আদালতের বাইরে ধর্ষকের সঙ্গে নির্যাতিতার বোঝাপড়া করে নেওয়ার বিতর্কিত নির্দেশ ফিরিয়ে নিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
২০০৮ সালে ১৫ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ভি মোহনকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। গত ২৩ জুন সেই নির্দেশের উপরে অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি পি দেবদাস। ধর্ষণের ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে
পড়ে নির্যাতিতা। বর্তমানে তাঁর বয়স ২২। ওই দিন বিচারপতি জানিয়েছিলেন, অবিবাহিত ওই কুমারী মায়ের ক্ষেত্রে সব চেয়ে সহজ সমাধান হল ধর্ষকের সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়া। সেই নির্দেশের পর অবশ্য জল বহু দূর গড়ায়। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ওই রায়কে ‘দর্শনীয় ভুল’ বলে ব্যাখ্যা করে। তার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার নিজের পূর্ববর্তী নির্দেশ খারিজ করেছেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের ওই বিচারপতি।
আজ ওই মামলার নথি প্রকাশিত হওয়ায় জানা গিয়েছে, গত কাল বিচারপতি দেবদাস বলেছেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের ভি এস মদনলাল সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই মামলার পূর্ববর্তী নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়া হল। খারিজ করা হল অভিযুক্তের জামিনের নির্দেশও। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ পাশাপাশি আগামী ১৩ জুলাই অভিযুক্ত ভি মোহনকে কুড্ডালোরের মহিলা আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন ওই মামলার শুনানির সময়ে অন্য একটি ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে বিচারপতি দেবদাস বলেছিলেন, ধর্ষককে বিয়ে করতে নির্যাতিতা রাজি হয়ে যাওয়ায় সে ক্ষেত্রে ‘সুখকর সমাপ্তি’ হয়েছিল। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পরে তোলপাড় শুরু হয় দেশ জুড়ে। বিশেষত, মহিলা সংগঠন ও নারী নির্যাতন নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এর বিরোধিতায় সুর চড়ায়। তারা দাবি করতে থাকে, এর পর ভবিষ্যতে কোনও ধর্ষকের জেল হলেই মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ টেনে আনতে পারে অভিযুক্তপক্ষ। এ কথা জানিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠিও লিখেছিলেন অনেকে।
ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের অন্য একটি ধর্ষণের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মন্তব্য করে, এই রায় মহিলাদের সম্মানের পরিপন্থী। ধর্ষণের মতো মামলায় এমন নমনীয় রায় দর্শনীয় ভুল। এ সব ক্ষেত্রে মহিলাদের কোনও রকম আপোসের প্রশ্নই ওঠে না বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির তীব্র সমালোচনাও করে শীর্ষ আদালত।