মলদ্বীপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মসৃণ হচ্ছে! তার প্রভাবই কি পড়ল বাজেটে? মলদ্বীপের সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করল ভারত। শনিবার ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময় সেই কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২০২৪ সালে মলদ্বীপের উন্নয়নে সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার সেই বরাদ্দ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হল। সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হলেও বাংলাদেশের বরাদ্দ একই রয়েছে, যদিও তা মলদ্বীপের থেকে পরিমাণে কম।
বাজেটের নথি বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে মলদ্বীপের উন্নয়নের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মলদ্বীপকে ৪৭০ কোটি টাকা সাহায্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও ২০২৪ সালের অন্তবর্তী বাজেটে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রকে। ওই বছর লোকসভা নির্বাচন থাকায় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়। এর পর মোদী সরকার ক্ষমতায় এলে আবার বাজেট পেশ করা হয়। সেখানে মলদ্বীপের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরে সাহায্যের অঙ্ক পর্যালোচনা করে বরাদ্দের অঙ্ক ৪৭০ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
চিন ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হয় দ্বীপরাষ্ট্রের। সে দেশ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বলে মুইজ্জু সরকার। প্রসঙ্গত, ‘ভারত-বিরোধী’ প্রচার করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন মুইজ্জু। এই আবহে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে লক্ষদ্বীপ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সে সময় মুইজ্জু সরকারের তিন মন্ত্রী কুমন্তব্য করেছিলেন। তার পরেই টানাপড়েন বৃদ্ধি পায়। এই আবহে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে মলদ্বীপের বরাদ্দে কাটছাঁট করেছিল মোদী সরকার। মলদ্বীপের ওই মন্ত্রীদের কুমন্তব্যের পরে বহু ভারতীয় পর্যটক সে দেশে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। বিমানের টিকিট বাতিল করে দেন। মলদ্বীপ ‘বয়কট’-এর ডাক দেওয়া হয়। এর ফলে ধাক্কা খায় দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি। মনে করা হচ্ছে, তার পরেই সুর নরম করেন মুইজ্জু। গত অক্টোবর মাসে দিল্লিতে আসেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, ভারতের নিরাপত্তা কখনও বিঘ্নিত হতে দেবে না মলদ্বীপ। এ বার সেই মলদ্বীপে সাহায্য বৃদ্ধির কথা ঘোষণা হল বাজেটে।
আরও পড়ুন:
গত অগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার সরকার। তার পর থেকে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। যদিও বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে দেওয়া সাহায্যের প্রস্তাবে কোনও কাটছাঁট করেনি মোদী সরকার। এই খাতে ২০২৪-২৫ সালে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষেও বরাদ্দ একই রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রস্তাব করা হয়েছে ভুটানের জন্য। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ২,১৫০ কোটি টাকা সাহায্য প্রস্তাব করা হয়েছে ওই প্রতিবেশী দেশের জন্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বরাদ্দ ছিল ২,৫৪৩.৪৮ কোটি টাকা। নেপালের বরাদ্দ রয়েছে একই। এই অর্থবর্ষেও তাদের ৭০০ কোটি টাকা সাহায্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার জন্য বরাদ্দও অপরিবর্তিত। গত অর্থবর্ষের মতো চলতি অর্থবর্ষে তাদের বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে মরিশাসকে ৫০০ কোটি টাকা সাহায্য বরাদ্দ করা হয়েছে। আফগানিস্তানকে দেওয়া হচ্ছে ১০০ কোটি টাকার সাহায্য। আফ্রিকার দেশগুলিকে ২২৫ কোটি টাকার সাহায্য প্রস্তাব করা হচ্ছে। মঙ্গোলিয়াকে ৫ কোটি, মায়ানমারকে ৩৫০ কোটি টাকা সাহায্য প্রস্তাব করা হয়েছে চলতি বাজেটে।