‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন চালু করার পথে মহারাষ্ট্র সরকার! এ বিষয়ে কী কী করণীয়, তার খসড়া তৈরির জন্য শুক্রবার সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি রশ্মি শুক্লা। বাকি ছয় সদস্যের মধ্যে রয়েছেন নারী এবং শিশুকল্যাণ দফতর, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর, আইন এবং বিচার দফতর, স্বরাষ্ট্র দফতর, বিশেষ সহযোগিতা দফতর এবং সামাজিক ন্যায়বিচার দফতরের প্রতিনিধিরা। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ‘লভ জিহাদ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হলেও এর ব্যাখ্যার উল্লেখ নেই।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এর আগে জানিয়েছিলেন, জোর করে ধর্মান্তরিত করা বন্ধ করতে কড়া আইন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর সরকারের। বিশেষ করে অন্য ধর্মে বিয়ে করে ধর্মান্তরণ বন্ধ করতে তাঁর সরকারের ভাবনাচিন্তার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘লভ জিহাদ’ রুখতে ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ, অসমের বিধানসভায় বিল পাশ করা হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের সরকার নতুন বিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলেছে এই বিলে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও একই পথে হেঁটেছেন। তিনিও গত বছরে ‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের কথা ঘোষণা করেন। অসম সরকারও দোষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পথে এগোতে চাইছে। এ বার মহারাষ্ট্রেও কড়া পদক্ষেপের ভাবনাচিন্তা শুরু হল। যে রাজ্যগুলি এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করেছে, তাদের সুপারিশ এবং আইনি ধারাগুলিকেও পর্যালোচনা করে দেখবে মহারাষ্ট্রের এই কমিটি।
আরও পড়ুন:
২০২২ সালে দিল্লির ছতরপুর এলাকায় শ্রদ্ধা ওয়ালকারের হত্যাকাণ্ডে শোরগোল পড়ে যায় দেশে। শ্রদ্ধার একত্রবাসের সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালা এই মামলায় মূল অভিযুক্ত। তিনি বর্তমানে জেলবন্দি। শ্রদ্ধাকে খুনের পর দেহ ৩৫ টুকরো করে জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আফতাবের বিরুদ্ধে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার শ্রদ্ধাকাণ্ডকে ‘অস্ত্র’ করে দীর্ঘ দিন ধরেই এ বিষয়ে সরব।
‘লভ জিহাদ’রোধী আইন চালু করার জন্য মহারাষ্ট্র সরকার কমিটি গঠন করতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। এনসিপি (শরদ পওয়ার) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে এই কমিটি গঠনে আপত্তি জানিয়ে বলেন, “বিবাহের বিষয়টি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।” এর বদলে সরকারকে ‘প্রকৃত সমস্যাগুলি’র দিকে আরও বেশি নজর দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। সমালোচনায় বিঁধেছে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টিও। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা হুসেন দালওয়াইয়ের মতে, ‘লভ জিহাদ’ বলে কিছুই হয় না। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র প্রত্যেককে কোনও না কোনও ধর্মাচরণের সুযোগ দেয়। আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু কেউ কেউ আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে নষ্ট করতে চাইছে। হিটলারের মতো করে প্রশাসন চালাতে চাইছে এরা।”
যদিও মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক মঙ্গল লোধার দাবি, দেশ জুড়ে ‘লভ জিহাদ’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, “শ্রদ্ধার দেহ কত টুকরো করা হয়েছিল, তা আমরা সকলে জানি। মহারাষ্ট্রেও এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে। আমরা যখন ‘লভ জিহাদ’ বন্ধ করতে চাইছি, বিরোধীরা তাতে আপত্তি জানাচ্ছেন।”