E-Paper

রাহুলের প্রাধান্যে লাভ মোদীর, মত মমতার

কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি যে হাত মেলাতে চান না, মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। এই প্রসঙ্গেই তিনি আক্রমণ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৪
Picture of Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মুখ বিরোধী শিবিরের সামনে থাকলে বিজেপির সুবিধা হয়, এই আক্রমণে আগেই সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, রাহুলকে নেতা করার জন্যই বিজেপি কৌশল করে সংসদ অচল করে রেখেছে। দলীয় বৈঠকে রবিবার তাঁর অসমাপ্ত মন্তব্য, ‘‘রাহুল গান্ধী হচ্ছে মোদীর সব চেয়ে বড়...।

একই দিনে কলকাতায় বসে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, উত্তরপ্রদেশে রায়বরেলী, অমেঠীর মতো আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে না দিয়ে তাঁরাও প্রার্থী দেবেন কি না, এ বার ভেবে দেখা হবে। অমেঠীতে গত বার প্রার্থী হয়েও হেরে গিয়েছিলেন রাহুল। রায়বরেলীর সাংসদ সনিয়া গান্ধী। অসুস্থতার কারণে আসন্ন লোকসভা ভোটে সনিয়া আর দাঁড়াবেন না এবং তাঁর কেন্দ্রে মেয়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা প্রার্থী হতে পারেন বলে কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা রয়েছে। এই আবহে গান্ধী পরিবারের খাস তালুকে তাঁদের প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়িয়েছেন অখিলেশও।

মুর্শিদাবাদে বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে হেরে সাগরদিঘি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। তার পরেই একা লড়ার ঘোষণা করেছিলেন মমতা। দু’দিন আগে কালীঘাটে দলীয় বৈঠকেও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কংগ্রেসকে বাদ রেখে আঞ্চলিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে গোটা দেশে লড়তে চান তাঁরা। মমতার সঙ্গে দেখা করে সে দিন একই বার্তা ছিল অখিলেশেরও। মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ, বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এ দিন ভার্চুয়াল বৈঠকে আরও এক ধাপ এগিয়েছেন মমতা। মোবাইল-বার্তায় এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংসদ বিজেপি চলতে দিচ্ছে না। কেন? রাহুল গান্ধীকে নেতা বানানোর জন্য! কী নেতা? না, রাহুল গান্ধীর মুখটা থাকলে মোদীকে কেউ খারাপ বলতে পারবে না! রাহুল গান্ধী হচ্ছে মোদীর সব চেয়ে বড়...। আর কিছু বললাম না, বুঝে নিন! সব চেয়ে বড় টিআরপি (টেলিভিশন অনুষ্ঠান কত দর্শক দেখছেন, তার সূচক), সবাই বলে।’’ কালীঘাটের বৈঠকেও কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বৈঠকের পরে দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একই সুরে বলেছিলেন, বিজেপি রাহুলকে নেতা করতে চাইছে নিজেদের স্বার্থে। বিরোধী পরিসরে কংগ্রেস যেন কোনও ভাবেই নিজেদের ‘বিগ বস’ মনে না করে, সেই হুঁশিয়ারিও সে দিন শোনা গিয়েছিল সুদীপের কথায়।

কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি যে হাত মেলাতে চান না, মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। এই প্রসঙ্গেই তিনি আক্রমণ করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। বৈঠকে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, ‘‘এই আপনাদের কংগ্রেসের যে নেতা (অধীর) বড় বড় কথা বলে, সে হচ্ছে বিজেপির এক নম্বর লোক! অধীর চৌধুরী আরএসএসের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এটা করেছে। দিল্লিতে আমি তোমার সঙ্গে দোস্তি করব, এখানে মস্তি করব! আমি বিজেপির সঙ্গে দিল্লিতেও নেই, এখানেও নেই!’’

যার প্রেক্ষিতে অধীর পাল্টা বলেছেন, ‘‘সাগরদিঘিতে হেরে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! যতটুকু মুখোশ ছিল, সেটাও খসে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করতে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করছেন। এতে বিজেপির লাভ হচ্ছে, সবাই দেখতেই পাচ্ছে।’’ কেন্দ্রে এনডিএ আমলে তৃণমূল নেত্রী আরএসএসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন, সঙ্ঘ এবং মমতার মুখে পরস্পরের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল, গোধরা-কাণ্ডের পরে গুজরাতে মোদী আবার জিতে আসার পরে মমতা ফুল পাঠিয়েছিলেন— সে সব অতীত টেনে এনেছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মোদী-শাহের বিজেপি ৩৭% ভোট নিয়ে দেশে ক্ষমতায় আছে। বাকি অ-বিজেপি ভোট এক জায়গায় এলে মোদীরা ক্ষমতায় থাকবেন না। সেই চেষ্টাই রাহুল করছেন। কিন্তু তৃণমূলের কাজ, বিরোধী অবস্থানে থেকে বিরোধী শিবিরের ক্ষতি করা। ইডি-সিবিআইয়ের ভয় আছে, মোদীকে উনি (মমতা) খুশি করতে চাইছেন।’’

রাহুল-অধীরদের মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য। রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করার আগে নিজের দলের নাম থেকে কংগ্রেস শব্দটা বাদ দিন! তৃণমূল যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মালিকানাধীন, কংগ্রেস তেমন গান্ধী পরিবারের মালিকানাধীন। তৃণমূলের নামের সঙ্গে কংগ্রেস জুড়ে রেখে রাহুলের সমালোচনা করার কোনও নৈতিক বা রাজনৈতিক অধিকার ওঁর নেই।’’

কংগ্রেস প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছিল কলকাতায় সমাজবাদী পার্টির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও। আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা আগেই করেছেন তাঁরা। কংগ্রেসকে বাদ রেখে এই উদ্যোগে মমতার পাশে থাকার কথাও বলেছেন। দলের বৈঠকে সমাজবাদী নেতারা বলেছেন, রায়বরেলীর মতো আসনে তাঁরা প্রার্থী দেন না ভোট বিভাজন আটকাতে। তাতে লাভ হয় কংগ্রেসের। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে শাসক বিজেপি যখন হামলা করে, ‘মিথ্যা মামলা’য় সমাজবাদী কর্মীদের ফাঁসানো হয়, তখন কংগ্রেসের কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। এ বার সেখানেও প্রার্থী দেওয়া উচিত। বৈঠক শেষে অখিলেশ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘দলের নেতারা তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। আমরা প্রার্থী দেব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো আলোচনায় রাখতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশ্নেও কংগ্রেসকে বিঁধেছেন তিনি। অখিলেশের কথায়, ‘‘ক্ষমতায় থাকার সময়ে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগাত। এখন বিজেপি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, আয়করকে ব্যবহার করছে। বিজেপির টিকা নিলেই সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে! কংগ্রেসের যদি হেরে গিয়ে এখনকার অবস্থা হয়, তা হলে বিজেপিরও একই অবস্থা হবে!’’ জাতসংক্রান্ত জনসমীক্ষার দাবি নিয়েও সরকারের থাকার সময়ে কংগ্রেস ‘ধোঁকা’ দিয়েছে বলে সমাজবাদী নেতৃত্বের অভিযোগ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Rahul Gandhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy