরের ওই স্কুলশিক্ষিকা আত্মহত্যা করতে চান না। তাই নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন জানালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। চিঠিতে মহিলা লিখেছেন, ‘‘এই অসহনীয় যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। আমার আবেদন গ্রহণ করুন।’’
ইনদওরের জাবরান কলোনি এলাকায় একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন চন্দ্রকান্তা। ২০২০ সালে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কোমর থেকে পা পর্যন্ত পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে যায়। তবে কিছু দিন পরে ওই অবস্থাতেও চাকরিতে যোগ দেন শিক্ষিকা। হুইলচেয়ার নিয়ে ক্লাসে ঢোকেন। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা। কিন্তু এ হেন শিক্ষিকা জানিয়েছেন, শরীরের সঙ্গে অসমযুদ্ধে আর যুঝে উঠতে পারছেন না। আট ঘণ্টা কাজ করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি তাঁর আর নেই। দিনের পর দিন যন্ত্রণা আরও বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন করেছেন।
রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে শিক্ষিকা লিখেছেন, ‘‘আমি আত্মহত্যা করব না। কারণ, ছাত্রছাত্রীদের বলে এসেছি আত্মহনন উচিত নয়। সাহসের সঙ্গে বেঁচে থাকতে হয়। বাঁচার মতো বাঁচতে হয়। কিন্তু আমার শরীর আমাকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না। প্রতি দিন অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছি। আমি নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন করছি। আমি চাই, আমার কিছু অঙ্গ অন্যের জীবনের কাজে লাগুক। আমি অঙ্গদান করে যাব।’’
চন্ত্রকান্তা অবিবাহিতা। পরিবারে বড় কোনও সদস্য জীবিত নেই। ইতিমধ্যে নিজের স্থাবর সম্পত্তি তিনি দান করে দিয়েছেন ছয় অভাবী পড়ুয়ার পরিবারকে। সম্প্রতি এমজিএম মেডিক্যাল কলেজে অঙ্গদান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে। শিক্ষিকার কথায়, ‘‘আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর আমার কাজে লাগে না। সেগুলো অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে। তাই আমার আর্জি গ্রহণ করুন রাষ্ট্রপতি।’’
৫২ বছরের শিক্ষিকার আর্জি (আর্তিও হয়তো) নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর কয়েকটি দেশ ইউথানেশিয়ার অধিকারকে বৈধতা দেয়। কিন্তু নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, সুইৎজ়ারল্যান্ডের মতো ভারত নিষ্কৃতিমৃত্যুতে স্বীকৃতি দেয়নি। মৃত্যুযন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া মানুষই নয়, যাঁরা কোমায় রয়েছেন বছরের পর বছর ধরে, তাঁদেরও মৃত্যুর জন্য আবেদন করেন তাঁদের স্বজনেরা।
চন্দ্রকান্তা যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন, সেখানকার প্রধানশিক্ষক শাখারাম প্রসাদ বলেন, ‘‘উনি বিজ্ঞানের শিক্ষিকা। বছরের পর বছর সুনামের সঙ্গে পড়িয়ে আসছেন। ওঁর জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু এই আবেদন নিয়ে কী-ই বলব। আমি বাক্রুদ্ধ।’’