আগরতলার আস্তাবল মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
উন্নয়নে তাঁর ‘মডেল’ কত দূর সোনা ফলাতে পারে, ক’দিন আগে বাংলা দেখেছে। এ বার সেই ‘মডেলের’ হাতছানি দিয়ে ত্রিপুরাতেও বাম শাসনে ইতি টানার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী ভাবে? আগরতলার আস্তাবল মাঠের উপচে পড়া ভিড়কে মমতা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘এখানকার ছেলেমেয়েরা সাইকেল পেয়েছে? গরিবরা দু’টাকায় চাল পেয়েছে? বিনা পয়সায় ওষুধ পেয়েছে? ২৩ বছর বামেরা শাসন করল, তিনটে হাসপাতাল তৈরি করতে পেরেছে?’’ এবং প্রতিটি প্রশ্নেই যখন সমস্বরে জবাব এল ‘না’— তখন দু’সেকেন্ডের বিরতি নিলেন মমতা! তার পর বললেন, ‘‘তা হলে দেরি করছেন কেন? বদলান, পাল্টান। তাড়িয়ে দিন সিপিএম-কে। ২০১৮-র ভোটের পর এই মাঠেই বিজয় উৎসব করব। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে এখানেও সবুজ সাথী হবে, কন্যাশ্রী হবে, শিক্ষাশ্রী হবে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হবে।’’
আগরতলায় আজকের সভা থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘মিশন ত্রিপুরায়’ নামলেন মমতা। যদিও ত্রিপুরা ঘিরে তৃণমূলের রোমান্টিকতা নতুন নয়! কিন্তু এ বারের চেষ্টা যে অন্যরকম, বেলা গড়াতেই জানান দিচ্ছিল আস্তাবল ময়দান। মাঠ ও সংলগ্ন তিন পাশের গ্যালারিতে থিকথিকে মানুষ। চনমনে সেই ভিড় দেখে মুডে আসতে সময় নিলেন না দিদিও। দেখে মনেও হল না যে ভিন্ রাজ্যে এসেছেন তিনি! ‘ঘরের মেয়ে’ ইমেজ রেখেই বললেন, ‘‘মনে করবেন না ত্রিপুরাকে চিনি না। এখানকার ধর্মনগর, কমলপুর, উদয়পুরে বহু বার এসেছি। বাংলা আর ত্রিপুরা যমজ বোনের মতো। ত্রিপুরা ভাল থাকলে বাংলা ভাল থাকে। ত্রিপুরা খারাপ থাকলে বাংলারও মন খারাপ হয়।’’
বস্তুত এই ‘খারাপ থাকার’ প্রসঙ্গেই আজ বার বার ত্রিপুরার মানুষের বঞ্চনার অভিযোগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন কৌশলী মমতা। বামেদের প্রতি তাঁর ঝাঁঝালো আক্রমণও ধেয়ে আসে সেই সূত্রেই। ক্ষণিকের জন্য তখন এ-ও মনে হয়, এই মমতা মুখ্যমন্ত্রী নন, বিরোধী নেত্রী। বাম শাসনের পতন ঘটাতে সেই পুরনো জেদ। সেই আগ্রাসন। আগের মতোই ছড়া কেটে কটাক্ষ করা— ‘‘আলু চল্লিশ টাকা কিলো/তবু সিপিএম খুব ভাল? ছিমছাম বাবুরা, ভাঁওতাবাজি অনেক হয়েছে, এ বার জায়গা ছাড়ো!’’
তবে কংগ্রেসকেও নিশানা করেন মমতা। কারণ, বাংলায় যে ভাবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক জমি গ্রাস করে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হয়েছে, মমতা জানেন, ত্রিপুরাতেও সে পথেই হাঁটতে হবে। এ রাজ্যে বাম বিরোধী পরিসরের অনেকটা জুড়ে রয়েছে কংগ্রেস। মমতা তাই বলেন, ‘‘কংগ্রেস? ওঁদের তো বিশ্বাসই করা যায় না। নরসিংহ রাওয়ের জমানায় কী ভাবে দিল্লির কংগ্রেস নেতারা এখানকার বামেদের সঙ্গে আঁতাঁত করেছিল, আমি জানি। সেই দৌলতেই এখানে সরকার চালাচ্ছে সিপিএম। সিপিএমের সঙ্গে ওঁদেরও ছুড়ে ফেলুন।’’
তবে এ সব রাজনৈতিক সমালোচনার তুলনায় দিদির মুখে বার বার ফিরে আসে তাঁর উন্নয়নের মডেলের কথা। কী ভাবে বাংলার মানুষকে ভাল রেখেছেন তিনি। পাহাড়, জঙ্গলমহলের মানুষ কেমন খুশি রয়েছে। আবার এ-ও মনে করিয়ে দেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ত্রিপুরায় রেল লাইন পাতার কাজে কতটা সক্রিয় ছিলেন। ত্রিপুরায় বাঙালির পাশাপাশি উপজাতিদের সংখ্যাও যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের প্রয়াসের কথাও তাই সবিস্তার তুলে ধরেন মমতা।
এখন প্রশ্ন হল, উন্নয়নের যে মডেলের হাতছানি এ দিন দিলেন মমতা, সেই বার্তা সমগ্র ত্রিপুরার কাছে কারা পৌঁছে দেবেন? সেই জবাবটাও আজ দিয়ে গেলেন তৃণমূলনেত্রী। মাস দুয়েক আগে ত্রিপুরায় কংগ্রেস ভেঙে ৬ জন বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুকুল রায়। বস্তুত, ত্রিপুরায় দলীয় সংগঠনের ভার এখন তাঁরই উপর। মমতার সফরের আগে বেশ কয়েক বার আগরতলা ঘুরেও গিয়েছেন তিনি। ফলে পায়ের তলায় ক্রমশ তৈরি হওয়া মাটির দিকে ইশারা করে দিদি বলেন, ‘‘আগে এখানে আমার টিম ছিল না। এখন রয়েছে। ওঁদের ওপরে ভরসা রাখুন। ওঁরাই পরিবর্তন আনবে। আর আমিও আসব ঘন ঘন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy