বিজেপি-র ঠেলায় পড়ে যখন সনিয়া গাঁধীর ধর্মনিরপেক্ষতার ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন শুরুতেই সেই ছাতায় ফুটো করে দিলেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এবং সাংসদ মণিশঙ্কর আইয়ার।
জওহরলাল নেহরুর ১২৫-তম জন্মদিন উপলক্ষে মৌলালির রামলীলা ময়দানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। শুক্রবার সেই অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ড প্রমুখের সামনে আইয়ার বলেন, “বাংলায় গুন্ডামি চলছে। এই যে মহিলা, যিনি আগে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কমিউনিস্টদের চেয়েও বেশি গুন্ডামি কী ভাবে করা যায়। তাই এই দলকেও সরকার থেকে সরাতে হবে।” কংগ্রেসকে রাজ্যের ক্ষমতায় বসিয়ে সোমেন মিত্রকে মুখ্যমন্ত্রী করার ডাক দেন দলের ওই সর্বভারতীয় নেতা।
ঘটনাচক্রে, এর কিছু ক্ষণ আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিধানসভা থেকে বেরনোর সময় জানিয়ে গিয়েছেন, তিনি কংগ্রেস সভানেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে কাল, রবিবার দিল্লি যাচ্ছেন। মমতা জানান, জানুয়ারিতে কলকাতায় বিশ্ববাংলা সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর ১৮ নভেম্বর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যেই দিল্লিতে নেহরুর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর কাছে সনিয়ার তরফে অস্কার ফার্নান্ডেজের ফোন আসে। মমতা বলেন, “সোমবার কলকাতা ফিল্মোৎসবের সমাপ্তির দিন। আমি ওই দিন দিল্লি যাব না ভেবেছিলাম। কিন্তু অস্কারজি ফোনে আমন্ত্রণ জানালেন। ওখানে অনেকেই আসবেন। তাই রবিবার রাতেই দিল্লি যাব। পরের দিন রাষ্ট্রপতিকেও আমন্ত্রণ জানাতে যাব।”
এই প্রেক্ষাপটে মণিশঙ্করের বক্তব্য সৌজন্যের বাতাবরনে চিড় ধরাবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা হলেও কংগ্রেস বা তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা তেমন গুরুত্ব দেননি। মণিশঙ্করের কথা নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় কার্যত ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর তির্যক মন্তব্য, “মণিশঙ্করের মাথার মাঝখানটা কামিয়ে, তাতে ধনেশ পাখির ঠোঁটের তেল মধু দিয়ে মেড়ে পান পাতা দিয়ে আটকে দিতে হবে। এটা ওঁর ওষুধ। ওঁর মাথার গোলমাল ঠিক হয়ে যাবে।” একই ভাবে মণিশঙ্করের আহ্বানকে ‘নিছক কথার কথা’ বলে লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন সোমেনবাবু। তাঁর কথায়, “আগে তো কংগ্রেসকে ক্ষমতায় যেতে হবে। তবে তো দল ঠিক করবে, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন।”
মমতা বা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে সনিয়ার মঞ্চে যাওয়াকে কখনওই বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোটের তৎপরতা বলতে চাননি। কিন্তু, আদতে তাঁর সনিয়ার ডাকে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সে ভাবেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বস্তুত, নরেন্দ্র মোদীর বিজয় রথের সামনে পড়ে গোটা দেশেই সঙ্কটে কংগ্রেস। এই প্রেক্ষিতেই নেহরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের মঞ্চকে বিজেপি বিরোধী মহাজোট গড়ার কাজে ব্যবহার করছেন সনিয়া। আর লোকসভা ভোট থেকে সাম্প্রতিক বিধানসভা উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যেও তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সে জন্যই মমতা সনিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ ছাতার তলায় যেতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা।
সনিয়ার আমন্ত্রণে মমতার সাড়া দেওয়াকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। এ দিন বিধান ভবনে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে নতুন অর্থ খোঁজার মানে হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নে নেহরুর মতাদর্শের সম মনোভাবাপন্ন দলগুলিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
তবে সেইসঙ্গে মহাজোটের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কংগ্রেসের কাছে অস্পৃশ্য বলে কেউ নেই। প্রথম ইউপিএ সরকার হয়েছিল বামেদের সমর্থনে। আবার পরে ইউপিএ-২ সরকার হয়েছিল তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেই। তবে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো কিছু হয়নি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy