সালটা ১৯৭৭। প্রেমিকাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল এক যুবকের বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর নামে ডায়েরিও হয়। গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়া পেয়ে আর কখনও আদালতমুখো হননি তিনি। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে যে কোথায় গা-ঢাকা দিয়েছিলেন, তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৪৮ বছর পর অবশেষে সেই অভিযুক্তকে আবার গ্রেফতার করল পুলিশ!
মহারাষ্ট্রের লালবাগ এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রশেখর মধুকর কালেকর। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রেমিকার সঙ্গে অশান্তির কারণে ৪৮ বছর আগে কোলাবায় তাঁর বান্ধবীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবতীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাণে বেঁচে যান তিনি। চন্দ্রশেখরের নামে থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩। অভিযোগ পাওয়ার পরেই চন্দ্রশেখরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু শর্ত ছিল আদালতে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে।
কোলাবা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্তার কথায়, ‘‘জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আচমকাই উধাও হয়ে যান চন্দ্রশেখর। আদালতে হাজিরা দিতেও আসেন না। বছরের পর বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক পরোয়ানা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার পরেও হাজিরা দেননি। শেষে তাঁকে অপরাধী বলে ঘোষণা করে আদালত।’’ ওই কর্তার কথায়, ‘‘আমরা কয়েক দশক ধরে ওই অভিযুক্তকে খুঁজছিলাম।’’
মাস ছয় আগে কোলাবা পুলিশ নতুন করে আবার ওই মামলাটি চালু করে। নতুন করে শুরু হয় তল্লাশি। লালবাগ এলাকায় চন্দ্রশেখরের শেষ ঠিকানায় হানা দিয়ে তারা দেখে ওই ঝুপড়িতে বহুতল উঠে গিয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে সরকারি কাগজপত্র— কোথাও নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি চন্দ্রশেখরের। খুঁজতে খুঁজতে রত্নাগিরি জেলার দাপোলি থানার রেকর্ডে খুঁজে পাওয়া যায় চন্দ্রশেখরের নাম। সেই নথিতে যে ঠিকানা দেওয়া ছিল, সেটাই ছিল পুলিশের কাছে একমাত্র সম্বল।
আরও পড়ুন:
ওই সূত্র ধরে গত সোমবার রাতে চন্দ্রশেখরের ঠিকানায় হানা দেয় পুলিশ। খোঁজ পাওয়ার আশা ছিল না। তবে ওই ঠিকানায় হানা দিয়ে ৭১ বছর বয়সি চন্দ্রশেখরকে দেখতে পায় কোলাবা থানার পুলিশ। তাদের দেখে পালানোর চেষ্টা করেন চন্দ্রশেখর। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে পুলিশের জালে। পুলিশকর্তাদের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে চন্দ্রশেখরের পুরনো ছবি ছিল। এখন তাঁর চেহারার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করার উপায় ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত জেরার মুখে ভেঙে পড়েন তিনি। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।’’