অধিগ্রহণ বিলে ঐকমত্য তৈরি করতে এ বার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৫ জুলাই নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকেই এই বিষয়ে কথা বলতে চান তিনি। এ বারও মোদীর ডাকা বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জমি বিল নিয়ে তাঁর বিরোধিতার কথা চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের সদস্য। সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই ১৫ জুলাইয়ের বৈঠক হওয়ার কথা। দলীয় সূত্রের খবর, তখনই জমি বিল নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য তৈরি করতে চান প্রধানমন্ত্রী। কারণ, সংস্কারের পথে এবং দেশে নতুন লগ্নি টানতে এই জমি বিলকেই তুরুপের তাস হিসেবে দেখছে মোদী সরকার। নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিদের মতে, ইউপিএ সরকারের জমি বিলে শিল্প বা পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণ দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই বিলে সংশোধনই একমাত্র উপায়।
অধ্যাদেশ এনে জমি বিলে সংশোধন করলেও সংসদে তা পাশ করাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে মোদী সরকার। বিল নিয়ে এখন সংসদের যৌথ কমিটিতে জলঘোলা চলছে। টালবাহানা করে যতখানি সম্ভব দেরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীদের পাশে নিয়ে জমি বিলে ঐকমত্য তৈরির কৌশল নিয়েছেন মোদী। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা জমি বিলের বিরোধিতা করবেন তা জানেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আঞ্চলিক দল ও এনডিএ-র শরিক দলের মুখ্যমন্ত্রীদের বোঝাতে চাইছেন মোদী। সরকারের যুক্তি, কেন্দ্রীয় স্তরে জমি অধিগ্রহণ বিল তৈরি হলেও রাজ্যগুলি গোঁ ধরে বসে থাকলে কোনও লাভ হবে না।
প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদীর এই চেষ্টা কি সফল হবে?
এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কয়লাখনি নিলাম, খনি বিলের মতো বেশ কিছু সংস্কারমুখী বিলে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। পণ্য পরিষেবা কর নিয়েও তৃণমূল কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে চাপে পড়ে তৃণমূল বিজেপির পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মমতার দলের পাল্টা যুক্তি, উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূল কেন্দ্রকে সমর্থন করবে। কিন্তু জমি বিলে যে তৃণমূল বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কোনও সমর্থন পাওয়ার প্রশ্ন নেই, তা মোদীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি নিজে বৈঠকে যোগ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের প্রথম বৈঠকেও যোগ দেননি মমতা। এ বারও যাবেন না তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, তিনি সম্পূর্ণ ভাবে এই বিলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অবস্থান হল, ১০০ শতাংশ কৃষকের সম্মতি ছাড়া কোনও জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। ইউপিএ সরকারের জমি বিলে বেসরকারি প্রকল্পের জন্য ৮০ শতাংশ এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্প (পিপিপি)-র জন্য ৭০ শতাংশ কৃষকের সম্মতির শর্ত রাখা হয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার প্রতিরক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামো, সস্তার আবাসন, শিল্প করিডর ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এই শর্ত তুলে দিয়েছে। পিপিপি-র ক্ষেত্রে সরকার জমি অধিগ্রহণ করলেও এই শর্ত থাকবে না। এরই বিরোধিতা করেছেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের শুধু শাসক দল নয়, সব দলই জমি বিলের বিরুদ্ধে। এই ‘কালো আইন’-এর বিরোধিতা করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ‘সর্বসম্মতি ক্রমে’ প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। জুন মাসে রাজ্য বিধানসভায় মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। বিজেপির এক জন বিধায়ক ছাড়া বাম, কংগ্রেস সকলেই নিজের নিজের যুক্তিতে কেন্দ্রের জমি বিলের বিরোধিতা করেছিল। সেই প্রস্তাবও চিঠির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন মমতা। বৈঠকের দিনক্ষণ ও আলোচ্য বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে নিজেরাই দিন ঠিক করে এক সপ্তাহ আগে মুখ্যমন্ত্রীদের তলব করছে, তাতেও ক্ষুব্ধ মমতা।
শুধু মমতা নন। অন্যান্য আঞ্চলিক দলের মুখ্যমন্ত্রীরাও জমি বিলে কতখানি সমর্থন জানাবেন, তা নিয়ে মোদী সরকারের অন্দরমহলে সংশয় তৈরি হয়েছে। একমাত্র ভরসা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। তিনি জমি বিলে সমর্থন জানিয়েছেন। ওড়িশার নবীন পট্টনায়কও শর্তসাপেক্ষে জমি বিলে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু মমতার মতোই বিহারের নীতীশ কুমার জমি বিলের ঘোর বিরোধী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও তাই। আবার এনডিএ-শরিক অকালি দলের নেতা, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলেরও জমি বিল নিয়ে আপত্তি রয়েছে। আপত্তি জানিয়েছে শিবসেনাও। এই পরিস্থিতিতে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে কতখানি সমাধান সূত্র বিলবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy