Advertisement
১০ মে ২০২৪
Manipur Violence

‘বন্ধ ঘরে আতঙ্কে সিঁটিয়ে আমরা সাত জন, শহরটা জ্বলছিল’, মণিপুর থেকে পালিয়েও কাঁপছে গলা

অনলাইন ভিডিয়ো কলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন মণিপুরের বাসিন্দা থ্যাং। তিনি সপরিবার রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তা জানানো হয়নি।

Man who has left Manipur recalls his experience.

মণিপুরে গত বুধবার থেকে হিংসার বলি হয়েছেন ৫৪ জন। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
ইম্ফল শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ১৯:৩৬
Share: Save:

তিন দিন পরেও মণিপুরের হিংসাতপ্ত পরিস্থিতির উন্নতি হল না। এখনও পর্যন্ত ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে হিংসার বলি হয়েছেন ৫৪ জন। রাজ্য ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকে। তেমনই এক প্রত্যক্ষদর্শী মণিপুর থেকে বেরিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন। জানালেন, কোন বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে তাঁদের রাত কাটাতে হয়েছে।

নিউজ় ১৮-কে অনলাইন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন মণিপুরের বাসিন্দা থ্যাং। তিনি সম্প্রতি সপরিবার রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তা জানানো হয়নি। থ্যাং জানিয়েছেন বুধবার রাতের কথা।

বুধবার রাতে মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে হিংসার সূত্রপাত। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় তফসিলি জনজাতি (এসটি) তকমার দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবির বিরোধিতা করে মণিপুরি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর তরফে বুধবার একটি মিছিল বার করা হয়েছিল। সেখান থেকেই সংঘাতের সূচনা। রাজ্যের একাংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

থ্যাংয়ের বাড়ি রাজধানী ইম্ফলে। তিনি বলেন, ‘‘চূড়াচাঁদপুরে কিছু গোলমাল হয়েছে বলে শুনছিলাম। তা যে এত বড় আকার ধারণ করবে, বুঝতে পারিনি। যা যা হয়েছে, কল্পনাও করা যায় না। আমরা শুনলাম, ইম্ফলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভেবেছিলাম, পুলিশ কিছু করবে। কিন্তু তারাও তেমন কিছু করতে পারেনি।’’

‘বিভীষিকাময়’ রাতের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে যেন গলা কেঁপে গিয়েছিল থ্যাংয়ের। তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, গোটা শহরটা যেন কেউ দখল করে নিয়েছে। আমাদের বাড়ি থানার কাছেই। কিন্তু তা-ও আমরা নিরাপদ ছিলাম না। সে রাতে আমরা কেবল বিস্ফোরণ আর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটার শব্দ শুনেছি। একটি ঘরে সাত জন একসঙ্গে ঢুকে বসেছিলাম। কারও চোখে ঘুম ছিল না।’’

থ্যাং আরও বলেন, ‘‘জানলা দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, গোটা শহর জ্বলছে। চারদিকে আগুন। পুলিশ চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারছিল না। আমরা শুনছিলাম, বাইরে মানুষ চিৎকার করছে। পরের দিন জানতে পারলাম, আধাসামরিক ক্যাম্পে আমরা আশ্রয় নিতে পারব।’’

কিন্তু সেই ক্যাম্পে গিয়েও রক্ষা নেই। সর্বত্র ছিল অব্যবস্থার স্পষ্ট ছাপ। থ্যাং জানিয়েছেন, বহু মানুষ ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন। এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার উপযুক্ত পরিষেবা সেখানে ছিল না। স্থান সঙ্কুলান হয়নি সকলের। এমনকি, পর্যাপ্ত খাবার বা জলও পাননি অনেকে।

ক্যাম্পে বসেই রাজ্য ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন থ্যাং। বিনা ইন্টারনেটে বিমানের টিকিটের বন্দোবস্ত করা যায়নি। রাজ্যের বাইরে থেকে আত্মীয়েরা তাঁদের টিকিট কেটে দেন। অভিযোগ, যে টিকিটের দাম ৪ হাজার টাকা, তার জন্য ১৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। থ্যাংয়ের কথায়, ‘‘টিকিটের দাম ক্রমেই বাড়ছে। রাজ্যে আটকে থাকা আমাদের অন্য আত্মীয়দের জন্য আমি এখন টিকিট কাটার চেষ্টা করছি। একটি টিকিটের দাম এখন হয়ে গিয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এটা ঠিক নয়।’’

রাজ্যে শান্তি ফিরবে, আশা রাখেন থ্যাং। তিনি বলেন, ‘‘আমি সকলকে অনুরোধ করছি, ‘ঢিলের বদলে পাটকেল’ নীতিতে সমাধান হবে না। হিংসা কখনওই উত্তর হতে পারে না। আমরা সব রকম সম্প্রদায় বহু বছর মণিপুরে একসঙ্গে থেকেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Violence Imphal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE