Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিন দশক পরে বাবার পথেই নরেশ

মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের বড় ছেলে নরেশ কয়েক হাজার কৃষককে নিয়ে ফের দিল্লিমুখী হলেন। কৃষকদের জন্য একই ধরনের দাবি নিয়ে। এ বারেও তাঁদের দাবি, ঋণ মকুব, বিদ্যুতের বিল মাফের মতো বিষয়। বাবার হাতে গড়া ‘ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন’-এর ছাতার তলায় হরিদ্বারে টিকায়েত ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন ওঁরা। আজ পৌঁছন দিল্লি সীমান্তে।

রণক্ষেত্র: দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় কৃষক মিছিল আটকাতে পুলিশের হাতিয়ার কাঁদানে গ্যাস।

রণক্ষেত্র: দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় কৃষক মিছিল আটকাতে পুলিশের হাতিয়ার কাঁদানে গ্যাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:২৮
Share: Save:

এক সময়ে বফর্স নিয়ে রাজীব গাঁধীর ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ। রাফাল নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রায় তেমনই হাল করেছেন রাহুল গাঁধী।

সাল ১৯৮৮। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়া রাজীব গাঁধীর সরকারের চার বছর অতিক্রান্ত। এক বছর পরেই ভোট। এমন একটা সময়ে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র বিজয় চক থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত এলাকা কব্জা করে ফেললেন ‘কৃষকদের মসিহা’ বলে পরিচিত ৫৩ বছরের মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েত। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ কৃষককে দিল্লি এনে ‘বোট-ক্লাবে’ সভা করলেন। দিল্লির ভিভিআইপি এলাকায় টানা এক সপ্তাহ আন্দোলনের পরে স্নায়ুযুদ্ধে হার মানলেন রাজীব। মেনে নিলেন টিকায়েতের ৩৫টি দাবিই। যার মধ্যে ছিল আখের দাম বাড়ানো, কৃষকদের বিদ্যুৎ-জলের খরচ মকুবের মতো বিষয়।

ঠিক তিন দশক পরের পরিস্থিতি অনেকটা একই রকম। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা আসা মোদীর সরকারের চার বছর অতিক্রান্ত। আগামী বছর ভোট। তার আগে রাফাল নিয়ে নিত্য দিন নাস্তানাবুদ হচ্ছেন মোদী। এমন একটি সময়ে সেই মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের বড় ছেলে নরেশ কয়েক হাজার কৃষককে নিয়ে ফের দিল্লিমুখী হলেন। কৃষকদের জন্য একই ধরনের দাবি নিয়ে। এ বারেও তাঁদের দাবি, ঋণ মকুব, বিদ্যুতের বিল মাফের মতো বিষয়। বাবার হাতে গড়া ‘ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন’-এর ছাতার তলায় হরিদ্বারে টিকায়েত ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন ওঁরা। আজ পৌঁছন দিল্লি সীমান্তে। চাইছিলেন, কৃষক নেতা চৌধরি চরণ সিংহের সমাধি ‘কিসান ঘাট’ থেকে এ বারের হুঙ্কার ছাড়তে। কিন্তু দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তেই লাঠি-কাঁদানে গ্যাস-জল কামানে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তার পরে মোদী সরকারের মন্ত্রী এসে কথা বললেও তাতে সন্তুষ্ট নন কৃষকরা। মোদী সরকারের রফাসূত্র খারিজ করে দিয়েছেন তাঁরা।

সাত বছর আগে মারা গিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েত। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নরেশ কি বাবার মতোই অঙ্ক কষে দিল্লিতে দাবি আদায়ের ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন? সমাবেশের ফাঁকে নরেশ বললেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য পথে নামিনি। এই দাবি কৃষকদের অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। চার বছর আগে মোদী কৃষকদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূর্ণ করেননি। আমাদের সব দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’ টিকায়েত পরিবারের চার ছেলেই এই আন্দোলনে সামিল। পরিবারের দাবি, রাজা হর্ষবর্ধনের কাছ থেকে ‘টিকায়েত’ উপাধি পেয়েছেন তাঁরা।

এন্তার লাঠিচার্জের সঙ্গে চলল জলকামানও। মঙ্গলবার।

মহেন্দ্রর আর এক ছেলে রাকেশ আগে বিজেপি সমর্থক ছিলেন। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে অজিত সিংহের দল তাঁকে প্রার্থী করে। আজ দিল্লি ঢোকার মুখে কৃষকদের আটকে দেওয়ার সময় রাকেশও সেখানে ছিলেন। পুলিশের আক্রমণের মুখোমুখি হন। অজিত সিংহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তার পরেই সেখানে ছুটে আসেন অজিত। লখনউ থেকে অখিলেশ যাদবও সমর্থন করেন এই কৃষক আন্দোলনকে। না-আটকে কৃষক মিছিলকে দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে আজ সওয়াল করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালও।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মনে প্রশ্ন, তিন দশক আগে মহেন্দ্র টিকায়েতের আন্দোলনের এক বছর পরে রাজীব গাঁধী গদিচ্যুত হয়েছিলেন।

এ বার কী হবে!

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE